অনুকূলচন্দ্র চক্রবর্তী

2

যিনি ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র নামেও পরিচিত ছিলেন একজন বাঙালি ধর্মগুরু। অনুক‚লচন্দ্র সৎসঙ্গ নামক সংগঠনের প্রবর্তক। তিনি ব্রিটিশ ভারতের বঙ্গ প্রদেশের পাবনা জেলার হিমায়তপুরে জন্মগ্রহণ করেন, যা বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্গত। ঝাড়খন্ডের দেওঘরে মৃত্যুবরণ করেন।
অনুকুলচন্দ্র ১৮৮৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বঙ্গ প্রদেশের পাবনা জেলার হিমায়তপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হলেন শিবচন্দ্র চক্রবর্তী এবং মাতা হলেন মনমোহিনী দেবী। ১৮৯৩ সালে তিনি হিমায়তপুর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু করেন। ১৮৯৮ সালে তিনি পাবনা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন এবং সেখানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। তিনি অমিতাবাদের রায়পুর উচ্চ বিদ্যালয়ে অল্প সময়ের জন্য পড়েন এবং তারপরে পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনার নৈহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। পরে তিনি কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল স্কুলে ভর্তি হন এবং সেখান হোমিওপ্যাথিতে ডিগ্রি অর্জন করে। অনুক‚লচন্দ্র দেওঘরে তপোবন বিদ্যালয়, দাতব্য চিকিৎসালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ, পাবলিশিং হাউজ, ছাপাখানা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সৎসঙ্গের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুক‚লচন্দ্র। প্রতিষ্ঠানটির নামের তাৎপর্য ব্যখ্যা করে তিনি বলেন, ‘সৎ ও সংযুক্তির সহিত তদগতিসম্পন্ন যাঁরা তাঁরাই সৎসঙ্গী, আর তাদের মিলনক্ষেত্র হল সৎসঙ্গ। শুরু হল মানুষ তৈরির আবাদ। কর্মের মাধ্যমে যোগ্যতর মানুষ গড়ে তোলাই হল এর লক্ষ্য। সৎসঙ্গ ‘ইষ্টভৃতি’- এর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে; এক বিরল প্রথা। ধর্ম কর্মের অপূর্ব সমন্বয়ে সৎসঙ্গ আশ্রম। শিক্ষা, কৃষি, শিল্প সুবিবাহ আস্তিকের এই চার স্তম্ভের অভিব্যক্তি। এই আশ্রমে বিভিন্নমুখী কর্ম প্রতিষ্ঠানের বিদ্যায়তন গড়ে উঠল, প্রাচীন ঋষিদের তপোবনের নবতর সংস্করণ যেন। ব্রহ্মচর্য্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থ ও সন্ন্যাস সনাতন আর্য জীবনের এই চারটি স্তরই সৎসঙ্গ আশ্রমভূমিতে এক সামঞ্জস্যপূর্ণ যুগোপযোগী রূপ লাভ করে। ঠাকুর অনুক‚লচন্দ্রের আধ্যাত্মিক প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দলে দলে মানুষ এসে তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধী, লাল বাহাদুর শাস্ত্রী, গুলজারীলাল নন্দা এই সৎসঙ্গের কর্মকান্ড দর্শন করে ভূয়শী প্রশংসা করেন। ১৯৬৯ সনের ২৭ জানুয়ারী তারিখে ৮১ বছর বয়সে তাঁরই প্রতিষ্ঠিত আশ্রম ভারতের বিহারে দেওঘরে ঠাকুর দেহ ত্যাগ করেন। অনুক‚লচন্দ্র ঠাকুর প্রায় ৪৬টি পুস্তক রচনা করেন। এগুলোতে ধর্মশিক্ষা, সমাজ সংস্কার প্রচলন প্রভৃতি বিষয়ে আদর্শ ও উপদেশসমূহ বর্ণিত হয়েছে। সূত্র: বাংলাপিডিয়া