অটোরিকশা শ্রমিকদের দু’পক্ষে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধসহ আহত ১৪

3

পেকুয়া প্রতিনিধি

কক্সবাজারের পেকুয়ায় অটোরিকশা সিএনজি শ্রমিকের দুপক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। দুই দফায় সংঘর্ষে চারজন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ ও পথচারী মহিলাসহ অন্তত ১৪জন আহত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টায় ও দুপুর আড়াইটার দিকে পেকুয়া বাজারে দুই দফা সংঘর্ষ সংগঠিত হয়। ৮/১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করেছে। এলোপাতাড়ি গুলির শব্দে এদিক-ওদিক ছুটেছে পথচারীরা। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন অনেকে। এরা হলেন পশ্চিম উজানটিয়া পাড়ার আলতাফ হোসেনের ছেলে পেকুয়া বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম (৩৫), রাহাতজানী পাড়ার বদিউল আলমের ছেলে আব্দুল কুদ্দুস মনু (৩৮), গোঁয়াখালী বটতলীয়া পাড়া এলাকার গিয়াসউদ্দিনের ছেলে নয়ন (২২), আনচার উদ্দিনের ছেলে আতিক উদ্দিন (২২), মাতবর পাড়া মৃত সিরাজ মিয়ার ছেলে নেজাম উদ্দিন(১৯), গোঁয়াখালীর মামুনুর রশিদের ছেলে কলেজ পড়ুয়া তৌহিদুল ইসলাম কায়েস (২১), ভোলাইয়াঘোনা এলাকার মৃত আবুল কাশেমের ছেলে শওকত হোসেন (২৫), রাজাখালী ইউনিয়নের মোহাম্মদ মিয়ার ছেলে জিয়াবুল (২০), পথচারী বারবাকিয়া ইউনিয়নের ফাঁশিয়াখালীর মোকতার হোসেনের ছেলে সোহেল (১৮) মোহামদ নুরুল হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ মোজাম্মেল (৩০) ও সিকদার পাড়ার শরাফত আলীর ছেলে ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ওসমান গনি (৩১)। এদিকে ছোঁড়া ইটপাটকেলে গুরুতর আহত মহিলার পরিচয় পাওয়া যায়নি। এছাড়া অপর পক্ষের আহতদের পরিচয় এখনো মেলেনি। আহতদের পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
জানাগেছে, সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক সংগঠন নিয়ে পেকুয়ায় দুটি গ্রুপের মধ্যে সম্প্রতি দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। আধিপত্য বিস্তার ও টিকিট কাউন্টার দখল বেদখল নিয়ে মুলতঃ তাদের এ বিরোধ। একটি পক্ষের নেতৃত্বে দিয়ে আসছিল নাছির উদ্দিন ও মো.বারেক। তাঁরা দীর্ঘ এক যুগ ধরে শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। সম্প্রতি মো.রফিক ও রফিকুল ইসলাম সিএনজি শ্রমিক সংগঠনকে বৈধ দাবি করে শ্রমিকদের একাংশের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে। দুই রফিকের নেতৃত্বে শ্রমিকরা গত কিছুদিন আগে উপজেলার ৯টি টিকিট কাউন্টার দখলে নেয়। দুই গ্রুপের এমন কর্মকান্ড সিএনজি শ্রমিকদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। অপর দিকে কিছু শ্রমিক রফিকদের নেতৃত্বকে স্বাগত জানায়।
এদিকে আধিপত্য ও কাউন্টার দখল বেদখলকে কেন্দ্র করে সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত দুপক্ষের মধ্যে দফায় দফায় হামলা ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এঘটনায় দুই গ্রুপের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে সভাপতি ও সম্পাদক।
একটি পক্ষের সভাপতি নাছির উদ্দীন বলেন সকালে শ্রমিকদের কল্যাণের টাকা আদায় দেখিয়ে সিএনজি সংগঠনের নাম ভাংগিয়ে রফিকের নেতৃত্বে কিছু চাঁদা দাবি করে আসছে। এনিয়ে শ্রমিকদের মাঝে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে সংঘর্ষ হয়। এসময় হামলাকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কয়েক জনকে আহত করেছে। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সিএনজি সংগঠনের পেকুয়ার সভাপতি মো.রফিক বলেন, শ্রমিক পরিচয় দিয়ে একযুগ ধরে একটি সিন্ডিকেট চাঁদাবাজিতে মেতে ছিল। তারা শ্রমিকের রক্তচুষে খেয়েছে। কিছুদিন আগে প্রকৃত শ্রমিকরা তাদের বিতাড়িত করে। গতকাল সকালে ১০-১৫ জনের অস্ত্রধারী পেকুয়া বাজারে এসে লাইনম্যানদের মারধর করে তাড়িয়ে দিয়ে দুটি কাউন্টারে টোকেন দেওয়া শুরু করে। জুমার নামাজের পরে ফের বাজারে এসে তারা ত্রাস সৃষ্টি করে। এসময় শ্রমিকরা বাঁধা দিলে তাদের উপর এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। সংঘর্ষ চলাকালে পেকুয়া বাজার ফাঁশিয়াখালী ব্রিজ এলাকায় আহমদের কুলিং কর্ণার, সেলুন দোকান ও ফাঁশিয়াখালী এলাকার ছাবের আহমদের পুত্র জয়নালেন বসতবাড়ি হামলা ভাংচুর চালায়।সন্ত্রাসীরা যাওয়ার সময় ওই বাড়ির টিনের বেড়া ভাংচুর করে। জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী জিবন আরা বেগম বলেন, পেকুয়া বাজারে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ঘটনা হয়েছে দুই পক্ষের। আমাদের কি দোষ ছিল, তারা বাড়ির টিনের গেইট ভাংচুর মাধ্যমে ঘরে প্রবেশ করে। তখন আমরা বাড়িতে ছিলাম না। পরে ঘরে এসে দেখতে পাই বাড়ির বিভিন্নস্থানে ভাংচুর করেছে। আমরা এর বিচার চাই।
এদিকে সৃষ্ট ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাজার এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া, গুলি বর্ষণের ঘটনায় প্রায় এক ঘণ্টা দোকানপাট বন্ধ ছিল। মানুষের মধ্যে আতংক ও ভীতি ছড়িয়ে পড়ে।
পেকুয়া থানার ওসি মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, খবর পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি। আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে।