৬ মাসে মেরামত ১০ ইঞ্জিন

4

নিজস্ব প্রতিবেদক

রেলওয়ের পাহাড়তলী ডিজেল ওয়ার্কশপে বছরে ৩৬টি লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) মেরামতের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি অর্থ বছরের শেষ হওয়া ছয় মাসে ১০টি ইঞ্জিন মেরামত সম্ভব হয়েছে। অথচ প্রতি মাসে তিনটি করে ১৮টি ইঞ্জিন মেরামতের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। লোকোমোটিভ না পাওয়া, জনবল সংকট ও মেরামতে প্রয়োজনীয় মালামাল যথাসময়ে না পাওয়ার মতো তিনটি কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পিছিয়ে পড়ছে। তবে প্রয়োজনের তাগিদে বিশেষ মেরামত করে দুর্ঘটনা ও বিকল হওয়া ইঞ্জিন মেরামত করে রেলসেবা স্বাভাবিক রাখতে বাধ্য হচ্ছে রেলওয়ে।
পাহাড়তলী ডিজেল ওয়ার্কশপের কর্মব্যবস্থাপক এতেশাম মো. শফিক পূর্বদেশকে বলেন, ‘লক্ষ্যমাত্রা বলতে আমাদের এফ শিডিউল জি শিডিউল মিলে দুটি হেভি শিডিউল হয়। প্রতি দেড় বছর অন্তরে এ শিডিউল দেয়া হয়। দুই শিডিউল মিলিয়ে বছরে ৩৬টি লোকোমোটিভ প্রস্তুত করি। প্রতিমাসে তিনটি করে এই লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ছয় মাসে আমরা ১০টি ইঞ্জিন মেরামত করেছি। লক্ষ্যমাত্রার বাইরেও দুর্ঘটনা কিংবা বিকল হওয়া ইঞ্জিনগুলো বিশেষ মেরামত ঠিক করা হয়। মূলত তিনটি লোকোমোটিভ না পাওয়া, জনবল সংকট ও মেরামতে প্রয়োজনীয় মালামাল যথাসময়ে না পাওয়ার কারণেই আমাদের হিমশিম খেতে হয়। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেই আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সহজ হয়।’
রেলওয়ে ওয়ার্কশপ সূত্র জানায়, লোকোমোটিভ সময়মতো না পেলে যথাসময়ে ইঞ্জিন মেরামত করে সরবরাহ করা যায় না। মঞ্জুরিকৃত জনবলের তিনভাগের একভাগ নিয়েই চলছে ওয়ার্কশপের কার্যক্রম। এছাড়াও লোকোমোটিভে ৩০ হাজার ধরনের মালামাল প্রয়োজন হয়। যা সরঞ্জাম দপ্তর (সিসিএস) দপ্তর থেকে সরবরাহ করা হয়। ওয়ার্কশপ থেকে নিয়মিত চাহিদাপত্র দিলেও বিভিন্ন কারণে সরঞ্জাম দপ্তর থেকে যথাসময়ে মালামাল আসে না। ইঞ্জিনে নতুন পার্টস লাগানোর পরিবর্তে রিকন্ডিশন করে ইঞ্জিন চালু রাখা হচ্ছে। নতুন পার্টসের পরিবর্তে রিকন্ডিশন করে ইঞ্জিন রেডি করলে লাইফ টাইম স্বাভাবিকভাবেই থাকে না। যে কারণে চলতিপথে প্রতিনিয়ত ইঞ্জিন বিকলের মতো ঘটনা ঘটে। এখন ইঞ্জিনের অধিকাংশ মালামাল রিকন্ডিশন করা হচ্ছে। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের ছয় মাসে ১০টি ইঞ্জিন প্রস্তুত আছে। মিটারগেজ আন্তঃনগর ট্রেন চালাতে ২৯০০ ও ৩০০০ সিরিজেই ইঞ্জিন চালানো হয়। দুই সিরিজের মধ্যে ২৯০০ ইঞ্জিন আছে ৪০টি ও ৩০০০ আছে ৩০টি। এরমধ্যে আটটি ইঞ্জিন রিপেয়ার ও মেনটেনেন্সের জন্য ওয়ার্কশপে আছে।
রেল কর্মকর্তারা বলছেন, পূর্বাঞ্চলে অনেক বেশি ইঞ্জিন রিপেয়ার করতে হচ্ছে। পর্যাপ্ত ইঞ্জিন অতিরিক্ত রাখতেই বেশি ইঞ্জিন রিপেয়ার করতে হচ্ছে। লোকোমোটিভ যা আছে তার ২০ শতাংশ অতিরিক্ত রেডি রাখতে হয়। নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে মেনটেইনেন্স হয়। বর্তমান সময়ে ২০ শতাংশ অতিরিক্ত রাখা সম্ভব হচ্ছে না। কত ইঞ্জিন আছে তা হিসেব না করে নতুন নতুন ট্রেন চালু হচ্ছে। নিয়মিত মেনটেনেন্সের জন্য লোকো না পাওয়ায় ২০শতাংশ অতিরিক্ত ইঞ্জিন প্রস্তুত না রাখার প্রধান কারণ। এরমধ্যে শীত মৌসুমে দুর্ঘটনা বেড়ে যায়। ভয়াবহ দুর্ঘটনায় আসা লোকোগুলো দ্রæত রিপেয়ার করতে হয়। যে কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মতো শিডিউলে পিছিয়ে যেতে হচ্ছে। পূর্বাঞ্চলে বর্তমানে ৫২টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। আন্তঃনগর ট্রেন জোড়া হিসেবে প্রতি জোড়ায় দুটি করে লোকোমোটিভ যায়। আন্তঃনগর ট্রেনে ২৯০০ ও ৩০০০ সিরিজের ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়। এর বাইরে মালবাহীতে ২৬০০ ও ৩০০০ সিরিজের ইঞ্জিন ব্যবহার হয়।
নাম প্রকাশ না করে ওয়ার্কশপে কর্মরত এক শ্রমিক বলেন, ‘তিন জন শ্রমিকের কাজ করতে হচ্ছে একজনকে। প্রতিদিনই কাজের চাপ বাড়ছে। সে তুলনায় সুযোগ সুবিধা অনেক কম। ইঞ্জিনে যেসব মালামাল লাগে তা প্রয়োজনের সময় পাওয়া যায় না। যারা মালামাল সরবরাহ করে তারাই নির্ধারিত সময়ে মালামাল দিতে পারে না। এরপরেও আমরা যেসব মালামাল নষ্ট হচ্ছে সেগুলো মেরামত করেই দ্রæত ইঞ্জিন চালু করছি। তবে মালামাল না থাকলে পুরোপুরি ইঞ্জিন চালু করা সম্ভব হয় না।’
বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম বিভাগের আহবায়ক মো. মজিবুর রহমান ভুঁইয়া পূর্বদেশকে বলেন, ‘চলার পথে ইঞ্জিন বিকলের ঘটনা নিয়মিত ঘটছে। তিন হাজার সিরিজের ইঞ্জিন নিয়ে যাত্রা করতেই ট্রেন চালকরা আতঙ্কে থাকে। আতঙ্কের মধ্যেই হাজার যাত্রী নিয়ে ট্রেন চালিয়ে যাচ্ছে চালকরা। যে ইঞ্জিনগুলো মেরামত করা হচ্ছে সেগুলোর লাইফ টাইম কম। অথচ আমরা একেকটি ইঞ্জিন ৩০ বছর পর্যন্ত চালিয়েছি।’