৩ হেক্টর জমিতে সবুজ চাদরে ঢেকে গেছে গুমাই বিল

8

মাসুদ নাসির, রাঙ্গুনিয়া

চলতি বছর গুমাই বিলে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে আমনের চাষাবাদ করেছে ২০ হাজার কৃষক। চারা রোপণ থেকে বন্যা আর টানা বৃষ্টিতে ৫ ফুট পানির নিচে ডুবে যায় চারা। এতে কৃষকদের মাঝে বাড়ে চরম উৎকন্ঠা আর উদ্বেগ। টানা ১ সপ্তাহ পানির নিচে আমন চারা ডুবে থাকার পরও পানি নেমে গেলে আমন চাষ আবারও দৃশ্যমান হয়। শতকরা ৮০ ভাগ পানিতে ডুবে থাকা চারা ক্ষতি হয় নাই। ২০ ভাগ চারা নষ্ট হলেও আবারও কৃষকরা গুমাই বিলে আমন চারা রোপণ করে। এখন সে গুমাই বিল সবুজ চাদরে ছেয়ে গেছে। কৃষকরা আবারো আমন চাষাবাদে বাম্পার ফলনের স্বপ্নে বিভোর। এখন বৃষ্টি আর বন্যায় ক্ষতি করতে পারবে না।
রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিলের মাঠ এখন সবুজে ছেয়ে গেছে। বন্যা আর টানা বৃষ্টির সাথে যুদ্ধ করে আমন আবাদ এখন অনেকটা শংকামুক্ত। যেদিকে চোখ যায়, সবুজ স্বপ্নে ভেসে ওঠে কৃষকের মন। এতে ২০ হাজার কৃষক ধানের বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার বলেন, উপজেলার চন্দ্রঘোনা-কদমতলী, মরিয়মনগর, হোসনাবাদ, রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে গুমাই বিল। প্রতিবছরের মতো এ বছরও গুমাই বিলে ৩ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতেই উচ্চফলনশীল (উফশী) ব্রি ৯৫, বীনা ১৭, স্বর্ণা ৫, ব্রি ৭১, ব্রি ৭৫, ব্রি ৪৯, ব্রি ৫০, ব্রি ৫২, ব্রি ৭২ ও ব্রি ৮১ জাতের আমনের চারা রোপণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ১০০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় কালিজিরা, বিভিন্ন ধান জাতের এবং বাকি ৯০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে হাইব্রিড জাতের আমন ধান।
কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে গুমাই বিল থেকে প্রতি হেক্টরে সাড়ে ৫ টন হিসাবে ১৮ হাজার ৯৫ মেট্রিক টন ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকেরা।
রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিলের চন্দ্রঘোনা অংশের পাটান পাড়া গ্রামের কৃষক মো. নুরুল হক বলেন, এ বছর দুই একর জমিতে আমনের আবাদ করেছি। এর মধ্যে নিজের জমি আছে মাত্র ৪০ শতাংশ। বাকি ৬০ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেছি। কৃষি অফিসের পরামর্শে উফশী জাতের আমনের চারা রোপণ করি। জমিতে সার থেকে শুরু করে কীটনাশক সবকিছুই ব্যবহার করেছি তাদের পরামর্শে। সবকিছু মিলিয়ে এবার ভালো ফলনের আশা করছি। বন্যা আর টানা বৃষ্টির কবলে আমন চারা ৩ বার পানির নিচে ডুবে যায়। অনেক ক্ষতি হযেছে। তারপরেও আমরা কৃষক আমরা চাষাবাদ করে বেঁচে থাকি। আমার মতো অনেক কৃষককে আমন চারা ২/৩ বার রোপণ করতে হয়েছে। সময় ছিল বলে আমরা চাষাবাদে ঘুরে দাঁড়িয়েছি।
চন্দ্রঘোনা কদমতলী গ্রামের কৃষক অভিজিত দে বলেন, ‘বন্যার সাথে আমরা সবসময় যুদ্ধ করতে অভ্যস্ত। আমাদের পৈত্রিক পেশা চাষাবাদ করে সংসার চালাতে হয়। আমরা জানি কৃষি কাজ করতে। সে কারণে শত প্রতিকূলতার মাঝেও আমরা চাষাবাদ ছাড়ি না। এবারেও নানা প্রতিকূলতার মাঝে আমরা আমন চাষাবাদ করেছি। পানিতে ডুবে থাকা আমন চারা ১ সপ্তাহ থাকলে আমরা আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। তারপরেও পানি নামার পর জমিতে লাগানো চারা নষ্ট হলে বীজতলা ছিল বলেই আবারও চারা লাগাতে পেরেছি। শরতের মাঝামাঝি সময়েও বৃষ্টির দেখা মিলছে। আবহাওয়া বেশ ভালো। ফলে মাঠ সবুজে ভরে উঠেছে। কোনোরূপ প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত না করলে এ বছর ভালো ফলন পাব বলে মনে করছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস জানান, কৃষি অফিসের মাঠ পর্যায়ে তদারকি, সময়মতো কীটনাশক প্রয়োগ ও কীট দমনে প্রাকৃতিক পদ্ধতি ব্যবহার এবং আবহাওয়া ঠিক থাকলে এবার আমনের ফলন প্রত্যাশার চেয়েও ভালো হবে। এবারের আমন চাষাবাদে বন্যা আর বৃষ্টিতে পানিতে চারা ডুবে গেলেও সহনশীল জাতের চারা রোপণ করায় আমন চারার ক্ষতি হয়নি।