নিজস্ব প্রতিবেদক
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে কারাগারে পাঠানোকে কেন্দ্র করে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যার অভিযোগে ৩১ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও ১৫ জনসহ মোট ৪৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
গত শুক্রবার রাতে নিহত সাইফুলের বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় এ মামলা করেন। এছাড়া আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের মাধ্যমে ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগে ১১৬ জনের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা করেছেন নিহত আইনজীবী সাইফুলের ভাই খানে আলম।
নিহত আইনজীবী সাইফুলের বাবার দায়ের করা মামলার এজাহারে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের ইন্ধনে আসামিরা সাইফুল ইসলামকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন চন্দন দাস, আমান দাস, শুভ কান্তি দাস, রনব, বিকাশ, রমিত, নয়ন দাস, গগন দাস, বিশাল দাস, ওমকার দাস, লালা, সোহেল দাশ, শিবকুমার, গণেশ, রাজ কাপুর, পপি, দেব, অজয়, রাজীব প্রমুখ। সাইফুল ইসলামের মরদেহ দাফন ও অন্যান্য কাজে গ্রামের বাড়িতে ব্যস্ত থাকায় মামলা করতে দেরি হয় বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী তারেক আজিজ বলেন, ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ১০ থেকে ১৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন নিহত আইনজীবীর বাবা। মামলার আসামিদের বেশির ভাগ নগরীর কোতোয়ালি এলাকার সেবক কলোনির পরিচ্ছন্নতাকর্মী। হত্যাকান্ডের ভিডিও দেখে পুলিশ এরই মধ্যে জড়িত ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। হত্যা মামলায় চন্দন দাসকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের সময় চন্দন কমলা রঙের গেঞ্জি ও হেলমেট পরেছিলেন বলছে পুলিশ। ভিডিও ফুটেজে তাকে কোপাতে দেখা গেছে। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলেও জানায় পুলিশ।
এদিকে আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের মাধ্যমে ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগে ১১৬ জনের বিরুদ্ধে থানায় আরও একটি মামলা দায়ের হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও চারশ’ থেকে পাঁচশ’ জনকে আসামি করা হয়েছে এই মামলায়। সংঘর্ষের মধ্যে নির্মম হত্যার শিকার আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের ভাই খানে আলম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। ওই ঘটনায় পুলিশের ওপর আক্রমণের অভিযোগে তিনটিসহ মোট চারটি মামলা দায়ের হল।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, আদালত প্রাঙ্গণসহ আশেপাশের এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হওয়ার ঘটনায় গত ২৭ নভেম্বর পুলিশের পক্ষ থেকে প্রায় দেড় হাজার জনকে আসামি করে নগরীর কোতোয়ালী থানায় তিনটি মামলা দায়ের হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গনের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ছয়শ’ থেকে সাতশ’ জনকে আসামি করা হয়। আদালত ভবনের মূল প্রবেশপথের বিপরীতে রঙ্গম সিনেমা হলের সামনের ঘটনায় ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও তিনশ’ থেকে চারশ’ জনকে আসামি করা হয়। এছাড়া নগরীর কোতোয়ালী মোড়ের ঘটনায় ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও আড়াইশ’ থেকে তিনশ’ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের হয়। এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩৯ জনকে। তাদের বেশির ভাগই কোতোয়ালি এলাকার বাÐেল সেবক কলোনির বাসিন্দা।
এর আগে গত ২৬ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে চট্টগ্রাম আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর হয়। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হলে বাধা দেন তার অনুসারীরা। তারা প্রিজন ভ্যান আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে পুলিশ ও বিজিবি লাঠিপেটা এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখনই সংঘর্ষের সূত্রপাত। এ সময় আইনজীবীদের গাড়ি ভাঙচুর, ইটপাটকেল নিক্ষেপের প্রতিবাদে মিছিল বের করেন কিছু আইনজীবী।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মিছিল শেষে ফেরার পথে হোঁচট খেয়ে রাস্তায় পড়ে যান সাইফুল। তখন তাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশের সংগ্রহ করা ৫২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজের সূত্র ধরে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ধারালো অস্ত্র দিয়ে আইনজীবী সাইফুলকে কোপানো হয়েছে। তার নিথর দেহ পড়ে থাকলেও লাঠিসোঁটা দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকেন অন্যরা। সেখানে আরও ছিলেন ২৫-৩০ জন। তাদের বেশির ভাগই পরিচ্ছন্নতাকর্মী। একজন রয়েছেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী।