অধিগ্রহণের জমি বিনা শর্তে ফেরত পেতে ওয়ারিশানদের সংবাদ সম্মেলন

15

হাটহাজারী প্রতিনিধি

দীর্ঘ প্রায় ৬০ বছর আগে হাটহাজারী উপজেলার ফতেয়াবাদে তৎকালীন সামরিক সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসক কর্তৃক ‘চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রকল্প’র জন্য দখলকৃত ৭৫ একর নাল ধানী জমির ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকরা তাদের বাপ-দাদার জমি বিনা শর্তে ফেরত চায়। ১৯৬২ সালে এসব ভূমি দখলের একবছর পর ওয়াসা প্রকল্পটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে অন্যত্র বাস্তবায়ন করলে জমির মালিকরা ওই পরিত্যক্ত ভূমি ভোগদখল করে আসছিল।
এরমধ্যে গত ১ এপ্রিল ওয়াসা কর্তৃপক্ষ ওই জায়গার চতুর্দিকে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করার জন্য টেন্ডার আহবান করলে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকরা জানতে পেরে ক্ষোভে ফুঁসে উঠে।
গতকাল সোমবার (২৯ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ফতেয়াবাদ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন করে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকরা। এ সময় তারা চট্টগ্রাম ওয়াসার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, এই নিয়ে যে কোন সময় এলাকার আইনশৃঙ্খলার মারাত্মক অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তারা তাদের পূর্ব পুরুষের জায়গা হারাতে নারাজ।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃক ক্ষতিগ্রস্ত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রায়হান মাহমুদ। লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, বিগত ১৯৬২ সালে উপজেলার ফতেয়াবাদ এলাকায় ওয়াসা পানি শোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে তৎকালীন সামরিক সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসক কর্তৃক প্রায় ৭৫ একর (পাহাড়তলী মৌজার ৫০ এবং চিকনদন্ডী মৌজার ২৫ একর) ধানী নালজমি নামমাত্র মূল্যে ৫০ শতাংশ ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদান করলেও সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণের টাকা বুঝিয়ে দেয়নি এবং জেলা প্রশাসন এ সংক্রান্ত কোন গেজেটও প্রকাশ করেননি। ক্ষতিগ্রস্ত মালিকগণের ক্ষতিপূরণ না দিয়ে বা গেজেট প্রকাশ না করে জেলা প্রশাসন অন্য কোন সংস্থার নিকট উক্ত জমি হস্তান্তর করতে পারেন না।
তবে বছরখানেক পর ১৯৬৪ সালে উক্ত প্রকল্প পরিত্যাগ করে অন্যত্র প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার ফলে প্রকল্পের অপমৃত্যু ঘটে। তৎপর তারা ভুমির মালিকগণ পরিত্যক্ত ভূমি ভোগ দখলে রাখে।
তিরি আরও জানান, ভূমি মালিকগণ তাদের জমিজমার অবমুক্তির দাবিতে তৎকালীন ভূমি মন্ত্রীর বরাবরে স্মারক লিপি প্রদান করেন।
তদসূত্রে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিবের নির্দেশক্রমে জেলা প্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেন যে, ফতেয়াবাদ প্রকল্প পাঁচলাইশ (চান্দগাঁও) থানা এলাকায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে। অপরদিকে, কৃষি জমির প্রচন্ড স্বল্পতার প্রেক্ষিতে হুকুম দখলীয় বিস্তৃৃত জমির অব্যবহৃত রাখার কোন যুক্তি নাই মর্মে উক্ত পরিত্যক্ত জমি মালিক বরাবরে অবমুক্তির সুপারিশ করেন। এক পর্যায়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার সচিব স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয় (এলজিআরডি) এর সহকারী সচিবকে জানান যে, ফতেয়াবাদ ওয়াসা প্রকল্পের অব্যবহৃত জায়গা বাজার মূল্যে অবমুক্তি করতে আগ্রহী। তদসূত্রে এলজিআরডি’র সহকারী সচিব ওয়াসার সচিব বরাবরে অবহিত করলে তিনি (ওয়াসার সচিব) এ বিষয়ে জবাব প্রদান করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব জেলা প্রশাসক বরাবরে প্রকল্পের অব্যবহৃত জমির পরিমাণ জানতে চাইলে তিনি বিস্তারিত বিবরণ দেন।
অতঃপর ১৯৯৮ সালে ভূমি মন্ত্রণায়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জেলা প্রশাসককে হুকুম দখলীয় জমির বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে তিনি মন্ত্রণালয়কে খালি পরিত্যক্ত জমাজমিসমূহ ক্ষতিগ্রস্থ মালিকগণের দখলে থাকা এবং জমাজমি অবমুক্তি করার বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করেন বলে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকরা জানান।
তবে দুর্ভাগ্যের বিষয় অদৃশ্য কারণে উল্লেখিত প্রশাসনিক ধারাবাহিক কার্যকারিতা স্তিমিত হয়ে পড়ার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমির মালিকদের জমি ফেরত পাওয়ার আশা আকাক্সক্ষা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে-এমনটা জানিয়ে তারা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেশে এক ইঞ্চি জমিও পতিত রাখা যাবে না এবং কৃষি জমি ক্ষতি করে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে না।
অথচ চট্টগ্রাম ওয়াসা দীর্ঘ ৬০(ষাট) বছর ধরে ৭৫ একর জায়গা পরিত্যক্ত/পতিত অবস্থায় ফেলে রেখেছে। এমতাবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত ভূমির ৫০০ ওয়ারিশগণ তাদের বাপ-দাদার জমি বিনা শর্তে ফেরত নিয়ে চাষাবাদ করতে চাই।
উক্ত সাংবাদিক সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমিমালিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃক ক্ষতিগ্রস্ত মালিক সমিতির সভাপতি কাজী এনামুল হক, সহ- সভাপতি আলী নাসের চৌধুরী, নুরুল আবছার, ফজলুল হক চৌধুরী, আব্দুর রহমান, সহ- সাধারণ সম্পাদক মো. ইসমাইল, মহসিন খান, কোষাধ্যক্ষ এস এম ইউসুফ খান, নাসির উদ্দিন বাহাদুর, আলাউদ্দিন রাজু, আবুল হাসান, শোয়াইবুর রশিদ ও সাইফুল ইসলাম আরিফ প্রমুখ।