পূর্বদেশ ডেস্ক
চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে সচিবালয় ঘেরাও ও ছাত্রদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় ঢাকার চারটি থানায় মামলা করেছে পুলিশ, যেখানে ৪২০ জনের নামসহ অজ্ঞাত দশ হাজার আনসারকে আসামি করা হয়েছে।
রোববার ওই সংঘর্ষের পর থেকে আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে শাহবাগ, রমনা, পল্টন ও পরে বিমানবন্দর থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় সোমবার ৩৮৮ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
এর মধ্যে রমনা থানার মামলায় ৯৮ জন, শাহবাগ থানায় ১৮৯ জন, পল্টন থানার মামলায় ৯৫ জন এবং বিমানবন্দর থানার মামলায় কারাগারে গেছেন ছয়জন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের এডিসি ওবায়দুর রহমান বলেন, রোববার সচিবালয়ে আনসারদের অবরোধ ও সংঘাতের ঘটনায় শাহবাগ, পল্টন ও রমনা থানায় তিনটি মামলা হয়। এর বাইরে বিমান বন্দর এলাকায় বৃহস্পতিবার সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে বিমান বন্দর থানায়।
এসব মামলায় আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে ‘অজ্ঞাত কারও নেতৃত্ব ও প্ররোচনায়’ সচিবালয়ে অনুপ্রবেশ করে দাঙ্গা সৃষ্টি, পুলিশের কাজে বাধা, গাড়ি ভাঙচুর, হত্যার উদ্দেশ্যে ছাত্র-জনতাকে মারধরের অভিযোগ আনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এডিসি ওবায়দুর রহমান চারটি মামলায় ৩৭৭ জনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিলেও সংঘর্ষের পর থেকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তার ৩৮৮ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে দাবি আদায়ে পেশাজীবীদের বিভিন্ন পক্ষের আন্দোলনের মধ্যে গত বুধবার চাকরি জাতীয়করণ করার দাবি নিয়ে মাঠে নামে আনসার সদস্যরা।
এই দাবিতে রোববার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ শুরু করেন আনসার সদস্যরা। পরে তারা সচিবালয় ঘেরাও করেন।
এই পরিস্থিতিতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন সচিবালয়ের কর্মীরা। আনসারের প্রতিনিধিরা দুই দফা সচিবালয়ের ভেতরে গিয়ে সরকারের উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। দাবি পূরণের আশ্বাস পেলেও তারা তাৎক্ষণিকভাবে প্রজ্ঞাপন জারির দাবি তুলে অবস্থান ধরে রাখেন।
রাত ৯টার দিকে সচিবালয়ের ভিতরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহর অবরুদ্ধ হওয়ার খবরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে মিছিল নিয়ে এসে একদল শিক্ষার্থী সচিবালয়ের সামনে গিয়ে আনসারদের ধাওয়া করেন। সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়।
পরে শিক্ষার্থী ও পুলিশ মিলে আনসারদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় ওই এলাকা থেকে। রাতে ঘটনাস্থলে যায় সেনাবাহিনী। এরপর দিনভর সচিবালয়ে অবরুদ্ধ থাকা ব্যক্তিরা বেরিয়ে আসেন।
সংঘর্ষে ৬০ জনের বেশি শিক্ষার্থী আহত হওয়ার তথ্য তুলে ধরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারী আনসারদের গ্রেপ্তারের দাবি জানায় বৈষম্যিবরোধী ছাত্র আন্দোলন।
এ ঘটনায় প্রথমে পল্টন থানা পুলিশ ১১৪ জনের নামসহ অজ্ঞাত তিন থেকে চার হাজার আনসার সদস্যদকে আসামি করে মামলা করে। পরে রমনা, শাহবাগ ও বিমানবন্দর থানায় মামলা হয়।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সোমবার আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আপনারা তাদের (আনসারদের) যুদ্ধাংদেহী মনোভাব দেখেছেন। তাদের দাবি ছিল এক্ষুণি রাত ১০টার সময় প্রজ্ঞাপন করে তাদের জাতীয়করণ করতে হবে।
তারা (আনসার) এমন একটা অসম্ভব দাবি তুলেছিল, অবাস্তব এবং অসম্ভব দাবি করেছিল গÐগোল করার জন্য, সারা সচিবালয় ঘেরাও করে রেখেছিল। হয়ত আরও অনেকে যোগ দিত। ভয়াবহ পরিস্থিতি হতে পারত।