অভিনন্দন ড. মুহাম্মদ ইউনূস

4

বীর প্রসবিনী চট্টগ্রামের কীর্তিমান পুরুষ, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হতে যাচ্ছেন-এ খবরটি আমাদের জন্য গৌরব ও অহঙ্কারের নিঃসন্দেহে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানের মুখে গত সোমবার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিকাল নাগাদ সেনাবাহিনীর প্রধান জাতির উদ্দেশে দেয়া বক্তব্যে প্রেসিডেন্টের সাথে কথা বলে স্বল্প সময়ের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ঘোষণা দেন। এরপর থেকে তোড়জোড় শুরু হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন নিয়ে। নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ সরকারের প্রধান হতে যাচ্ছেন-এ খবরটি নানা মাধ্যমে আলোচনায় আসলেও সর্বশেষ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাই তাঁর নাম প্রস্তাব করে সকল জল্পনার অবসান ঘটালেন। গত মঙ্গলবার রাতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৩ সমন্বয়কের উপস্থিতিতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ, নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বঙ্গভবনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর রাতেই বঙ্গভবন থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং রাষ্ট্রপতি কর্তৃক দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর দেশ এখন এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। যদিও রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কর্তা ব্যক্তিদের অনুপস্থিতিতে দেশের সর্বস্তরে স্তবিরতা চলে আসছে। আইন-শৃঙ্খরা পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেছে। ফলে যত দ্রুত সম্ভব এই সংকট থেকে উত্তরণের কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি। এ জন্য যত দ্রুত সম্ভব অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব হস্তান্তরের কোন বিকল্প নেই। জানা যায়, উপদেষ্টামন্ডলীর অন্যান্য সদস্য মনোনয়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল ও আন্দোলনকারী সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। এ সময় রাষ্ট্রপতি সংকট উত্তরণে দেশবাসীকে সহযোগিতা করার আহŸান জানিয়েছেন তিনি। আশার কথা, গতকাল রাতেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথের কথা ঘোষণা করেছেন সেনাবাহিনীর প্রধান। ড. মুহাম্মদ ইউনূসও দেশে ফিরেছেন বৃহস্পতিবার বিকালে। আশা করা হচ্ছে, দেশের যে অচলাবস্থা তা শিগগিরই কেটে উঠবে।
তবে এর আগেই অর্থাৎ শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর প্রচারের পরপরই দেশের বিভিন্ন স্থানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তো বটেই; আক্রান্ত হচ্ছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ ও তাদের উপাসনালয়। কোন কোন জায়গায় ইসলামের প্রচারক সুফি সাধকদের মাজারও ভাঙচুরের খবর এসেছে। এছাড়া গত কয়েক দিনে দেশে ৪৭০টি থানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার এবং এর আগের দিন চট্টগ্রাম ও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আরো হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। থানা, উপাসনালয়সহ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাসহ অনেক বাড়িতে হামলা করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাঝুঁকির কারণে বর্তমানে দেশের সব থানা ও পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশ সদস্যরা কর্মবিরতি পালন করছেন। এ কারণে তাঁদের কাউকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যাচ্ছে না। হামলার পর অরক্ষিত হয়ে পড়া থানাগুলোর নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকে। পাশাপাশি মহানগরের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বেও থাকছে এ বাহিনী।
ওদিকে পুলিশের শীর্ষ পদে পরিবর্তন হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের নবনিযুক্ত আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম। চেইন অব কমান্ড বজায় রেখে পুলিশের প্রতিটি সদস্য যাতে উন্নত মনোবল ও সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারেন সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। ওদিকে ডাকাতির আতঙ্কে নির্ঘুম এক রাত পার করেছে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলা উপজেলার মানুষ। ঢাকায় মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিং, মোহাম্মদী হাউজিং, চান মিয়া হাউজিং, চাঁদ উদ্যান, ঢাকা উদ্যান, চন্দ্রিমা হাউজিং এলাকা এবং উত্তরার বেশ কয়েকটি সেক্টরে ডাকাতির আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশবিহীন অরক্ষিত রাতে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। সুতরাং শপথের পরপর দেশের মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভূমিকা নিতে হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে।
বাংলাদেশের সব পক্ষকে শান্ত ও সংযত থাকার আহবান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। একই সঙ্গে তিনি দেশে ‘শান্তিপূর্ণ, সুশৃঙ্খল ও গণতান্ত্রিক উত্তরণের’ ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। এছাড়া যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সকল পক্ষকে শান্ত থাকার আহবান জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথের পর সংকট থেকে দেশ দ্রুত গণতন্ত্রে ফিরবে-এমনটি প্রত্যাশা দেশবাসীর।