আইন মানাতে বাধ্য করছে শিক্ষার্থীরা

10

মনিরুল ইসলাম মুন্না

টানা তৃতীয় দিনের মতো নগরীর প্রতিটি মোড়ে মোড়ে সড়ক-উপসড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে দায়িত্ব পালন করছে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা প্রতিটি পরিবহনে অসঙ্গতি দেখা মাত্র সাইড করে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন এবং তাদের আইন মানাতে বাধ্য করছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে শিক্ষার্থীদের এমন কর্মকান্ড দেখা যায়।
শুধু শিক্ষার্থী নয়, পাশাপাশি তাদের সঙ্গে দেখা গেছে বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকেও। তাদের এমন কাজকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন পথচারীরা। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে দ্রুত ট্রাফিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিও জানান তারা।
নগরীর বিভিন্ন সড়কে সরেজমিনে দেখা গেছে, ট্রাফিক পুলিশের ভ‚মিকায় রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস, রোবার স্কাউট, আনসার ব্যাটালিয়ান, বিএনসিসির ক্যাডেটরাসহ বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও। তারা সড়কগুলোতে রাস্তায় সিগন্যালের পাশাপাশি ফুটপাতে হাঁটা, নির্দিষ্ট স্থান থেকে গাড়িতে ওঠানামা ও গণপরিবহনগুলোর কাগজপত্র যাচাই-বাছাইও করা হচ্ছে। এদিন বেশিরভাগ পরিবহনেই পাওয়া গেছে নানা অনিয়ম। লাইসেন্স অথবা ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতেও দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। কাগজপত্রবিহীন গাড়িগুলোকে রাস্তার এক পাশে দাঁড় করিয়ে রাখেন তারা। পাশাপাশি কাগজপত্র হালনাগাদ করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে গাড়ির চাবি চালককে বুঝিয়ে দেন। এছাড়াও মোটরসাইকেলে যারা হেলমেট পরেননি, তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে হেলমেট কেনার প্রতিশ্রæতি নিয়ে নেন এবং মোটরসাইকেলে আরোহী যদি হেলমেট না পরে, তবে তাকে নামিয়ে দিয়ে অন্য পরিবহনে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য বাধ্য করেন।
কাজীর দেউড়ী এলাকায় হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল আরোহীদের ৫-২০ মিনিট অপেক্ষায় রাখার দৃশ্যও দেখা গেছে। কাজীর দেউড়ী এলাকার সাহিল নামে এক যুবক বলেন, সড়কে পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশ নেই। শিক্ষার্থীরা সড়কে গাড়ির নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিয়েছেন। যা আমাদের জন্য খুব উপকার হয়েছে। আমরাও শিখছি, তারা অন্যদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রাখতে উদ্বুদ্ধ করছে। এতে গাড়ি চলাচল অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। তারা আসলে তাদের মতো করে চেষ্টা করছে। যদিও এটা তাদের কাজ নয়। কিন্তু এটা প্রশংসনীয়।
বাকলিয়া এক্সেস রোডে জায়েদ নামে এক পথচারী বলেন, শিক্ষার্থীরা দেখিয়ে দিয়েছেন, তাদের ক্ষমতা কত। তারা দেশটা এক প্রকার স্বাধীন করে দিয়েছে। আমি তাদের এই ভ‚মিকা নেওয়ার জন্য সাধুবাদ জানাই।
এক্সেস রোড এলাকায় ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করা এক শিক্ষার্থী মারুফুল ইসলাম হৃদয় বলেন, দেশকে এখন গোছানোর পালা। যেহেতু এখনো কোনো সরকার গঠন হয়নি, এই মুহূর্তে পুলিশ বা ট্রাফিক পুলিশও নেই। তাই আমরা রাস্তায় যাতে যান চলাচলে সমস্যা না হয় তাই আমরা শিক্ষার্থীরা ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছি। আমাদের আশেপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলো নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করছি। আমরা সবাইকে অনুরোধ করবো সবাই যেন ট্রাফিক নিয়ম মেনে চলে।
ওয়াসা মোড় এলাকায় শিক্ষার্থী মিফতাহুল ফেরদৌস পূর্বদেশকে বলেন, ‘কিছু দুষ্টু চালকের কারণে সড়কে দুর্ঘটনার শিকার হন যাত্রীরা। তাই আমরা দুষ্টু চালকদেরকে প্রতিশ্রুতি নিয়ে যান চলাচল করতে দিচ্ছি। কাগজপত্র না থাকলে আমরা তা দ্রুত হালনাগাদ করার জন্য বলে দিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, দেশটা আবর্জনায় ভর্তি হয়ে গেছে। আমরা সেগুলোকে পরিষ্কার করতে চাই। ২০১৮ সালের আন্দোলনে আমরা সফল হয়েছিলাম। এবারও আমরা সফল হয়েছি। বর্তমানে পুলিশ নিজেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাই তারা কর্মবিরতি পালন করছেন। কিন্তু সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে আমরা দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছি। সেনাবাহিনী তাদের কাজ শুরু করলে আমরা সড়ক ছেড়ে দিবো। একইসাথে ট্রাফিকিং এর পাশাপাশি আমরা সড়কের ময়লা আবর্জনাও পরিষ্কার করছি। আমাদেরকে সাধারণ জনতাও সহযোগিতা করছেন।
ছাত্র সমাজের এমন কাজকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন পথচারীরা। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সড়কে যানজট কিছুটা কমেছে বলছেন তারা। বহদ্দারহাট এলাকায় আমির হোসেন নামে এক চাকরিজীবী বলেন, আজকে ট্রাফিক ব্যবস্থা দেখে খুবই ভালো লাগছে। শিক্ষার্থীরা সুন্দর মতো ব্যবস্থাপনা করতে পারছেন। যানজট নেই। অন্য সময়ের তুলনায় অনেক অনেক ভালোভাবে সিরিয়ালমতো চলছে গাড়িগুলো। পথচারীদেরও সুন্দরমতো নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।
ট্রাফিক পুলিশ কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিকল্প নেই, এমনটা মেনেই শিগগিরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দায়িত্ব বুঝে নেয়ার দাবিও জানান শিক্ষার্থীরা।
অন্যদিকে নগরীর মোমিন রোড, আন্দরকিল্লা, রাহাত্তারপুল, বাকলিয়া এলাকায় সড়ক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য মাইকিং করেছে ক্লিন বাংলাদেশ নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তারা সড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের পাশাপাশি কৃষ্ণচ‚ড়া গাছের চারা রোপণ করেন।
ক্লিন বাংলাদেশ টিমের সমন্বয়ক শওকত হোসেন জনি পূর্বদেশকে বলেন, আমাদের একটা টিম ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছে। আরেকটা টিম পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি শহীদদের স্মরণে বৃক্ষরোপণ করে তাদের উৎসর্গ করছে। আমাদের কর্মসূচিতে শতাধিকা ছাত্র-জনতা অংশগ্রহণ করছে।