অরক্ষিত থানাসহ রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করুন

4

নিজস্ব প্রতিবেদক

সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর চট্টগ্রামসহ দেশজুড়ে পুলিশের বিভিন্ন থানায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। লুট করে নেওয়া হয় অস্ত্র। এসব ঘটনায় অনেক পুলিশ সদস্যও নিহত হয়েছেন। হামলার চেষ্টা হয়েছে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন স্থাপনায়। পুলিশের সেসব থানা এখন পর্যন্ত অনেকটা অরক্ষিত হয়ে আছে। অরক্ষিত সেসব থানাসহ রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের আহবান জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।
নগরীর সার্কিট হাউসে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ আহবান জানান। জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরী ও উপজেলা মিলিয়ে পুলিশের সর্বমোট থানা আছে ৩২টি। এর মধ্যে নগরীর অনেক থানায় হামলা করা হয়েছে। অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছে। অস্ত্র লুট করা হয়েছে। লোহাগাড়া থানায় অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। অনেক পুলিশ বক্স ভেঙে ফেলা হয়েছে। বিষয়টি কিন্তু খুব সিরিয়াস।
তিনি বলেন, আমি ছাত্রদের এজন্য ধন্যবাদ জানাব যে, আপনারা অনেক অস্ত্র উদ্ধার করে আমাদের জমা দিয়েছেন। যেখানেই অস্ত্র পাওয়া যাবে আপনারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। পুলিশ অতি শীঘ্রই তাদের কার্যক্রম শুরু করবে। তবে এখন থানাগুলো অরক্ষিত অবস্থায় আছে। আপনাদের দেখে আমরা অনুপ্রাণিত। আপনারা থানার আশেপাশে যারা আছেন শিফটিংয়ের মাধ্যমে ১০ জন করে মোট ৩০ জন পাহারা দিতে পারলে সেগুলো সুরক্ষিত থাকবে। আমাদের রোভার স্কাউটস ও বিএনসিসির সদস্যরাও সেখানে থাকবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, থানার অনেক গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রিকুইজিশন দিয়ে থানাগুলোতে গাড়ি পাঠাতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের আমদানি-রফতানির হাব।সেটাকেও আমাদের সচল রাখতে হবে।
বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রামের সমন্বয়ক মোহাম্মদ রাসেল আহমেদ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রথমদিকে শুধু শিক্ষার্থীদের ছিল। কিন্তু সরকার পদে পদে ভুল করায় এ আন্দোলনটি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রূপ নেয়। আমরা ছাত্র-নাগরিকরা একটি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করি। এরপর সারাদেশে প্রশাসনিক ব্যবস্থা স্থবির হয়ে যাওয়ার কারণে অরাজকতা তৈরি হয়েছে। আমি দেশবাসীর কাছে অনুরোধ করব, আমরা দল-মত নির্বিশেষে সবাই মিলে বাংলাদেশকে আবার পুনর্গঠন করব। আপনারা ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা থেকে রক্ষা করবেন। এ দেশ আমাদের সবার। ছাত্রদের পক্ষে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই প্রশাসনকে অনুরোধ করব, যাতে তারা আমাদের সহযোগিতা করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সহ-সমন্বয়ক রিপা মজুমদার বলেন, বাংলাদেশ গত দুইদিন ধরে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আমরা সবাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। কোথাও কিছু হলে এখন কার কাছে যাব? কারণ পুলিশ তো নেই। জেলা প্রশাসকের কাছে আমি অনুরোধ করব, আগে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। সহিংসতা রুখতে নিরাপত্তা জোরদার করুন। রাউজান ও রাঙ্গুনিয়াসহ বেশকিছু এলাকায় সংখ্যালঘু ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘরে হামলা হচ্ছে। কাউকে মেরে ফেলার খবরও আমরা পেয়েছি। আমরা এটা চাই না। আপনারা যেতে না পারলে আমাদের গাড়ি দেন। আমরা গিয়ে সেখানে নিরাপত্তা দেব।
আরেক সমন্বয়ক চৌধুরী সিয়াম ইলাহী বলেন, আমরা স্বাধীনতার পক্ষে। আমরা চাই না যারা বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে মূখ্য ভ‚মিকা পালন করেছেন তাদের কোনো ফলক বা ভাস্কর্যে হামলা করে ভেঙে ফেলা হোক। আমরা দেশবাসীর কাছে আহবান জানাব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, শিল্পী জয়নুল আবেদিনসহ বিভিন্ন ব্যক্তির যেসব ভাস্কর্য বা নামফলক ভাঙচুর করা হচ্ছে, সেগুলো যাতে আর না হয়। কোনো স্থাপনার নামও যাতে পরিবর্তন করা না হয় সেটাও আমরা জোর দাবি জানাই। আমরা দেখতে পাচ্ছি, সরকার গঠিত হওয়ার আগেই অনেকেই বিভিন্ন স্থাপনার নাম পরিবর্তন করার চেষ্টা করছেন। এটা করতে দেওয়া যাবে না।
ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আমিনুল হক পিয়াস বলেন, দেশ এখন স্বাধীন। মানুষ স্বাধীন। সাংবাদিক ভাইদের বলব, আপনারা সত্য তুলে ধরেন। বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। যদি আপনার সত্য সংবাদ প্রচার করতেন স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতন আরও আগে হয়ে যেত। আমাদের পুলিশ প্রশাসনকে সচেতন হতে হবে। তারা যাতে কোনো দলের হয়ে কাজ করতে না পারে সেজন্য প্রশাসনকে নজরদারি রাখতে হবে। পুলিশ মাঠে থেকে যদি কাজ করতো তাহলে বাংলাদেশে এত খুন ও লুটপাট হতে পারতো না।