পূর্বদেশ ডেস্ক
জুলাই আন্দোলনের স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে ‘জুলাই স্মৃতি জাদুঘর’ আগামী ৫ আগস্টের উদ্বোধন হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
গতকাল রোববার নগরীর লালখান বাজার এলাকায় জুলাই আন্দোলনে নিহত ফয়সাল আহমেদ শান্তর বাসায় গিয়ে তার ব্যবহার্য জিনিস সংগ্রহের পর তিনি বলেন, খুনি এখনও বলছে সে কোনো খুন করেনি। তাদের মধ্যে ন্যূনতম অনুশোচনা নাই। জুলাই জাদুঘরের কাজ হবে খুনির সব অপরাধ জাতির সামনে তুলে ধরা, যেন ৫০ বছর পর আমরা যখন কেউ থাকব না, তখনকার প্রজন্ম তারা যেন জাদুঘরে গিয়ে দেখতে পায় আসলে কী হয়েছিল।
চট্টগ্রাম থেকে শহীদদের ব্যবহৃত জিনিস স্মৃতি আকারে সংগ্রহ করা শুরু হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটার জন্য বড় টিম তৈরি হয়েছে, যারা সারা দেশজুড়ে আগামী দেড় মাস কাজগুলো করবে। এটার জন্য কমিটি হয়েছে, অনেকগুলো সাব কমিটি হয়েছে। আশা করি, আগামী দেড় মাসের মধ্যে কাজগুলো শেষ করে ৫ অগাস্টের মধ্যে জুলাই জাদুঘর ওপেন করতে পারব।
শান্তর বাসায় গিয়ে সংস্কৃতি উপদেষ্টা তার মার সাথে কথা বলেন। শনিবার তিনি কক্সাবাজারের চকরিয়ায় নিহত ওয়াসিম আকরামের বাড়িতে গিয়েও তার ব্যবহার্য জিনিস সংগ্রহ করেন এবং পরিবারের সাথে কথা বলেন।
তিনি বলেন, প্রত্যেকটা ফ্যামিলিতে কিন্তু, তাদের চোখের দিকে তাকালে এটা আপনি সহ্য করতে পারবেন না। এই যে তাদের বেদনাটা আমরা এখানে দেখলাম। আমাদের কাজ হবে জুলাই জাদুঘর যে ভিজিট করবে তার কাছে সেটা ট্রান্সফার করা।
এ ট্রান্সফার করার মাধ্যমে আমরা যে ১৬ বছর দুঃশাসনের মধ্যে ছিলাম, জুলাই শুধু বীরত্বের নয়, একই সাথে বেদনারও গল্প। সে গল্প একই পরিমাণ বেদনা নিয়ে যেন জাদুঘরের ভিজিটরের কাছে যায়, এটা আমাদের কাজ। এ কাজ করার জন্য আমরা শহীদদের কিছু অবজেক্ট কালেক্ট করছি।
সংস্কৃতি উপদেষ্টা আরও বলেন, শুধু অবজেক্ট না, যে শূন্যতা উনি (শান্তর মা) ফিল করছেন সে শূন্যতা যেন আমাদের ফটো ডকুমেন্টশন সিরিজে উঠে আসে সেটার জন্য কাজ শুরু হয়েছে। অবজেক্ট নেওয়া এবং এ শূন্যতাকে কীভাবে ধারণ করা যায় সে কাজটা আমরা চট্টগ্রাম থেকে শুরু করলাম। এ কাজ করতে সময় লাগলেও হাতে সময় কম থাকার কথা উল্লেখ করে ফারুকী বলেন, এজন্য তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।
চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ এনে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রোববার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
হত্যাকান্ডে জড়িতদের বিচারের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, সরকার বিচারের ব্যাপারে সবচাইতে ফোকাসড। আমি নিজেতো সরকারের বাইরে ছিলাম। এখন সরকারে ঢোকার পর বুঝতে পারি নিয়মতান্ত্রিক জটিলতা কত ভয়াবহ। ধরেন আমি দৌড়াই ১০০ মিটার গতিতে, নিয়ম আমাকে টেনে ধরে বলে- দৌড়াও স্লো, ম্যারাথনের গতিতে, এটা বাস্তবতা।
সে বাস্তবতার মধ্যেই আপনারা জানেন যে, আজ (রোববার) থেকে একটা মামলার বিচার কাজ শুরু হয়েছে। এটা লাইভ ব্রডকাস্ট করা হচ্ছে টেলিভিশনে। যাতে করে সবাই জানতে পারে এখানে কী হচ্ছে। আমরা কোনো অন্যায় বিচার চাই না। কারণ বাংলাদেশে জুলাইতে যে জুলুম হয়েছে এবং আগের ১৬ বছর যা হয়েছে এটা কোনোটা বানোয়াট ঘটনা না, আমাদের চোখের সামনে ঘটেছে। আমরা একটা শক্ত বিচার চাই। সেই ন্যায়বিচার হলে আপনারা দেখবেন অপরাধী তার প্রাপ্য শাস্তি পাবে। আজকে প্রসেসটা শুরু হয়েছে। আমি নিশ্চিত প্রত্যেকটা মামলার বিচার হবে।
শান্তর বাসা থেকে ফিরে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে শহিদুল ইসলাম ও মো. ফারুকের পরিবারের সাথে কথা বলেন।