৬ দাবিতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের অবরোধ

1

নিজস্ব প্রতিবেদক

নগরীর দুই নম্বর গেট মোড়ে সড়ক ও ষোলশহর রেলপথ অবরোধ করেছেন চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ প্রমোশন কোটা বাতিলসহ ৬ দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার তারা এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে শিক্ষার্থীরা সড়ক ও রেললাইন ছাড়েন।
শিক্ষার্থীরা জানান, ক্রাফট ইন্সট্রাক্টররা কারিগরি ব্যাকগ্রাউন্ডের না, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের ল্যাবের সহকারী কর্মচারী। তারা মূলত অষ্টম শ্রেণি কিংবা এসএসসি পাস। তাদের ডিপ্লোমার শিক্ষক হওয়ার কোনো যোগ্যতা নেই। তারা যদি ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক হন, তাহলে ডিপ্লোমা ছাত্ররা কতটুকু শিখবে। জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর শুধুমাত্র ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্টদের জন্য। জেলা প্রশাসকের কাছে এবং কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধ্যক্ষের মাধ্যমে তারা দরখাস্ত দেবেন বলে জানিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবিগুলো হলো জুনিয়র ইনট্রাক্টর পদে শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধ্যতামূলক ডিপ্লোমা ডিগ্রি থাকতে হবে, ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরসহ সকল পদে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ দিতে হবে, পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের ছাত্রদের জন্য সকল বিভাগীয় শহরে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় অতি শিগগিরই স্থাপন করতে হবে, কারিগরি শিক্ষা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীর চাকরির আবেদন বাস্তবায়ন করতে হবে, ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য প্রাইভেট সেক্টরে সর্বনিম্ন বেতন স্কেল নির্ধারণ করে দিতে হবে এবং জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ কোটা অনতিবিলম্বে বিলুপ্ত করতে হবে।
আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীরা ‘কোটা না মেধা,মেধা মেধা’, ‘জ্বালোরে জ্বালো, আগুন জ্বালো আগুন জ্বালো’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘মামা এখন মাস্টার, মামার বাড়ির আবদার?’ এমন নানা স্লোগান দিতে দেখা যায়। একপর্যায়ে একজন শিক্ষক হ্যান্ডমাইক নিয়ে আন্দোলন বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমরা গতকাল (বুধবার) মিটিং করেছি ডিসি স্যারের সাথে। রায় পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা আপনাদের দাবি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করবো।’ কিন্তু শিক্ষার্থীরা এসময় ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকেন।
আন্দোলনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে শিক্ষার্থীরা বলেন, যাদের দায়িত্ব ছিল ল্যাবের তালা খোলা আর বন্ধ করা, তারা এখন স্যার হবে। যাদের আমরা মামা ডাকতাম। একজন নার্স যেমন ডাক্তার হতে পারে না, তেমনি একজন অষ্টম শ্রেণি পাস ছাত্র ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের শিক্ষক হতে পারে না। চব্বিশের আন্দোলনের পরেও কিভাবে ৩০ শতাংশ কোটা থাকে? যদি এই কোটা বাতিল না হয় আমরা আবারও দেখিয়ে দিবো কিভাবে বাতিল করতে হয়।
এদিকে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের ফলে মুরাদপুর-বহদ্দারহাটমুখী সড়ক এবং বহদ্দারহাট-মুরাদপুর থেকে জিইসিমুখী সড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন কর্মজীবী এবং দূর-দূরান্তের যাত্রীরা। যানজট ছড়িয়েছে আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতেও। রোজাদারদের অনেককেই বিরক্তির ছাপ মুখে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে রওয়ানা দিতে দেখা গেছে। প্রসঙ্গত, জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর হল একটি সরকারি পদ। যেখানে মূলত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগ দেওয়া হয়। এই পদে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তি বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে শিক্ষাদান করেন। সম্প্রতি হাইকোর্টের একটি রায়ের মাধ্যমে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ পদোন্নতি দিয়ে জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর করা হচ্ছে। যেখানে তারা ১০ম গ্রেডে চাকরি পাবেন। কিন্তু এতে ৮ম শ্রেণি, এসএসসি (ভোকেশনাল) ও এইচএসসি পাস ব্যক্তিরাও এই সুযোগ পাচ্ছেন বলে দাবি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের।