৪০% ভোট না পড়লে আবারও নির্বাচনের প্রস্তাব

3

পূর্বদেশ ডেস্ক

জাতীয় নির্বাচনে কোনো আসনে ৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে সেখানে পুনর্নির্বাচন আয়োজন করার সুপারিশ করেছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এছাড়া নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন বাতিল, জাতীয় নির্বাচনে ‘না-ভোট’ ফেরানোর সুপারিশ করা হয়েছে। ‘না-ভোট’ বেশি পড়লে নির্বাচন বাতিল করা এবং পুনর্নির্বাচনে বাতিল হওয়া নির্বাচনের কোনো প্রার্থী যেন অংশ নিতে পারেন, সে বিধান রাখতে বলা হয়েছে।
গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে এসব সুপারিশ করা হয়। খবর বিডিনিউজের।
নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন স্থগিত বা বাতিল এবং পুনর্নির্বাচনের ক্ষমতা দেওয়া এবং ঋণ-বিল খেলাপি, কোনো আদালত ঘোষিত ফেরারী আসামি, একাধিক আসনে কোনো ব্যক্তির প্রার্থী হওয়ার বিধান বাতিল করার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সর্বোচ্চ দুই বারে সীমিত এবং ১০০ আসন নিয়ে সংসদের উচ্চকক্ষ তৈরির সুপারিশ করেছে বদিউল আলম মজুমদার কমিশন।
এছাড়া সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে দুইবার নির্বাচত প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের অযোগ্য এবং এক সঙ্গে একজন দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা যাতে হতে না পারেন সে বিধান চালু করতে বলা হয়েছে।
উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের হারের ভিত্তিতে (সংখ্যানুপাতিক) করতে বলা হয়েছে। উচ্চকক্ষের নির্বাচনের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রত্যেক দলের প্রাপ্ত আসনের ৫০ শতাংশ দলের সদস্যদের থেকে এবং বাকি অর্ধেক আসন নির্দলীয় ভিত্তিতে নাগরিক সমাজ, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, মানবসেবা প্রদানকারী, শ্রমজীবী প্রতিনিধি, নারী উন্নয়নকর্মী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী থেকে সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচিত করার বিধান করা। তবে দলীয় ও নির্দলীয় সদস্যদের মধ্যে অন্তত ৩০ শতাংশ নারী রাখার শর্ত দেওয়া হয়।
আর জাতীয় সংসদের দুই কক্ষের সদস্য এবং স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে তৈরি নির্বাচকমন্ডলীর (ইলেকটোরাল কলেজ) ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করার বিধান করতে বলা হয়েছে সুপারিশে।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলোপ করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। পরে নির্বাচিত সরকারের অধীনে তিনটি জাতীয় নির্বাচন হয়। তবে প্রয়োজনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ চার মাস নির্ধারণ করে এ সময়ের মধ্যে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন সম্পন্ন করার সুপারিশ করা হয়েছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে।
তবে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন এবং স্থানীয় নির্বাচনকে নির্দলীয় করতে আইন সংশোধনের সুপারিশ করা হয়।
আর নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য ১০% জেলা এবং ৫% উপজেলা/থানায় দলের অফিস এবং ন্যূনতম ৫ হাজার সদস্য রাখার বিধান করতে বলা হয়েছে। পরপর দুটো নির্বাচনে অংশ না নিলে দলের নিবন্ধন বাতিল হবে, এমন বিধানও বাতিল করতে বলা হয়েছে।
সংসদের নিম্ন কক্ষের আসন ১০০ বাড়িয়ে ৪০০ করতে এবং এর মধ্যে নারীদের জন্য নির্ধারিত ১০০ আসনে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে নির্বাচন করতে বলা হয়েছে। যাতে যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট আসন থেকে নারীদের সরাসরি নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।
নির্বাচনে ভোট দিতে প্রবাসী ভোটরদের জন্য পোস্টাল ভোটিংয়ের সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। এছাড়া অনলাইন ভোটিং পদ্ধতি চালু করার সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।
নির্বাচন ব্যবস্থায় সংস্কার আনতে সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজনের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারকে প্রধান করে সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এ কমিশন গতকাল বুধবার তাদের সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিল।