গত বছরের চেয়ে এবার বাংলাদেশে ব্যবসা করা কিছুটা সহজ হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের বিচারে ব্যবসা পরিবেশের সূচকে বাংলাদেশের ৮ ধাপ অগ্রগতি হয়েছে। পাশাপাশি এবার এই সূচকে সবচেয়ে বেশি উন্নতি ঘটানো ২০ দেশের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। তবে আফগানিস্তান ছাড়া সার্কভুক্ত অন্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ এখনও পিছিয়ে রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের এ বছরের ‘গেøাবাল ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ বা সহজে ব্যবসা করার সূচকে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৮তম। গতবার ছিল যা ১৭৬তম। ব্যবসা সহজ করার সূচকে এবার শীর্ষ স্থানে আছে নিউজিল্যান্ড।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০০-এর মধ্যে বাংলাদেশের স্কোর এবার ৪৫, যা গতবছর ছিল ৪১ দশমিক ৯৭। এই উন্নতির পরও ব্যবসার পরিবেশে দক্ষিণ এশিয়ায় আফগানিস্তান ছাড়া সব দেশের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের এবারের অগ্রগতির কারণ হিসেবে বিশ্বব্যাংক বলছে, ব্যবসা শুরু করতে আগের চেয়ে খরচ কমেছে বাংলাদেশে। রাজধানী ঢাকাসহ শহর এলাকায় বিদ্যুৎপ্রাপ্তি সহজ হয়েছে।
মূলত, একটি দেশের অর্থ-বাণিজ্যের পরিবেশ ১০টি মাপকাঠিতে পরিমাপ করে এই সূচক তৈরি করা হয়। বাংলাদেশের পরিবেশ নির্ধারণে ব্যবহার করা হয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রামের তথ্য। ১০টি মাপকাঠি হলো— নতুন ব্যবসা শুরু করা, অবকাঠামো নির্মাণের অনুমতি পাওয়া, বিদ্যুৎ সুবিধা, সম্পত্তির নিবন্ধন, ঋণ পাওয়ার সুযোগ, সংখ্যালঘু বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা, কর পরিশোধ, বৈদেশিক বাণিজ্য, চুক্তি বাস্তবায়ন এবং দেউলিয়া হওয়া ব্যবসার উন্নয়ন।
বিশ্ব ব্যাংক বলছে, ১০ মাপকাঠির মধ্যে ৬টিতেই বাংলাদেশের স্কোর গতবারের চেয়ে বেড়েছে। এর মধ্যে ঋণ পাওয়ার সুযোগে স্কোর বেড়েছে ২০ শতাংশ পয়েন্ট। ৪টি মাপকাঠিতে এবারের স্কোর গতবারের সমান। শুধু অবনতি হয়েছে দেউলিয়া হওয়া ব্যবসার উন্নয়ন ঘটানোর ক্ষেত্রে। ব্যবসা শুরুর প্রক্রিয়া সহজ করার পাশাপাশি বিদ্যুৎ সংযোগ ও ঋণপ্রাপ্তি সহজ করার মাধ্যমে বাংলাদেশ সহজে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন ফি কমানো হয়েছে এবং ডিজিটাল সনদে মাশুল উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঢাকায় নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের ফি অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ও প্রধান বৈদ্যুতিক পরিদর্শকের কার্যালয় থেকে লাইসেন্স পাওয়ার সময়ও কমানো হয়েছে। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
ব্যবসা সহজ করার সূচকে এবারে শীর্ষ স্থানে আছে নিউজিল্যান্ড। সূচকে তাদের স্কোর ৮৬.৮। দ্বিতীয় স্থানে আছে সিঙ্গাপুর এবং তৃতীয়তে হংকং। শীর্ষ ১০-এ থাকা অন্য দেশগুলো হলো— ডেনমার্ক, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, জর্জিয়া, যুক্তরাজ্য, নরওয়ে ও সুইডেন। গতবারের মতো এবারও সোমালিয়ার পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। আফ্রিকার এই দেশটির স্কোর মাত্র ২০।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশের ৮ ধাপ অগ্রগতি হলেও ভারতের ১৪ ধাপ অগ্রগতি হয়েছে। দেশটি দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষ স্থানে আছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার করায় ভারত ৭১ স্কোর নিয়ে উঠে এসেছে ৬৩তম অবস্থানে। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ শুধু আফগানিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে। ৪৪.১ স্কোর নিয়ে আফগানিস্তান সূচকের ১৭৩ নম্বরে রয়েছে। এবার দেশটির অবনতি হয়েছে ৬ ধাপ। এছাড়া ভুটান ৮৯তম (স্কোর ৬৬), নেপাল ৯৪তম (৬৩.২), শ্রীলঙ্কা ৯৯তম (৬১.৮), পাকিস্তান ১০৮তম (৬১), মালদ্বীপ ১৪৭তম (৫৩.৩) এবং মিয়ানমার ১৬৫তম (৪৬.৮) অবস্থানে রয়েছে।