অন্যের তালা খুললেও ভাগ্যের তালা খুলেনি

13

হাটহাজারী প্রতিনিধি

মো. আবুল কালাম (৫৮) পেশায় তালা-চাবি মেরামতকারী। ২৩-২৪ বছর বয়সে জীবিকার তাগিদে নিজ উদ্যোগে এ কাজ শিখেছেন তিনি। সব ধরনের তালারই নকল চাবি অনায়াসে তৈরি করতে পারেন। তার বানানো চাবিতে অনায়াসে যে কারো তালা খুলে যায়। কিন্তু কখনও খুলতে পারেননি নিজভাগ্য পরিবর্তনের তালা।
দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে তালা-চাবি মেরামত করেই চলেছেন আবুল কালাম। এ কাজ করে যে উপার্জন, তা দিয়েই ভালোভাবেই চলছিল তার সংসার। কিন্তু এখন তার বয়স বেড়েছে। ৫ সদস্যের সংসারে বেড়েছে খরচ। আর এর বিপরীতে কমেছে উপার্জন। বর্তমানে যা আয় করছেন, তা দিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর। বাজারে নিত্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দামে তাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
আবুল কালামের বাড়ি হাটহাজারী পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের মিরের খিল গ্রামে। স্ত্রী ও ৩ ছেলেমেয়েকে নিয়ে তার সংসার। বড় ছেলে গেল বছর ডিগ্রি পাস করেছেন। বড় মেয়ে এইচএসসি পাস করেছেন। ছোট মেয়ে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াশুনা করছেন। তালা-চাবি মেরামতের টাকা দিয়েই কোন রকমে চলে তাদের ভরণপোষণ।হাটহাজারী পৌর বাজারের চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের পাশেই আবুল কালামের তালা-চাবি মেরামতের ভ্রাম্যমাণ দোকান। গতকাল মঙ্গলবার সকালে সেখানে তার সঙ্গে কথা হয়।
এ সময় আবুল কালাম বলেন, আমি ৩৫ বছর ধরে নকল চাবি তৈরির পাশাপাশি অকেজো তালা ও লাইটারে গ্যাস ভরার কাজ করি। একটা সময় প্রচুর কাজ মিলত। আয়-রোজগারও ভালো হতো। বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির বিভিন্ন ধরনের তালা-চাবি বাজারে এসেছে। ফলে পুরনো তালা-চাবি মেরামত করতে লোকজন তেমন আর আসেন না। এক সময় প্রতি হাটে ১ হাজার থেকে ১৫শ টাকার বেশি রোজগার করতে পারতাম। এখন ৫/৭শ টাকাও রোজগার করতে পারি না।
তিনি আরও বলেন, মানুষের বাসা-বাড়ি, দোকানপাট, অফিস-আদালত, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের তালাচাবি নষ্ট হলে মেরামত করে দিই। বিনিময়ে যে টাকা রোজগার হয়, তা দিয়েই সংসার চলে। আগে সংসার ছোট ছিল। রোজগার হতো বেশি। এখন বয়স বেড়েছে, সরকারি কোন সুয়োগ-সুবিধাও পাই না। এর মধ্যে কমে গেছে রোজগার। এক সময় ২০০ টাকা নিয়ে বাজারে গেলে চলত। এখন ৫০০ টাকা নিয়ে বাজারে গেলেও প্রয়োজনীয় সব কেনা সম্ভব হয় না। বর্তমান বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, এ অবস্থায় আমাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দু’বেলা, দু’মুঠো খেয়ে বেঁচে থাকাটাই কঠিন হয়ে পড়েছে।