পূর্বদেশ ডেস্ক
কক্সবাজারের মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে খরচ হওয়া ৬ হাজার ৫৭১ কোটি টাকার হিসাব না দিয়েই বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া সাবেক প্রকল্প পরিচালক ‘পালিয়ে গেছেন’ বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। গতকাল বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ও একনেক চেয়ারপারসন মুহাম্মদ ইউনূস। খবর বিডিনিউজের। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল একনেক বৈঠকে ৩ হাজার ৭৫৬ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ের নয়টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকার খরচ করবে ২ হাজার ৭৯৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা এবং ঋণ নেওয়া হবে ৮১২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর বাইরে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো নিজেরা দেবে ১৪৫ কোটি ৬ লাখ টাকা।
প্রকল্পে নজরদারি বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার না হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
তিনি বলেন, মাতারবাড়ি পাওয়ার প্লান্টের উৎপাদন ক্ষমতা হল ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। গত মাসে পিডিবির থেকে বিদ্যুৎ কিনেছে ১৮৫ মেগাওয়াট। তো এটার সমস্যাটা কেন হল? বিদ্যুতেরও আমাদের অভাব এবং কেন এটা পূর্ণ ব্যবহার হয় না?
পরিকল্পনা উপদেষ্টা মনে করেন, সমস্যাটা ‘অনিয়মের’ সমস্যাই। যে কয়লা আমদানি করতে হয় তা নি¤œমানের। সেই নি¤œমানের কয়লা যারা সরবরাহ করছে তাদের নাম না জানিয়ে তিনি বলেন, নিম্নমানের কয়লা সরবরাহ করছে ইন্দোনেশিয়া থেকে। আসে তো আমাদের দেশি একটা বড় কোম্পানির মাধ্যমে।
মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনাকারী সরকারি কোম্পানির আগের পরিচালক ‘চলে গেছে’ তুলে ধরে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, নতুন পরিচালক হয়েছে। এখন সেই কয়লাতে দূষিত কয়লা পাওয়া গেছে এবং তা পরীক্ষার জন্য ব্যাংককে পাঠানো হচ্ছে। একবার পাঠানো হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক (পিডি) চলে যাওয়ার ব্যাখ্যায় উপদেষ্টা বলেন, প্রকল্পের পরিচালক চুক্তিভিত্তিক ছিলেন। উনি পলাতক। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করার সময় অডিট আপত্তি এসেছে। অডিট আপত্তি আসার পর সেটা নিষ্পন্ন করার হয়নি, অনিষ্পন্ন হল ৬ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা।
এটার কোনো উত্তর কেউ দেয়নি। না দিয়েই প্রকল্প পরিচালক নাই এখন। আমার জানা নেই উনি পলাতক নাকি উনি গ্রেপ্তার, আমি ঠিক জানি না। কিন্তু এই হল-আমাদের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের সময়ের সমস্যা।
এজন্য তিনি মনে করেন যে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় অনেক বেশি দেখাশোনা করা, নজরদারি করা দরকার এবং সৎ উদ্দেশ্যে নজরদারি করা দরকার। শুধু নজরদারিটা নামে মাত্র করলে হয় না।
অনুমোদনকৃত প্রকল্পগুলো হলো; বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সচিবালয়ের সাতটি আঞ্চলিক কার্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ (তৃতীয় সংশোধিত) প্রকল্প (কোনো ব্যয় না বাড়িয়ে); ১৭০ কোটি ৩৪ লাখ টাকার মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রিভেনশন অব ভায়োলেন্স অ্যান্ড হার্মফুল প্র্যাকটিসেস অ্যাগেইনস্ট চিলড্রেন অ্যান্ড উইমেন ইন বাংলাদেশ প্রকল্প; ২২৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় বাড়িয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার ও বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প।
১৪৫ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয় বাড়িয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পটিও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আর ৩৪ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ডিজাস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট এনহ্যান্সমেন্ট প্রকল্প (কম্পোনেন্ট টু অ্যান্ড থ্রি) (দ্বিতীয় সংশোধিত)। ২৪৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ের বাংলাদেশ সাসটেইনেবল রিকভারি, ইমার্জেন্সি প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড রেসপন্স (বিøস্ট্রং) (ডিডিএম পার্ট) নামে নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। একনেক বৈঠকে ৪৯৯ কোটি ৮২ লাখ টাকার কৃষি মন্ত্রণালয়ের খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার সেচ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
২ হাজার ৪৩৯ কোটি ৩ লাখ টাকা ব্যয় বাড়িয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উইকেয়ার ফেজ-১: ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক (এন-৭) উন্নয়ন প্রকল্প (প্রথম সংশোধিত); ব্যয় না বাড়িয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (তৃতীয় পর্যায়) (প্রথম সংশোধিত) রয়েছে অনুমোদনের তালিকায়।