আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারী বাড়াতে হবে

3

চট্টগ্রামে একের পর এক শিশু অপহরণের ঘটনায় অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গত ১১ জুলাই চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় ছয় বছর বয়সি এক শিশুকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার সময় ১৪ বছরের এক কিশোরীসহ চারজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। শিশুটিকে হাটহাজারীর এগারো মাইল এলাকায় নিজ বাড়ির আঙ্গিনা থেকে অপহরণ করা হয়েছে বলে আসামিরা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই গত ২৫ জুলাই চন্দনাইশ দোহাজারী পৌরসভার চাগাচর এলাকা থেকে ১০ বছরের এক শিশুকে অপহরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিশুটির নাম নাহিদ, পিতার নাম নাছির উদ্দিন, সে দোহাজারী চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। তাদের পৈত্রিক নিবাস সাতবাড়িয়ায় তবে চাগাচরে ভাড়ার বাসায় থাকেন। গতকাল রবিবার দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নাহিদ সকাল ১১ টায় বাসার সামনের উঠানে খেলছিল। অপহরণকারীরা সুকৌশলে নাহিদকে ডেকে একটি অটো রিকশায় তুলে স্প্রে করে অজ্ঞান করে চন্দনাইশ ছৈয়দাবাদের পাহাড়ি এলাকার দিকে নিয়ে যাওয়ার সময় ছেলেটির জ্ঞান ফিরে আসে। এসময় অটোরিকশাটি ছৈয়দাবাদ ব্রিজের নিকট আটকে পড়লে অপহরনকারীরা গাড়িটি ধাক্কা দেয়ার জন্য নামলে ছেলেটি অবস্থা বুঝতে পেরে অটোরিকশা থেকে লাফ দিয়ে নিজেকে রক্ষা করেন। নাহিদের পিতা নাছির উদ্দিন চন্দনাইশ থানায় একটি অপহরণ মামলা করেছেন বলে জানা যায়। এর আগে চট্টগ্রাম নগরীতে একাধিক অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। গত বছর মার্চ মাসে ইপিজেড এলাকায় শিশু আয়াতকে অপহরণ ও হত্যার পর ছয় টুকরো করে খালে ফেলে দেওয়া এবং জামালখান এলাকায় প্রথম শ্রেণির ছাত্রী বর্ষাকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনার রেশ না কাটতেই পাহাড়তলীতে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী আবিদা সুলতানা আয়নী অপহরণ ও হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। ২১ মার্চের ঐ ঘটনার দেড় মাসের মাথায় নগরীর চান্দগাঁও থানার পশ্চিম মোহরা এলাকার নির্মাণাধীন ভবন থেকে রহিম নামে ১১ বছর বয়সি এক শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
একই সময়ে চান্দগাঁও গোলাপের দোকান মাজারগেট-সংলগ্ন নির্মাণাধীন ভবন থেকেও অপহ্নত লাশ উদ্ধার করা হয়। উল্লেখ্য, গত কয়েক বছওে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা ও নগরীতে যে হাওে শিশু অপহরণ এমনকি অপহরণের পর ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে। তা এক কথায় উদ্বেগজনক। এতে অভিভাবকরা চরমভাবে উদ্বিগ্ন । পুলিশের ধারণা, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যখন বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য দমনে ব্যস্ত তখন সামাজিকভাবে অপরাধ সৃষ্টিকারীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক অপরাধচক্র এর সাথে জড়িত। এছাড়া পারিবারিক বিরোধ ও সামাজিকভাবে আধিপত্যবাদীদের জের হিসেবে অপহরণসহ নানা ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়ে পুলিশ সজাগ। লক্ষ করার বিষয়, নগরীতে অপহৃত শিশুর অধিকাংশই নারী শিশু। যাদের বয়স সর্বনি¤œ ৫ বছর থেকে ১১ বছর। অপহরণকারীদের উদ্দেশ্য যাই থাকুক, কিন্তু প্রতিটি অপহরণের পর শিশুদের ধর্ষণ করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। সম্প্রতি হাটহাজারী ও চন্দনাইশের ঘটনার পেছনের উদ্দ্যেশ্য ছিল টাকা। টাকার লোভে শিশুদের অপহরণ করা হয়েছে বরে ধারণা করা হচ্ছে। তবে সমাজে আরো নানা কথা প্রচলন রয়েছে, যেমনটি শিশুদের অপহরণের পর হত্যা করে কিডনি, লিভারসহ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি করে ফেলা বা পাচার করা ইত্যাদি। আমরা মনে করি, অপহরণ একিিট গুরুতর অপরাধ। এ অপরাধে জড়িতদের প্রমাণ সাপেক্ষে যাবজ্জীবন কারাদন্ডসহ সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রয়েছে। এক্ষেত্রে আইনের সঠিক প্রয়োগের বিষয় নিয়ে অভিযোগ আছে। ফলে অপহরণ ও শিশু হত্যার ঘটনা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। অপরাধপ্রবণতা হ্রাস করতে হলে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। হাটহাজারী ও চন্দনাইশের ঘটনার সঠিক তদন্ত করে অপহরনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করবে সংশ্লিষ্টরা-এমনটি প্রত্যাশা আমাদের।