অর্থঋণ আদালতে কমছে মামলার জট

7

ওয়াসিম আহমেদ

চট্টগ্রাম অর্থ ঋণ আদালতে বাড়ছে মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যা। এক সময় যেখানে মামলার জট লেগেই থাকতো; সেখানে এখন গড়ে দুই থেকে তিনটি মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে প্রতিদিন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে অর্থঋণ আদালতে নতুন বিচারক যোগদান করার পর থেকে কমতে থাকে মামলাজট।
২২ ও ২৩ সালের ২৪ মাস ও চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে মামলা দায়ের হয়েছে ৪ হাজার ২২০টি, নিষ্পত্তি হয়েছে ৩ হাজার ৮১৯টি। ১০ বছরের অধিক পুরনো মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে ১৭৭টি। এ সময়ে বিচারক বেশ কিছু সাহসী উদ্যোগ নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার পরও সেটি পুলিশ তামিল না করলে পুলিশ কমিশনারকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিলে সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দেন। তাতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিলের হার আগের চেয়ে বেড়ে যায়।
জানা যায়, ২০২২ সালের ১৪ আগস্ট চট্টগ্রামের শীর্ষ ঋণখেলাপী ইলিয়াছ ব্রাদার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামসুল আলমসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। কিন্তু আসামিরা দেশে অবস্থান করলেও সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করতে ব্যর্থ হয়। বিষয়টি অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমানের নজরে আনা হয়। ফলে এক বছর ৯ মাস পর চলতি বছরের ২০ জুন শীর্ষ এই ঋণখেলাপীদের জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ারা কার্যকর করার জন্য সিএমপি পুলিশ কমিশনার ও আইজিপিকে নির্দেশ দেন তিনি। সাউথইস্ট ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখার দায়ের করা ঋণ খেলাপী মামলায় ইলিয়াছ ব্রাদার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামসুল আলম, চেয়ারম্যান নুরুল আবছার, পরিচালক নুরুল আলম, কামরুন নাহার বেগম ও তাহমিনা বেগমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করার নির্দেশনা দেওয়া হয় সেই আদেশে।
আদালত সূত্র জানায়, বিভিন্ন ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান খেলাপি ঋণের জন্য আদালতে যে মামলা দায়ের করে সেগুলো অর্থঋণ মামলা। অর্থঋণ মামলায় বাদীর পক্ষে যে রায় আসে সেটি বাস্তবায়ন কিংবা ঋণের টাকা অথবা সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য পরবর্তী সময়ে যে মামলা দায়ের করা হয় সেটি জারি মামলা।
অর্থঋণ আদালত সূত্র জানায়, নতুন বিচারক হিসেবে মুজাহিদুর রহমান যোগদানের পর থেকে মামলার জট কমতে শুরু করেছে। প্রায় প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চারটির মতো মামলার বিচারকাজ চলছে এবং নিষ্পত্তি হচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে মামলা দায়ের হয়েছে ৩৯১টি। তারমধ্যে অর্থ ঋণ মামলা ২০৮টি, জারি ১৬৭টি ও মিস মামলা ১৬টি। চার মাসে নিষ্পত্তি করা হয় ৪১৬টি মামলা, যার মধ্যে ১০ বছরের অধিক পুরনো মামলা ছিল ১৭টি। নিষ্পত্তি হওয়া মামলার মধ্যে, অর্থঋণ মামলা ২৯২, জারি মামলা ১১৫ ও মিস মামলা ৯টি। এরআগে ২০২৩ সালে মামলা দায়ের হয়েছে ২২৭১টি। তারমধ্যে অর্থ ঋণ মামলা ৭৮৭টি, জারি ১৩৯৯টি ও মিস মামলা ৮৫টি। ওই বছর নিষ্পত্তি করা হয় ১৬৮০টি মামলা, যার মধ্যে ১০ বছরের অধিক পুরনো মামলা ছিল ৯২টি। নিষ্পত্তি হওয়া মামলার মধ্যে, অর্থঋণ মামলা ১৩৫৫, জারি মামলা ২৫১ ও মিস মামলা ৭৪টি। ওই বছর অর্থঋণ মামলা বাবদ আদায় করা হয়েছে ৬শ’ কোটি টাকা। ২০২২ সালে মামলা দায়ের হয়েছে ১৫৫৮টি। তারমধ্যে অর্থ ঋণ মামলা ৯১৭টি, জারি ৫৫১টি ও মিস মামলা ৯০টি। ওই বছর নিষ্পত্তি করা হয় ১৭২৩টি মামলা, যার মধ্যে ১০ বছরের অধিক পুরনো মামলা ছিল ৬৮টি। নিষ্পত্তি হওয়া মামলার মধ্যে, অর্থঋণ মামলা ১২৮৩, জারি মামলা ৩০৫ ও মিস মামলা ১৩৫টি। ওই বছর অর্থঋণ মামলা বাবদ আদায় করা হয়েছে ৯শ’ কোটি টাকা।
তবে ২০২১ সালে অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে ১২৩৪টি। তারমধ্যে অর্থ ঋণ মামলা ৯০৫টি, জারি ২৬৯টি ও মিস মামলা ৬০টি। ওই বছর নিষ্পত্তি করা হয় ৭৯৯টি মামলা, যার মধ্যে ১০ বছরের অধিক পুরনো মামলা ছিল ৩৬টি। নিষ্পত্তি হওয়া মামলার মধ্যে, অর্থঋণ মামলা ৫১৯, জারি মামলা ২৩০ ও মিস মামলা ৫০টি। ওই বছর আদায় করা হয়েছে অর্থঋণ মামলা বাবদ প্রায় ৬শ’ কোটি টাকা।