রাঙামাটি প্রতিনিধি
খাগড়াছড়ি থেকে অপহৃত উপজাতি ৫ শিক্ষার্থীর খোঁজ ৫ দিনেও মেলেনি। এতে চরম আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায় আছেন তাদের অভিভাবকরা। ৫ শিক্ষার্থীকে অবিলম্বে উদ্ধার করে মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। এছাড়া তাদেরকে দ্রুত উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন উপজাতি শিক্ষার্থীরা। এছাড়া অপহৃতদের উদ্ধারে তৎপরতা চালাচ্ছে যৌথবাহিনী।
জানা গেছে, গত ১৬ এপ্রিল অটোরিকশাযোগে খাগড়াছড়ির কুকিছড়া থেকে জেলা সদরে যাচ্ছিলেন ৫ শিক্ষার্থী। একপর্যায়ে চালকসহ ৫ শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে অপহরণকারীরা। পরে চালককে ছেড়ে দিলেও ৫ শিক্ষার্থীর খোঁজ মেলেনি। এ ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
অপহৃতরা হলেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় (চবি) শাখার সদস্য রিশন চাকমা, চবি চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের দিব্যি চাকমা, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের লংঙি ম্রো ও চারুকলা বিভাগের অলড্রিন ত্রিপুরা। তারা সবাই চবির ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে।
দিব্যি চাকমার মা রাঙামাটির বরকলের ভারতী দেওয়ান জানান, তারা খুবই উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কে আছেন। তাদের সন্তানরা কোথায়, কী অবস্থায় রয়েছে, কিছুই জানতে পারছেন না। তারা যাতে ভালো থাকে, সুস্থ থাকে এবং দ্রুত সুস্থভাবে ফিরতে পারে সেজন্য সবার আশির্বাদ কামনা করেন তিনি।
গতকাল রবিবার উদ্বেগ প্রকাশ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা জানিয়েছেন, ঘটনার পর থেকে সার্বক্ষণিক অপহৃত শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে খোঁজ রাখছেন তিনি। এই ব্যাপারে সব সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন। তাদের দ্রুত উদ্ধারে প্রশাসনকে অনুরোধ জানান। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ নিরাপত্তা বাহিনীর উদ্ধার তৎপরতা চলছে। যত দ্রুত সম্ভব সম্পূর্ণ সুস্থভাবে তাদেরকে উদ্ধার করে মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তিনি অবিলম্বে নিঃশর্তে শিক্ষার্থীদের সুস্থ শরীরে ফিরিয়ে দিতে অপহরণকারীদের প্রতিও আহবান জানান।
পার্বত্য উপদেষ্টা আরও বলেন, পাহাড়ে এ ধরনের অপতৎপরতার মূলে বড় ফ্যাক্টর চাঁদাবাজি। যে কোন উপায়ে পাহাড়ে অপহরণ ও চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। অপরাধী কাউকে ছাড় দেওয়া যাবে না। এ লক্ষ্যে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
এদিকে অপহৃতদের দ্রুত উদ্ধারের দাবিতে গতকাল রবিবার সকালে রাঙামাটিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যয়নরত ‘আদিবাসী’ শিক্ষার্থীরা। পরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপিও পাঠান তারা। এ সময় ঘটনার সঙ্গে ইউপিডিএফ জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপিডিএফ’র সংগঠক অংগ্য মারমা বলেছেন, এ ধরনের অপহরণের ঘটনায় আমাদের সংগঠনের কোন সম্পৃক্ততা নেই। আমরা কোন রকম সহিংস রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। তাই আমরা শুরু থেকে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের বিপক্ষে।
খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, অপহৃতদের উদ্ধারে জোরালো তৎপরতা চলছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের অবস্থান শনাক্ত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।