অন্তর্বর্তী সরকার দেশ চালাবে সব হত্যার বিচার হবে

5

পূর্বদেশ ডেস্ক

তুমুল গণ আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেছেন, সমস্ত হত্যা, সমস্ত অবিচারের বিচার আমরা করব। সেনাবাহিনীর ওপর আস্থা রাখেন। আপনারা আশাহত হবেন না।
গতকাল সোমবার বিকাল পৌনে ৪টার দিকে সেনা সদরে জনগণের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্যে এ ঘোষণা দেন তিনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগের দ্বিতীয় দিন ঢাকামুখী লং মার্চ কর্মসূচিতে ছাত্র-জনতার রাজপথে নেমে আসার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। খবর বিডিনিউজের।
দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরেন তিনি।
সেনাপ্রধান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। এখন একটা ইনটেরিম গর্ভমেন্ট ফর্ম করে আমরা আমাদের কাযক্রম পরিচালনা করব। আপনারা একটু ধৈর্য ধরেন, আমাদের কিছু সময় দেন। ইনশাহআল্লাহ, আমরা সবাই মিলে সমস্ত সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম হবো। আপনারা আর এ সংঘাতের পথে যাবেন না। শান্তি শৃঙ্খলা পথে ফিরে আসুন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রথমদিকে শান্তিপূর্ণ থাকলেও তা ১৬ জুলাইয়ের পর থেকে ক্রমে সহিংস হয়ে ওঠে। গত এক মাস পাঁচ দিনে তিন শতাধিক মৃত্যু হয়।
এ আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতা বাড়লে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এক দফার সরকার পতনের ডাক দিয়ে অসহযোগ শুরু করে। অসহযোগের দ্বিতীয় দিন ঢাকামুখী লং মার্চের কর্মসূচিতে সকালের পর থেকে ছাত্র-জনতা ঢাকায় নামলে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়।
গতকাল এমন প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সেনাসদরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে আলোচনার পর তিনি জনগণের উদ্দেশ্য বক্তব্য দেন।
সৈনাপ্রধান তার বক্তব্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক ‘সফল’ হওয়ার কথা তুলে ধরে বলেন, আপনারা সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থা রাখেন যত দাবি আছে পূরণ হবে। আপনারা সব ধরনের সহযোগিতা করেন। আমি সমস্ত দায়িত্ব নিচ্ছি। ইনশাআল্লাহ সব দাবি পূরণ করব। শান্তি ফিরিয়ে আনব। আপনারা সহযোগিতা করেন। দেশে একটা শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে নিয়ে আসব।
তিনি বলেন, প্রধান দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা প্রস্তাব রেখেছি। সবাই রাজি হয়েছেন।
আমরা সুন্দর আলোচনা করেছি। সেখানে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি-একটা ইনটেরিম গর্ভমেন্ট ফর্ম করব এবং ইন্টটেরিম গর্ভমেন্টের মাধ্যমে এ দেশের সমস্ত কাযকলাপ চলবে। আমরা এখন মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যাব। এ ইনটেরিম গর্ভমেন্টের ব্যাপারে উনার সাথে আলাপ আলোচনা করে দেশ পরিচালনা করব।
ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, একসাথে কাজ করলে আমরা সুন্দর পরিস্থিতির দিকে যাব। মারামারি করে আর কিছু পাব না। ধ্বংসযজ্ঞ, অরাজকতা থেকে বিরত হন। সবাই মিলে সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে যাব। প্রতিটি হত্যার বিচার হবে।
তিনি বলেন, আমরা সুন্দর বন্দোবস্ত করেছি। সুন্দর একটা অন্তবর্তী সরকার গঠন করে সরকার পরিচালনা করব।
ছাত্র-জনতাকে শান্ত হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা আর সংঘাতের পথে যাবেন না। আমাদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। সম্পদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। আপনারা আমাদের সাহায্য করেন।
বক্তব্য দেওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, আওয়ামী লীগের কেউ ছিল না। এটি বিশেষ পরিস্থিতি, আমরা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসব। আপনারা সাহায্য করেন। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিস্থিতি যদি শান্ত হয়ে যায়, তাহলে তো কারফিউয়ের প্রয়োজন নেই। সেনাবাহিনী কোনো গোলাগুলি করবে না। পুলিশ গোলাগুলি করবে না। আমি আদেশ দিচ্ছি।
সবার সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, আপনারা আমার সাথে সহযোগিতা করেন। দয়া করে আর এ ভাংচুর, হত্যা, মারামারি, সংঘর্ষ এগুলো থেকে বিরত হোন। আমি নিশ্চিত, আপনারা যদি আমার কথা মত চলেন, আমাদের সাথে একসাথে কাজ করি; নিসন্দেহে আমরা একটা সুন্দর পরিণতির দিকে অগ্রসর হতে পারব।
রাজনৈতিক দলের নেতাদের পাশাপাশি বিশিষ্টজনের সঙ্গে ফলপ্রসু আলোচনার কথা তুলে ধরে সেনাপ্রধান সবাইকে ঘরে ফিরে যাওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, সহিংসতা থেকে বিরত হন।
আমাদের দেশের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। অর্থ সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। লোকজন মারা যাচ্ছে। এগুলো থেকে আপনারা বিরত হোন, আমাদের সাহায্য করেন। আমি সমস্ত দায়িত্ব নিচ্ছি। আপনারা আমাকে সাহায্য করেন।
প্রশ্নোত্তরে অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্য সংখ্যা কত হতে পারে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনও এটা নয়, খুব আর্লি স্টেজ। আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়ে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে একটা করব।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার কাজ চালিয়ে যাবে। সবার দায়িত্ব, ছাত্র, রাজনীতিক কর্মীদের দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে সাহায্য করা। আপনার মিডিয়ার মাধ্যমে আমাদের সাহায্য করেন। তাহলে আমরা এ পরিস্থিতি সহজে নিয়ন্ত্রণ আসতে পারব।
কারফিউ কবে তোলা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিস্থিতি শান্ত হলে কারফিউর প্রয়োজন নেই। জরুরি অবস্থার প্রয়োজন নেই। কোনো গোলাগুলির প্রয়োজন নেই। আমি আদেশ দিয়ে দিয়েছি-সেনাবাহিনী কোনো গোলাগুলি করবে না। পুলিশ কোনো গোলাগুলি করবে না। আমি আশা করছি যে, আমার এ বক্তব্যের পরে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। আমরা একটা সুন্দর পরিবেশের দিকে যাচ্ছি।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল খেলাফতে মজলিসের নেতা মাওলানা মামুনুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী প্রমুখ
এই বৈঠকের জাতীয় পার্টির পক্ষে ছিলেন দলের কো চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। এই দলটি ২০০৮ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে এবং ২০১৪ ও ২০২৪ সালে সমঝোতা করে ভোটে যায়।