অতি বাম-অতি ডানরা মিলে সরকার উৎখাতে কাজ করছে

9

ঢাকা প্রতিনিধি

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, অতি বাম আর অতি ডান মিলে সরকার উৎখাতে কাজ করছে। রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া একটি গোষ্ঠী আর কিছু বুদ্ধিজীবী অনবরত দেশের বিরুদ্ধে গিবত গাইছে। তাদের মূল লক্ষ্য সরকার উৎখাত।
প্রধামন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করেছে। দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে। পদ্মা সেতুতে ইতোমধ্যে ১৫০০ কোটি টাকা টোল উঠেছে। বাংলাদেশ যে পারে এটাই তার প্রমাণ। বিশ্ব যখন বাংলাদেশের প্রশংসা করছে, তখন কিছু মানুষ সমালোচনা করছে। যে যাই বলুক, শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে দেশ এগিয়ে যাবে।
তিনি গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষিসহ সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ এগিয়েছে। মা ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস, চিকিৎসা সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া, শিক্ষার হার বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এমন কোনো খাত নেই যা পিছিয়ে আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে কোভিড-১৯ অতিমারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলা করেও বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক শক্তি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে এবং ২০২৬ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে বিএনপি ভোট কারচুপি ও দেশের গণতন্ত্র ধ্বংসের সূচনা করেছে তাদের কাছ থেকে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের শিক্ষা নেওয়া খুবই দুর্ভাগ্যজনক। কেননা আওয়ামী লীগ এমন একটি দল যারা দেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম করেছে এবং দলের অনেক নেতাকর্মী জীবন দিয়ে গেছেন।
এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও কাজী জাফরউল্লাহ এবং সিনিয়র সদস্য আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধামন্ত্রী বলেন, এখন কার যে কী আদর্শ, কে যে কতটুকু বিচ্যুত হলো, সেটাই প্রশ্ন। অতি বামদের আদর্শ নেই, তারা বলে সরকারকে উৎখাত করতে হবে। আমাদের অপরাধটা কী? তবে ভোট চুরি করলে এ দেশের মানুষ মেনে নেয় না। আমরা জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে তাদের সচেতন করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার সময় আমরা বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিয়েছি। পৃথিবীর ধনী দেশগুলো দেয়নি, কিন্তু বাংলাদেশ দিয়েছে। টেস্ট আমরা বিনা পয়সায় করেছি, কোনও ধনী দেশও করেনি। আমরা দুই হাতে পানির মতো টাকা খরচ করে মানুষকে বাঁচাতে পদক্ষেপ নিয়েছি। খুব কম দেশই সেটা করতে পেরেছে। আমরা সেখানে সাফল্য অর্জন করেছি।
সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আজ দেশের মানুষের দিন বদল হয়েছে। দারিদ্র্যের হার এখন গ্রামে নয় শহরে দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গড়া যাবে। বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ক্ষমতায় বসে লুটপাট করতে পারছে না বলেই সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনায় নেমেছে বিএনপি। বিএনপি এমন একটি দল, যাদের কোনো মাথামুন্ডু নেই। তারা শুধু পারে অনলাইনে নির্দেশনা দিতে। ২৮ অক্টোবর বিএনপি যে অপকর্ম করেছে, তা মানুষের ভুলে যাওয়া উচিত না।
জনগণের আস্থা-বিশ্বাসই আওয়ামী লীগের মূল শক্তি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ দেশের মানুষের দিন বদল হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গড়া যাবে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এক বছর না পেরোতেই দেড় হাজার কোটি টাকা উপার্জন হয়েছে দেশের। এটাই তো প্রাপ্তি।
যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশের উপর মানবাধিকারের রিপোর্ট লেখে কিন্তু নিজেদের চেহারাটা আয়নায় দেখে না। তারা যেভাবে আচরণ করে আমাদের পুলিশ তো সেভাবে করেনি।
ধৈর্যের পরিচয় দিতে গিয়ে উল্টো পুলিশ বিএনপির হাতে মার খেয়েছে। উল্টো তারা পুলিশকে যেভাবে মাটিতে ফেলে পিটিয়েছে, এভাবে আমেরিকায় যদি একটা পুলিশের গায়ে কোনো দলের লোক হাত দিত, তারা কি করত? কদিন আগে যুদ্ধের বিরোধিতা করায় সাধারণ মানুষের আন্দোলনে কি জুলুমটাই না করলো আমেরিকার পুলিশ! এটা তো মানবাধিকার লঙ্ঘন। এর জবাব কী?
তিনি বলেন, অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুকে মায়ের কোল থেকে নিয়ে তাকে হত্যা করা, প্রফেসরদের ওপর জুলুম করা, পুলিশ মহিলা প্রফেসরকে যেভাবে মাটিতে ফেলে হাতকড়া পরিয়েছে, এর জবাব আমরা চাই। এটা তো সম্পূর্ণ মানবাধিকার লঙ্ঘন।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি নাগরিকদের সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে এর জবাব চেয়েছেন। তিনি সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যার বিষয় নিয়েও কথা বলেন। সবশেষ ঘটনাটি ঘটে গত শনিবার নিউ ইয়র্কের বাফেলোতে। সেখানে ইউসুফ এবং বাবুল নামের দুই বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর আগে ৭ এপ্রিল জাকির হোসেন খসরু নামের আরেক বাংলাদেশির ওপর হামলা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান ১০ এপ্রিল। এর পর ১২ এপ্রিল মিশিগান রাজ্যের ওয়ারেন সিটিতে নিজের বাড়িতে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান হোসেন আলী রাজি নামের এক তরুণ।
এরও আগে ২৭ মার্চ নিউ ইয়র্কে নিজের বাসায় পুলিশের গুলিতে এক নিহত হন উইন রোজারিও নামে ১৯ বছর বয়সী এক তরুণ
এসব ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বাঙালি পর পর কতজন মারা গেছে, সেদিনও দুজন বাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই।