নিজস্ব প্রতিবেদক
কয়েক ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে আবারও জলাবদ্ধতার চিরচেনা চিত্রে ফিরেছে চট্টগ্রাম। গতকাল বুধবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতেই নগরের বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। যদিও রাত পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি অব্যাহত ছিল।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ভোরের তিন ঘণ্টায় ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় মোট বৃষ্টিপাত হয়েছে ৬৮ দশমিক ৬ মিলিমিটার। এছাড়া সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। যা আবহাওয়ার আরও অবনতি ও ভারী বৃষ্টির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
নগরের আগ্রাবাদ, জিইসি মোড়, বাকলিয়া, রাহাত্তারপুল, কাতালগঞ্জ, হালিশহর, মুরাদপুরসহ নানা এলাকায় সকাল থেকেই সড়কে জমে থাকা পানিতে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়। অফিসগামী ও শিক্ষার্থীসহ পথচারীরা বিপাকে পড়েন। কোথাও হাঁটু সমান পানি জমে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
নগরীর চৌমুহনী এলাকার বাসিন্দা হানিফ মাহমুদ বলেন, সকালে সবাই অফিসে যাচ্ছে। এই সময় সড়কে হাঁটু সমান পানি। মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই।
রাহাত্তারপুল এলাকার পোশাক শ্রমিক মিজানুল ইসলাম বলেন, সকাল ছয়টায় অফিসে যাওয়ার জন্য বের হতে হয়। পানির কারণে গাড়ির দেখা মেলেনি। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর একটা গাড়ি পাই। ভাড়া বেশি, সময়ও বেশি লাগছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) জলাবদ্ধতা নিরসনে চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যার মোট বাজেট ১৪ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রকল্প হলো ৩৬টি খাল খনন ও সংস্কার, যার জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা।
সিডিএ জানিয়েছে, প্রকল্পের ৮৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ৩৬টি খালের মধ্যে ২৫টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে, ৬টি খালের ৯০ শতাংশ কাজ হয়েছে এবং ৫টি খালের কাজ এখনও ৯০ শতাংশের নিচে রয়েছে।
তবে নগরীর জলাবদ্ধতাপ্রবণ কাতালগঞ্জ, মুরাদপুর ও পাঁচলাইশ এলাকার হিজড়া খালের কাজ এখনও অসম্পূর্ণ। এসব এলাকায় বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা একটি নিয়মিত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, উন্নয়নের কাজ চললেও বাস্তবে তার সুফল মিলছে না।
অন্যদিকে, আগ্রাবাদ এলাকায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ বক্স কালভার্টের মধ্যে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে এসেছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন জানিয়েছে,কালভার্ট পরিষ্কারের কাজ চলমান রয়েছে, তবে তার অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয়রা।
প্রতি বর্ষায় চট্টগ্রামবাসীকে একই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণা ও কাজের অগ্রগতি থাকা সত্তে¡ও নগরবাসীর জীবনমানে তা এখনও দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে পারেনি। নগরের জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি, কাজের ধীরগতি ও খালের দখল-দূষণরোধে দৃশ্যমান পদক্ষেপের অভাবকেই দায়ী করছেন অনেকে।