মনিরুল ইসলাম মুন্না
গ্রীষ্মকালীন সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় প্রায় প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে বিভিন্ন সবজির দাম। এর সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে মুরগির দামবৃদ্ধি। যা ভোক্তাদের অস্বস্তি আরও বাড়িয়েছে। গতকাল শুক্রবার নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।
বাজারে দেখা গেছে, কয়েকটি ছাড়া বেশিরভাগ সবজিই এখন ৬০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। ৬০ টাকার নিচে পছন্দের কোন সবজি মিলছে না। হাতে গোনা কয়েকটি সবজি এর ব্যতিক্রম। প্রতি কেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ১০০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, কচুরলতি ৭০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ থেকে ৭০ টাকা, ঝিঙা ৭০ থেকে ৮০ টাকা এবং টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য সবজির মধ্যে পেঁপে ৭০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৬৫ টাকা, পটল ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং সজনে ডাটা ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি চালকুমড়া ৪০ টাকা এবং লাউ ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজার এবং সবজির মান-আকারভেদে দাম কমবেশি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গ্রীষ্মকালীন সবজির সরবরাহ এখনও পুরোপুরি শুরু না হওয়ায় দাম কিছুটা বেশি। তাছাড়া শীতকালীন সবজির সরবরাহও প্রায় শেষের দিকে।সবজি বিক্রেতা আকবর হোসেন বলেন, শীতের অধিকাংশ সবজিই এখন শেষ। আর গ্রীষ্মের কিছু সবজি বাজারে আসা শুরু করেছে মাত্র। পুরোপুরি সরবরাহ শুরু হলে দাম কমে যাবে। আর যদি টানা বৃষ্টি হয়, তাহলে দাম আরও বেড়ে যেতে পারে।
আরেক সবজি বিক্রেতা আরিফ উদ্দিন বলেন, এই সময়ে সব ধরনের সবজির দামই একটু বেড়ে যায়। ভালো পছন্দের সবজি নিতে হলে ৭০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না।
অন্যদিকে, গত এক সপ্তাহে মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে সরবরাহ কিছুটা কমে যাওয়ায় দামবৃদ্ধি পেয়েছে।
বিক্রেতাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ব্রয়লার মুরগি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহের তুলনায় ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি। সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দেশি মুরগি ৬৫০ থেকে ৬৮০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৮০ টাকা এবং লাল লেয়ার ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাঁসের দাম জাতভেদে প্রতি পিস ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা।
তবে গরু ও খাসির মাংসের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অপরদিকে আলুর দামও স্থিতিশীল রয়েছে। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু ২৫ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আদা ১২০ টাকা কেজি, আমদানি করা রসুন ১৮০ থেকে ২২০ টাকা এবং দেশি রসুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজার এখনও আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। বাজারে প্রতি কেজি রুই ৩৫০ থেকে ৪২০ টাকা, কাতলা ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কই ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, কোরাল ৭৫০ টাকা, চাষের পাঙ্গাস ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা এবং তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দামের ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে ক্রেতারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা গরমের সুযোগ নিয়ে সিন্ডিকেট করে সবজির দাম বাড়াচ্ছেন। যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের পকেটে।
ইব্রাহিম খলিল নামের এক ক্রেতা বলেন, সবকিছুর দাম বাড়তি। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের শুধু চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার নেই। বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানাই।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার ও সরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ফয়েজ উল্যাহ পূর্বদেশকে বলেন, ‘বাজার নিয়ন্ত্রণে আমরা প্রতিনিয়ত মনিটরিং করছি। কোন সিন্ডিকেট তৈরি করতে দেওয়া হবে না। দ্রব্যমূল্য অতিরিক্ত নিলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাজার দর স্বাভাবিক রয়েছে, আশা করি, এমন স্বাভাবিক থাকবে। তা ছাড়া বাজার দর স্বাভাবিক রাখার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’