অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ

3

 

পূর্বদেশ ডেস্ক

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বহুত্ববাদী গণতন্ত্রে উত্তরণ এবং একটি পরিবেশ তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যার মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে পারে।
গতকাল শনিবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘থার্ড ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিট-২০২৪’ এর লিডার্স সেশনে তিনি এ কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বৈপ্লবিক পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে তরুণরা আন্দোলন করেছে এবং তাদের আকাক্সক্ষা দেশবাসীকে প্রভাবিত করেছে। এখন গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে অর্থবহ সংস্কার জরুরি, যার মাধ্যমে ভঙ্গুর হয়ে পড়া রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানকে পুনরুদ্ধার করা হবে। খবর বিডিনিউজের।
বাসস জানায়, ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সম্মেলনে যুক্ত হন প্রধান উপদেষ্টা। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে শপথ নেয়ার পর এই প্রথম তিনি বহুপক্ষীয় কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন।
ছাত্র জনতার সাম্প্রতিক আন্দোলনের পর বাংলাদেশে নানা পরিবর্তন ঘটছে, সে কথা তুলে ধরে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, তরুণ ছাত্র এবং ১২ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশুরা ৪০০ বছরের শহরের দেয়ালে একটি নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ছবি আঁকছে। এর জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা নির্দেশনা তাদের নেই। কারোর পক্ষ থেকে বাজেট সমর্থনও নেই। এটি দ্বিতীয় বিপ্লবের আকাক্সক্ষার প্রতি তাদের আবেগ এবং অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের তরুণদের দেয়ালের লেখা পড়ে যে কেউ বুঝবেন, তারা কী স্বপ্ন দেখছে। তরুণদের স্বপ্ন পূরণ করাই আমাদের প্রধান কাজ। টেকসই ভবিষ্যত বিনির্মাণ ও নতুন বিশ্ব গড়ে তুলতে গ্লোবাল সাউথের কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে তরুণ ও ছাত্রদের রাখার আহবান জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, তরুণরা নতুন বিশ্ব গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
গ্লোবাল সাউথ নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে তিনি বলেন, গ্লোবাল সাউথের কৌশলে এ অঞ্চলের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ ছাত্র ও তরুণদের অবশ্যই রাখা উচিত। কারণ তারা একটি নতুন বিশ্ব তৈরিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ য্বুক। সমাজের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশ তারাই।
আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, এশিয়া ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দেশ গ্লোবাল সাউথের অন্তর্ভুক্ত। মূলত এসব দেশে মাথাপিছু আয় উন্নত দেশের তুলনায় কম।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, যুবক ও তরুণরা অন্যদের থেকে আলাদা। তারা সক্ষম এবং আগের প্রজন্ম থেকে প্রযুক্তিগতভাবে অনেক এগিয়ে। অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে। তারা উদ্যোক্তা মনোভাবাপন্ন। তাদের চাকরি চাওয়ার কারণ এমন নয় যে তারা চাকরিকে উপভোগ করে। এর কারণ তাদের অন্য কোনো সুযোগ নেই। আমাদের মত দেশে দীর্ঘদিন ধরে এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা চলছে, যা তাদের চাকরির জন্য তৈরি করা হয়। তাদের সৃজনশীল ক্ষমতাকে ভুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবুও, সব মানুষ সৃজনশীল প্রাণী হিসেবেই জন্মগ্রহণ করে। প্রাকৃতিকভাবেই মানুষ উদ্যোক্তা।
এক্ষেত্রে সংস্কারের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষা ও অর্থ ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে কেবল চাকরি প্রত্যাশীদের জন্য। তাদের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ফলে এই সিস্টেমকে নতুনভাবে সাজানো উচিত। আমি আশা করি, গেøাবাল সাউথে আমরা এ কাজটি একসঙ্গে করতে পারব। কারণ বিশ্বের এ অংশটি চমৎকারভাবে সৃজনশীল তরুণ জনসংখ্যাসমৃদ্ধ।
সামাজিক ব্যবসার সঙ্গে উদ্যোক্তা মনোভাবের সম্মিলন হলে ‘অলৌকিক কিছু হতে পারে’ মন্তব্য করে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউনূস বলেন, সমন্বিত প্রচেষ্টার জন্য গ্লোবাল সাউথে আমরা কিছু সাধারণ সুযোগ-সুবিধার প্রস্তাব করতে চাই, যাতে সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে আমাদের তরুণ জনসংখ্যার সৃজনশীলতা ও শক্তি বা উদ্যম প্রকাশ পায়।
বাংলাদেশে গত জুলাই মাসে চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন পরে রূপ নেয় ছাত্র-জনতার তুমুল গণআন্দোলনে। ব্যাপক সহিংসতা ও প্রাণহানির মধ্যে আন্দোলন আরো বেগবান হলে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।
এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের দাবি অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হন নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস। গত ৮ আগস্ট ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা শপথগ্রহণ করেন, যে সরকারে আন্দোলনকারী দুজন ছাত্রকেও রাখা হয়েছে।
আন্দোলনে সরকারপতনের পর ছাত্রনেতারা রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কারের ওপর জোর দেন। মুহাম্মদ ইউনূসও দায়িত্বগ্রহণের শুরু থেকে সব প্রতিষ্ঠানে সেই সংস্কারের কথাই বলে আসছেন।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া তরুণদের প্রশংসা করে প্রধান উপদেষ্টা লিডার্স সামিটে বলেন, বীর ছাত্রদের নেতৃত্বে বাংলাদেশে গত ৫ আগস্ট দ্বিতীয় বিপ্লব সংঘঠিত হয়েছে। আর জনগণের যোগদানের মাধ্যমে এই বিপ্লব গণঅভ্যুত্থানের রূপ নেয়, যার ফলস্বরূপ গত ৮ অগাস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ গ্রহণ করে।
তৃতীয় ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিটের স্লোগান ‘অ্যান এমপাওয়ার্ড গ্লোবাল সাউথ ফর আ সাসটেইনেবল ফিউচার’-কে ‘সময়োপযোগী ও উপযুক্ত’ বলেন মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, আমরা ‘তিনটি শূন্যের বিশ্ব’ গড়ার লক্ষ্য দিয়ে শুরু করতে পারি। এগুলো হল- শূন্য কার্বন নির্গমন, শূন্য পুঞ্জীভূত সম্পদ ও শূন্য বেকারত্ব। আমরা সামাজিক ব্যবসাকে যদি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দিই, যে ব্যবসা কেবল সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যা সমাধানের জন্য তৈরি, তাহলে ‘তিনটি শূন্যের বিশ্ব’ তৈরির পথ আমরা নির্ধারণ করতে পারি। গ্লোবাল সাউথের নেতৃবৃন্দকে পরিবেশগত ও সামাজিক সমস্যা মোকাবেলায় সামাজিক ব্যবসা তৈরির জন্য একসঙ্গে কাজ করার আহবান জানান ইউনূস।