৫০ কোটি টাকা ‘ফাঁকির চেষ্টায়’ বসুন্ধরা স্টিল

5

পূর্বদেশ ডেস্ক

চট্টগ্রাম বন্দরের ‘৫০ কোটি টাকার ভাড়া ফাঁকি দিতে’ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের নামে ‘চিঠি জাল’ করার অভিযোগ উঠেছে বসুন্ধরা মাল্টি স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বসুন্ধরা স্টিলের এক কর্মকর্তাকে চট্টগ্রাম থেকে আটকের পর বন্দর কর্তৃপক্ষ একটি মামলা করেছে। চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুকের নামে বৃহস্পতিবার পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বন্দরে আমদানি পণ্য রাখার ভাড়া (স্টোর রেন্ট) মওকুফ করার জন্য গত ১২ মে বন্দর চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দেয় বসুন্ধরা মাল্টি স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ। ওই চিঠিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব নজরুল ইসলামের স্বাক্ষর রয়েছে। খবর বিডিনিউজ এর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন-২০২২ এর ২২ ও ২৩ ধারা অনুযায়ী বসুন্ধরা স্টিলের আমদানি করা মালামালের ৬০ শতাংশ এক মাসের মধ্যে খালাসের শর্তে স্টোর রেন্ট মওকুফের কথা বলা হয় চিঠিতে। এই চিঠি নিয়ে সন্দেহ হলে বন্দর কর্মকর্তারা বিষয়টি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেন। গত ১৪ মে মন্ত্রণালয় এক চিঠিতে জানায়, তারা মওকুফ সংক্রান্ত কোনো চিঠি দেয়নি; এটি জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর বলছে, বসুন্ধরা মাল্টি স্টিল গত বছরের ১২ জুন থেকে এ বছরের ২ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে চারটি জাহাজ এবং বিভিন্ন মাধ্যমে বন্দর দিয়ে ৯৫টি ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যরে এবং ১৪টি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে কন্টেইনারের মাধ্যমে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি করলেও যথাসময়ে খালাস করেনি। বেজা’র একটি চিঠির বরাতে মূলধনি যন্ত্রপাতির ওপর স্টোর রেন্ট ও পোর্ট ডেমারেজ মওকুফ করতে নৌপরিহন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে বসুন্ধরা স্টিল। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের তরফে মতামত চাওয়া হলে গত ১৯ জানুয়ারি বন্দর কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে জানায়, বসুন্ধরা স্টিলের কাছে স্টোর রেন্টের বকেয়ার পরিমাণ ৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে অর্ধ শত কোটি টাকা ফাঁকির ‘অপচেষ্টা’ করে কোম্পানিটি।
জানতে জাইলে চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি জাল চিঠির মাধ্যমে ৫০ কোটি টাকা ভাড়া ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করেছিল। এ ঘটনায় আমরা থানায় একটি জালিয়াতির মামলা করেছি’।
বন্দর থানার ওসি কাজী মুহাম্মদ সুলতান আহসান উদ্দীন বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার রাতে জালিয়াতির একটি মামলা করা হয়। এ ঘটনায় মোহাম্মদ ফয়েজ নামে একজন গ্রেপ্তার আছেন’।
জানতে চাইলে বসুন্ধরা গ্রæপের সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কো-অর্ডিনেটর অ্যান্ড মিডিয়া অ্যাডভাইজার লুৎফর রহমান হিমেল বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি জানি না; তাছাড়া মাত্র দায়িত্ব নিয়েছি চেয়ারম্যান মহোদয়ের উপদেষ্টা হিসেবে। আমি আগে দায়িত্বটা ভালোভাবে বুঝে নিই। ইনশাআল্লাহ, ভবিষ্যতে যে কোনো বিষয়ে আপনাদের সহযোগিতা দেব’।
লুৎফুর রহমান হিমেল মিডিয়া অ্যাডভাইজার হিসেবে যোগ দেওয়ার আগে একই গ্রুপের মালিকানাধীন বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক ছিলেন।
বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন পত্রিকা বাংলাদেশ প্রতিদিন লিখেছে, ‘গত জুলাই-আগস্টের আন্দোলন, ডলার সংকট, ব্যাংকে তারল্য সংকট, মুদ্রাস্ফীতি ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বসুন্ধরা মাল্টি স্টিল তাদের আমদানি করা মূলধনী যন্ত্রপাতি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে যথাসময়ে খালাস করতে ব্যর্থ হয় এবং এতে বিপুল পরিমাণ ডেমারেজ জমতে থাকে’।
স্টিল মিল কর্তৃপক্ষের বরাতে পত্রিকাটি লিখেছে, ‘উদ্যোক্তা ও একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ঝুঁকির হাত থেকে বাঁচাতে বসুন্ধরা মাল্টি স্টিল সংশ্লিষ্ট দপ্তর, বন্দর কর্তৃপক্ষ, মন্ত্রণালয়ে যথাযথ ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে একাধিক আবেদন করেছে। তবে কথিত জাল জালিয়াতির অভিযোগ ও ঘটনার সঙ্গে বসুন্ধরা মাল্টি স্টিলের একেবারেই কোনো সম্পৃক্ততা নেই’।