৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান : স্বাধীনতকা বজ্রনির্ঘোষ

1

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

গণঅভ্যুত্থানের কথা শুনতে শুনতে প্রকৃত গণঅভ্যুত্থানের দিন এসে গেল। আজ থেকে ৫৬ বছর আগে এ দেশে প্রথম গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিলো। সেটাই ছিলো প্রথম এবং সেই ধরণের এক গণবিস্ফোরণ, যার ধাক্কা ও ধামাকায় পাকিস্তানের লৌহমানব তথাকথিত আইয়ুব খানের গদি বা গণেশ উল্টে গিয়েছিলো। ৯০-তেও একটি গণঅভ্যুত্থান হয়েছিলো, সেই গণঅভ্যুত্থানও আরেকজন একনায়কের তখ্তে তাউস উড়ে গিয়েছিলো। এই একনায়ক বাঙালি একনায়ক; সাদা, কালো, বাদামী, পীত-গাত্রবর্ণ যাই হোক না কেন, স্বভাবে, আচরণে, মর্মে তারা একনায়কই হয়েছেন। এখানে আইয়ুব, ইয়াহিয়া, ফ্রাঙ্কো, ইদি আমিনে কোন তফাৎ নেই। বলতে ভুলে গেছি আইয়ুবের পতনের পর যিনি পাকিস্তানের ক্ষমতায় আরোহন করেছিলেন, তিনিও একজন একনায়ক। ফৌজি শাসক থেকে বেসামরিক শাসকে রূপান্তরিত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পর কিছুদিন বিচারপতি সাত্তার প্রক্সি দিলেও লেফ্ট রাইট করতে করতে দু’বছর পর ক্ষমতার রজ্জু হাতে নিয়ে টিভির পর্দায় দেখা দেন জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। মনে পড়ে বিচারপতি মালিক রুস্তম কায়ানির কথা, যিনি পাকিস্তানে বারবার সামরিক অভ্যুত্থান এবং আইয়ুব খানকে কোন যুদ্ধ জয় না করে ফিল্ড মার্শাল উপাধি গ্রহণ করতে দেখে বলেছিলেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কোন যুদ্ধ জয় করতে না পারলেও দু’বার নিজের দেশ এবং জনগণকে জয় করার কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছে। একবার ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে ৭ অক্টোবর মীর জাফরের ১০ম বংশধর জেনারেল ইস্কান্দর মির্জার নেতৃত্বে আইয়ুব খান, আজম খানরা আওয়ামী লীগের নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সরকারকে বরখাস্ত করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিলেন, আরেকবার ২৭ অক্টোবর অন্য জেনারেলদের নিয়ে আইয়ুব খান ইস্কান্দর মির্জার হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে বিলাতে হোটেলে ডিস ওয়াশ করতে পাঠিয়েছিলেন। তৃতীয়বার আইয়ুবের পতনের পর শান্তিপূর্ণভাবে পতনের পর ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা দখল করেছিলো। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে এক একনায়কে হঠিয়ে আরেক একনায়কই ক্ষমতায় বসে। ২০২৪ খ্রিস্টাব্দের ৫ আগস্ট একটি অভ্যুত্থান হয়েছেন বলে বলা হচ্ছে। সে অভ্যুত্থানের পর যারা ক্ষমতাসীন হয়েছে, কোন কোন আচরণের জন্য তাদেরকে একনায়ক বলা বোধ হয় সমীচীন নয়।
এ দেশের সমস্ত অভ্যুত্থান ছাত্রসমাজের ক্রেডিটেই থাকবে। ৫২ এর ২১ ফেব্রæয়ারির ছাত্র বিস্ফোরণকে অভ্যুত্থান বলা না হলেও সেটাই এদেশের প্রথম ছাত্র অভ্যুত্থান। ক্ষমতাসীন দলের প্রতিপক্ষ হিসেবে আবিভর্‚ত হওয়ার দুরসাহসী স্পর্ধাই ছাত্র সমাজই রাজপথে অটল পাহাড়ের মত দাড়িয়ে গিয়েছিলো। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে আইয়ুবে মার্শাল ল ওঠে যাওয়ার পর ছাত্রসমাজই প্রথম প্রচন্ড বিক্ষোভে রাজপথ প্রকম্পিত করে তুলেছিলো। সেও এক ধরনের অভ্যুত্থান ছিলো। কিন্তু তার অভ্যুত্থান নামকরণ হয়নি।
৫২, ৬২, ৬৯ ও ৯০-এ অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ছাত্ররা নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নে ফিরে গিয়েছিলো। ৫ তারিখের অভ্যুত্থানকারীরা আর তাদের ঘরে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে গেছে বলে মনে হয় না। ৫২, ৬২, ৬৯ ও ৯০-এরা অভ্যুত্থানকারীরা রাষ্ট্র ক্ষমতার ভাগ চায়নি। কিন্তু এবার বোধ হয় তার ব্যতিক্রম হলো।
এবার ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাসে দৃষ্টি নিবন্ধ করতে চাই। ১৯৬৮ সালের নভেম্বর থেকেই গণআন্দোলনভিত্তিক সংগ্রাম শুরু হয়ে যায়। নভেম্বরের ৩ তারিখে ঢাকার পল্টন ময়দানে এক বিশাল জনসভায় বক্তৃতা করেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। তিনি সরকারের তীব্র সমালোচনা করে এক উত্তেজক ভাষণে জনগণকে সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেন। মওলানার অগ্নিবর্ষী ভাষণে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠলো। দমননীতির প্রতিবাদে রাজপথে নেমে আসেন। প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুনসহ সেই মিছিলে শেষ পর্যন্ত পথচারীরাও স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।
২৬ নভেম্বর পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব মুর্শেদ জনগণের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বিবৃতি প্রকাশের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ২৯ নভেম্বর পশ্চিম পাকিস্তানের ছাত্র-জনতার উপর নির্যাতনের প্রতিবাদে ঢাকাসহ প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র সমাজের বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
১ ডিসেম্বর সাংবাদিকরা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার দাবিতে মিছিল করেন এবং গভর্নর হাউসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। মিছিল শেষে এক সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং সভায় বিভিন্ন প্রস্তাব গৃহীত হয়। যেমন, সংবাদপত্রের উপর আরোপিত সকল বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নাগরিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, দেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক সাংবাদিকসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি, নিউনেশন প্রিন্টিং প্রেস বাজেয়াপ্তকরণের নির্দেশ প্রত্যাহার ইত্যাদি। এছাড়া সভায় পাকিস্তান প্রতিরক্ষা আইনে সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নিন্দা জানানো হয়।
সরকারি দমননীতির প্রতিবাদে পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের পূর্বাঞ্চল শাখা ৫ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত এক কর্মসূচি গ্রহণ করে। তারা পথসভা, কালো পতাকা, পোস্টারসহ মিছিল ও জনসভা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ৬ ডিসেম্বর দেশকে নির্যাতন ও নিপীড়নের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহর কাছে মোনাজাত করার কর্মসূচি গৃহীত হয়। এই সময় লাহোরে অনুষ্ঠিত এক সভায় পাকিস্তান মুসলিম লীগ কার্যনির্বাহী কমিটি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার আলোকে কর্মসূচি গ্রহণ করে।
পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে ২ ডিসেম্বর অটোরিকশাচালকরা ধর্মঘট আহবান করে। ভাসানী ন্যাপ এই ধর্মঘটে সমর্থন দেয়। ৬ ডিসেম্বর জুলুমবিরোধী দিবস পালনের জন্য ভাসানী ন্যাপ, পূর্ব পাকিস্তান কৃষক সমিতি ও পূর্ব পাকিস্তান শ্রমিক ফেডারেশনের যৌথ উদ্যোগে পল্টন ময়দানে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তৃতা করেন মওলানা ভাসানী। তিনি পূর্ব পাকিস্তানের আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান। তিনি আরো বলেন, ‘এই দাবির প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন চলিতে থাকিলে পূর্ব পাকিস্তানবাসী বিচ্ছিন্ন হইয়া স্বাধীন পূর্ববাংলা গঠন করে।’ এই সভায় ধর্মঘটী অটোরিকশা ড্রাইভাররা ৭ ডিসেম্বর হরতাল ঘোষণার জন্য দাবি জানান। জনসভায় মওলানা ভাসানী ঘোষণা করেছিলেন ১২ ডিসেম্বর হরতালের কথা। কিন্তু ড্রাইভারদের দাবির মুখে ৭ তারিখ হরতালের কর্মসূচি ঘোষিত হয়। ৭ ডিসেম্বর ঢাকা শহরে স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে পূর্ণ হরতাল পালিত হয়। সরকার আগেই ১৪৪ ধারা জারি করেছিল। কিন্তু সকাল থেকেই জনতা মারমুখী হয়ে ওঠে। নীলক্ষেতের কাছে পুলিশ প্রথমে লাঠিচার্জ করে। জনতা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। নিহত হয় দু’জন। বেলা প্রায় ১১.৪০ মিনিটের সময় গুলিস্তানের কাছে গুলিবর্ষণ হলে নিহত হয় একজন বালক। দুপুর সোয়া একটার সময় সেকেন্ড গেটের সামনে এবং বিকেল পাঁচটায় নবাবপুর রেলক্রসিংয়ের কাছে বিক্ষুব্ধ জনতার উপর গুলি বর্ষিত হয়। ফলে ৩ জন নিহত এবং ৩০ জনের মত আহত হন। পুলিশ তিন শতাধিক লোককে গ্রেপ্তার করে। এই দিন জাতীয় পরিষদের অধিবেশন চলাকালে বিরোধীদলের পক্ষ থেকে পুলিশের নির্যাতনের প্রতিবাদে সভার কাজ কয়েক ঘণ্টার জন্য মুলতবি রাখার প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। সরকার পক্ষের সদস্যরা আপত্তি জানালে তুমুল উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। শেষ পর্যন্ত বিরোধীদলীয় ও স্বতন্ত্র সদস্যরা পরিষদ অধিবেশন বর্জন করে এবং মিছিলসহকারে আহতদের দেখার জন্য হাসপাতালে যান।
৭ ডিসেম্বরের গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে বিবৃতি দেন বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব মুর্শেদ। ১১ ডিসেম্বর রাওয়ালপিন্ডিতে এক সাংবাদিকের উপর আক্রমণের প্রতিবাদে ঢাকার সাংবাদিকরা ধর্মঘট পালন করেন। এ উপলক্ষে প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন শহীদুল্লা কায়সার। এর আগে ৯ ডিসেম্বর দিনাজপুরে এক জনসভায় প্রেসিডেন্ট আইয়ুব ক্রুব্ধ উত্তেজিত ভাষায় ঘোষণা করেন, ‘বিরোধী দলের বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ বন্ধ করতেই হবে। কেননা সরকার দেশকে বিভক্ত হতে দিতে পারে না।’ ১৩ ডিসেম্বর ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সারাদেশে হরতাল পালিত হয়। আদমজি-টঙ্গি এলাকা থেকে শ্রমিকরা স্রোতের মত শহরে আসতে থাকে। স্বতঃস্ফ‚র্ত জঙ্গি সে মিছিল শহরের রাজপথ প্রদক্ষিণ করে। পরিস্থিতি এমন, কাউকে ডাকতে হয় না। যেন সকলে বুঝে গেছে কার কী কর্তব্য! পুলিশ শ্রমিকদের মিছিলের উপর লাঠিচার্জ করে। অসংখ্য গ্রেপ্তার হয়। নারায়ণগঞ্জেও একই অবস্থা। লাঠিচার্জ আর টিয়ারগ্যাস, প্রতিবাদ আর প্রতিরোধ। এই দিন চট্টগ্রাম শহরেও ইতিহাসের বৃহত্তম মিছিল বের হয়। ১৭ ডিসেম্বর সম্মিলিত বিরোধী দলের কর্মী সভায় গুলিবর্ষণের বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করা হয়।
২৯ ডিসেম্বর থেকে মওলানা ভাসানীর ঘেরাও আন্দোলন শুরু হয়। এই পর্বের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় পাবনায়। পাবনা টাউন হল ময়দানে জনসভায় ভাষণদানের পর তাঁর নেতৃত্বে বিশাল মিছিল পাবনার ডেপুটি কমিশনারের বাড়ি ঘেরাও করে। শুরু হয় গণআন্দোলনের প্রবল জোয়ার।
১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি ডাকসু কার্যালয়ে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন গ্রুপ) ও পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া গ্রুপ) এবং জাতীয় ছাত্র ফেডারেশনের এক অংশ সংবাদ সম্মেলন আহবান করে ১১ দফা কর্মসূচি পেশ করে। শুরু হয় সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কর্মসূচি।
৮ জানুয়ারি ৮ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে সম্মিলিত বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদ বা ‘ডাক’ (Democratic Action Committee) গঠিত হয়। এই দিন সন্ধ্যায় শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ৮টি বিরোধী দলের ঐক্যফ্রন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে এক ঘোষণাপত্র প্রকাশ করে।
এই ঘোষণাপত্রে বলা হয়,
‘আমরা নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ, জমিয়াতুল উলেমা-ই-ইসলাম, পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও পিডিএম-এর অঙ্গদল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ, পাকিস্তান মুসলিম লীগ, পাকিস্তান জাতীয় ১২ জানুয়ারি মওলানা ভাসানী দেশের পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য সংবাদ সম্মেলন আহবান করেন। তিনি বলেন, বর্তমান শাসনতন্ত্রের ভিত্তিতে যাতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হয় সে জন্য দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ১৪ জানুয়ারি হাতিরদিয়ার জনসভায় ভাসানী বলেন, জনসাধারণের ভোটাধিকার, লাহোর প্রস্তাবে উল্লেখিত পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ও অর্থনৈতিক অধিকার আদায়ের জন্য প্রয়োজন হলে খাজনা-ট্যাক্স দেওয়া বন্ধ করব। এর আগে যেদিন ‘ডাক’ গঠিত হয় সেদিনই আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটি এক প্রস্তাবে আগামী সাধারণ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। অপর প্রস্তাবে দলীয় সদস্যদের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। ১২ জানুয়ারি ‘ডাক’ প্রাদেশিক সমন্বয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ১৭ তারিখে ‘ডাক’ এর জমায়েত অনুষ্ঠিত হয় বায়তুল মোকাররমে। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের জমায়েত হয় বিশ্ববিদ্যালয় কলাভবনের বটতলায়। সরকার আগেই ১৪৪ ধারা জারি করেছিল। ছাত্ররা ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে মিছিল বের করলে শুরু হয় পুলিশের নির্যাতন-লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও রঙিন পানি ছিটানো। পরদিন এর প্রতিবাদে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট আহবান করে। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি চলে। শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছাত্র পুলিশের খন্ডযুদ্ধ। এই যুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে ইপিআর বাহিনী তলব করা হয়। এত কিছুর পরও ছাত্ররা মিছিল বের করে। সন্ধ্যায় ইপিআর বাহিনী বিশ্ববিদ্যালয় হলে হলে হামলা চালায়। এই খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তান পরিষদে বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সদস্যরা পুলিশের জুলুমের প্রতিবাদে একযোগে পরিষদ কক্ষ ত্যাগ করেন ১৯ জানুয়ারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে বেশ কিছু ছাত্র আহত হন এবং ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২০ জানুয়ারি আন্দোলন তুঙ্গ স্পর্শ করে।এদিনের ঘটনায় বদলে যায় আন্দোলনের চরিত্র এবং আন্দোলন দ্রæত গণঅভ্যুত্থানের রূপ পরিগ্রহ করতে থাকে। এদিন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ পুলিশ ও ইপিআর-এর জুলুমের প্রতিবাদে এবং ১১ দফা দাবিতে ঢাকাসহ প্রদেশের সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পূর্ণ ধর্মঘট পালন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় যে ছাত্রসভা আহবান করা হয়, সেখানে হাজার হাজার ছাত্র লাঠি নিয়ে উপস্থিত হয়। শহীদ মিনারের সামনে দিয়ে গিয়ে মিছিল রশীদ বিল্ডিং অতিক্রম করার সময় পুলিশ বাধা দেয় এবং অতর্কিতে গুলি ছোঁড়ে। ঘটনাস্থলেই ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন গ্রুপ) অন্যতম নেতা আসাদুজ্জামান মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে মেডিক্যাল কলেজ ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। মুহূর্তে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে অগ্নিতে ঘৃতাহুতির কজে করে। প্রচন্ড গর্জনে ফেটে পড়ে গণবিক্ষোভ; ছাত্ররা শহীদ আসাদের লাশসহ মিছিল করে শহর প্রদক্ষিণ করতে চায়, কিন্তু পারে না। পুলিশ ও ইপিআর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ঘিরে রাখে। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তিনদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে। কর্মসূচিতে ছিল ২১ জানুয়ারি হরতাল, ২২ জানুয়ারি শোক মিছিল এবং ২৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় মশাল মিছিল। পরে কালো পতাকাসহ বিশাল শোকমিছিল নগ্নপদে শহর প্রদক্ষিণ করে।
২১ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে শহীদ আসাদের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার পরে আসাদের রক্তমাখা সার্ট নিয়ে লক্ষ লোকের মিছিল ১৪৪ ধারা অমান্য করে বের হয়। মিছিলে অসংখ্য কালো পতাকা ও রক্ত-আঁকা ফেস্টুনও বহন করা হয়। মিছিলে ছাত্র-ছাত্রী, কিশোর, মহিলা, শ্রমিক, কর্মচারী, ব্যবসায়ী, দোকানদার, আইনজীবী, রাজনৈতিক নেতা, কর্মী, পরিষদ সদস্য, শিল্পী-সাহিত্যিকসহ সকল শ্রেণির নাগরিক যোগদান করেন। স্মরণকালে এতবড় গণমিছিল ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়নি।
এদিন গুলিবর্ষণে ৬ জন নিহত ও ১৪ জন আহত হয়। সন্ধ্যায় ঘোষণা দিয়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও খুলনায় সান্ধ্য আইনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। ২৩ জানুয়ারি বৃহত্তম মশাল মিছিল বের হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে, শেষ হয় শহীদ মিনারে। ২৪ জানুয়ারি হরতাল পালিত হবে বলে ঘোষণা করা হয়।
২৪ তারিখে ঢাকা শহরে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ ঘর্টে।এ কারণে এ দিনটিকে পরবর্তী সময়ে ‘গণঅভ্যুত্থান’ দিবস বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। শিশু, বৃদ্ধ, রোগী ছাড়া কোনো মানুষ সম্ভবত এদিন ঘরে ছিলো না, আছড়ে পড়েছিলো রাজপথে। পুলিশ, ইপিআর কুলোতে পারে না। গুলিবর্ষণ করে সেনাবাহিনী। সেক্রেটারিয়েটের সামনে প্রথমে মৃত্যুবরণ করেন রুস্তম। পরবর্তী পর্যায়ের গুলিতে নিহত হন নবকুমার ইনস্টিটিউটের দশম শ্রেণির ছাত্র মতিউর। সমগ্র নগরী বিক্ষোভে কাঁপে। দুপুরে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় পল্টন ময়দানে। সেখান থেকে মিছিল এসে জমায়েত হয় ইকবাল হলের মাঠে। এই জমায়েতে বক্তৃতাকালে শহীদ মতিউরের পিতা বলেন, ‘এক মতিউরকে হারিয়ে আজ আমি হাজার মতিউরকে পেয়েছি।’ সে তারিখে সেনাবাহিনী আদমজীনগরে এবং নারায়ণগঞ্জে গুলিবর্ষণ করে। খুলনার দৌলতপুর ও খালিশপুর এলাকায় গুলিবর্ষণ করলে তিনজন নিহত ও বহু আহত হয়। সন্ধ্যায় ঢাকা শহরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে সেনাবাহিনী তলব করা হয় ও সান্ধ্য আইনের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়।
২৫ জানুয়ারি ঢাকায় কারফিউর মেয়াদ আরও ২৪ ঘণ্টা বাড়ানো হয়। ২৬ জানুয়ারি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়ক অবরোধের সময় পুলিশের গুলিতে ৪ জন নিহত ও আহত হন দশজন। ২৭ জানুয়ারি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে আসাদ হত্যা ও দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নিয়ে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। স্পিকার বিরোধী দলের ৫ জন সদস্যকে বহিষ্কার করেন।
ঢাকায় গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে পশ্চিম পাকিস্তানে ও গণবিক্ষোভ শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ২৭ জানুয়ারি করাচি ও লাহোরে সেনাবাহিনী তলব করা হয়। ২৯ জানুয়ারি গুজরানওয়ালায় সেনাবাহিনী তলব করা হয়। সেখানে গুলিবর্ষণে ৩ জন নিহত হয়। নিরস্ত্র জনতা গুলির মুখে থামে না, প্রতিবাদ করে দুর্বার হয়ে ওঠে। জনতার কাছে তথাকথিত লৌহমানব আইয়ুবকে মাথা নোয়াতে হয়। ২৮ জানুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে জবানবন্দি প্রদান করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি পরিষ্কার ভাষায় বলেন, ‘বর্তমান মামলা…নিষ্পেষণ ও নির্যাতননীতির পরিণতি ছাড়া আর কিছুই নহে।’ দীর্ঘ জবানবন্দিতে তিনি দেশের পুরো পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন।
১ ফেব্রæয়ারি আইয়ুব খান এক বেতার ভাষণ দেন। তাতে তিনি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দেন । সঙ্গে সঙ্গে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দ এবং ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ জানিয়ে দেয়, নেতৃবৃন্দকে জেলে রেখে কোনো আলাপ-আলোচনা হতে পারে না। বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব মুর্শেদ এক বিবৃতিতে আলোচনা বৈঠকের আগে মুজিব-ভুট্টো – ওয়ালি খানসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি দাবি করেন। আইয়ুব খান ১৭ ফেব্রæয়ারি রাওয়ালপিÐিতে এই আলোচনা অনুষ্ঠানের কথা জানান। সেই অনুযায়ী সকল রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
৬ ফেব্রæয়ারি কালো দিবস পালন করার ঘোষণা দেয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। ওই তারিখে আইয়ুব খান লিখিতভাবে বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব প্রদান করেন। একইসঙ্গে সরকারি মুসলিম লীগের ওয়ার্কিং কমিটির কাউন্সিল অধিবেশনে যোগ দিতে ৬ তারিখে তিনি ঢাকায় আসেন। প্রচন্ড বিরূপ পরিবেশ তখন ঢাকা শহরকে থমথমে করে রাখে। বিভিন্ন জায়গায় কালো পতাকা ওড়ানো হয়। ‘আইয়ুব ফিরে যাও’ পোস্টারে ছেয়ে যায় শহরের সকল স্থান। ছাত্রনেতাদের একটাই কথা, শেখ মুজিবসহ রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি না দিলে কোনো আলোচনায় বসা যাবে না। ৬ ফেব্রæয়ারি শেষবারের মত পূর্ব পাকিস্তানে আসেন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব। উদ্দেশ্য, পরিস্থিতি পর্যালোচনা। বিমানবন্দরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। পরদিন সম্মেলনে দেশরক্ষা আইন ও অর্ডিন্যান্সের প্রয়োগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়। ৮ ফেব্রæয়ারি দৈনিক ইত্তেফাকের ছাপাখানা নিউনেশন প্রিন্টিং প্রেসের উপর থেকে বাজেয়াপ্তকরণের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়।
সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ৯ ফেব্রুয়ারি ‘শপথ দিবস’ পালন করে। পল্টন ময়দানে এক বিশাল সমাবেশে তারা জীবনের বিনিময়ে ১১ দফা দাবি প্রতিষ্ঠা করার সংকল্প ঘোষণা করে এবং আন্দোলন অব্যাহত রাখার শপথ নেয়। এই দিন ভাসানী ন্যাপের মশিউর রহমান ও আরিফ ইফতেখার জাতীয় পরিষদের সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দেন। ১১ ফেব্রæয়ারি পাকিস্তান প্রতিরক্ষা আইনে ধৃত রাজবন্দিদের বিনাশর্তে মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু গোলটেবিল বৈঠকে যোগদানের প্রশ্নটির নিষ্পত্তি হয় না। আওয়ামী লীগ জানিয়ে দেয় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার এবং শেখ মুজিবের মুক্তি ছাড়া বৈঠকে যোগ দেবে না। মওলানা ভাসানীও আগেই একই ধরনের সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছিলেন।
১২ ফেব্রæয়ারি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ মুক্তিলাভ করেন। এই দিন সরকারের নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং ১১ দফার সমর্থনে বিরোধীদলীয় সাতজন সদস্য জাতীয় পরিষদের সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করেন। সেদিন জাতীয় পরিষদ অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি হয়ে যায়। ১৪ ফেব্রæয়ারি ‘ডাক’ সারাদেশে হরতাল আহবান করে। এইদিন পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত সভার মঞ্চ থেকে নুরুল আমীন ও ফরিদ আহমদকে অপমান করে নামিয়ে দেওয়া হয়। জনতা ‘ডাক’ এর ৮ দফা দাবি মানতে রাজি নয়, তাদের সামনে তখন ১১ দফার মুক্তি সংগ্রাম।
১৫ ফেব্রæয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামী সার্জেন্ট জহুরুল হককে ক্যান্টনমেন্টের অভ্যন্তরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সরকারি প্রেসনোটে বলা হয়, আসামি পালাতে চেষ্টা করেছিলেন বলে গুলি ছোড়া হয়। ইতিমধ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা চলাকালে আসামিরা তাঁদের উপর দৈহিক নির্যাতনের বিবরণ তুলে ধরছিলেন। পত্রিকার পাতায় প্রকাশিত এইসব খবরে জনমনে ছিল দারুণ রোষ, অসন্তোষ। সার্জেন্ট জহুরুল হকের মৃত্যু যেন বারুদে অগ্নিসংযোগ করে। ১৬ ফেব্রুয়ারি দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে ঢাকা শহর। অগ্নিসংযোগ করা হয় (১) বাংলা একাডেমি সংলগ্ন স্টেট গেস্ট হাউসে, যেখানে বিশেষ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও পাকিস্তান সুপ্রীম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি এস এ রহমান থাকতেন; (২) কেন্দ্রীয় তথ্য ও বেতারমন্ত্রী খাজা শাহাবুদ্দীনের পরিবারস্থ বাসভবনে; (৩) প্রাদেশিক যোগাযোগমন্ত্রী সুলতান আহমদ ও প্রাদেশিক পূর্তমন্ত্রী মং শোয়ে প্রু’র আবদুল গণি রোডস্থ সরকারি বাসভবনে; (৪) প্রাদেশিক কনভেনশন মুসলিম লীগের সভাপতি খাজা হাসান আসকারির বাসভবনে। পল্টনে লক্ষাধিক লোকের জনসভায় মওলানা ভাসানী সার্জেন্ট জহুরুল হকের গায়েবানা জানাজা পরিচালনা করেন। তিনি তাঁর ভাষণে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘দুই মাসের মধ্যে ১১ দফা কায়েম এবং রাজবন্দিদের মুক্তি দেওয়া না হলে খাজনা বন্ধ করা হইবে।’ তিনি আরও বলেন, প্রয়োজন হলে জেলখানা ভেঙে মুজিবকে নিয়ে আসবেন। ওই দিনই প্রেসিডেন্ট সারাদেশ থেকে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করেন।
১৭ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী পূর্ণ হরতাল পালিত হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের সামনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও রসায়ন বিভাগের রিডার ডক্টর শামসুজ্জোহাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে পাকিস্তানি সেনারা বেয়োনেট চার্জ করে নির্মমভাবে হত্যা করে। একই দিনে নিহত হন ছাত্র নুরুল ইসলাম। গুরুতররূপে আহত হলেন ড. মযহারুল ইসলাম, আবদুল খালেক এবং ড. মোল্লাসহ বহুসংখ্যক ছাত্রশিক্ষক। এই নৃশংস হত্যাকান্ডের খবর মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকায় সান্ধ্য আইন উপেক্ষা করে রাত এগারটায় জনগণ রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। সে রাতে মুক্তিপাগল মানুষ এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। সান্ধ্য আইন উপেক্ষা করে নিরস্ত্র জনতা বুলেটের সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। নির্বিচারে গুলি করে সেনাবাহিনী। পিছপা হয়নি জনতা।
২০ ফেব্রুয়ারি বিকেলে পাঁচটায় সান্ধ্য আইন প্রত্যাহার করা হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস। ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদ পল্টনে জনসভার আয়োজন করে। সভাশেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। এই দিন আইয়ুব খান জাতির উদ্দেশে প্রচারিত বেতার ভাষণে বলেন যে, পরবর্তী নির্বাচনে তিনি আর প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হবেন না।

লেখক : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা