৩৬ স্পটে ১২ কি.মি. ভাঙন

2

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাঙামাটি পার্বত্য জেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত কাপ্তাই লেক ও লেকের সাথে সংযুক্ত হওয়া তিন নদীতে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী থেগামুখ বাজার থেকে রাঙামাটি শহর ঘেঁষা কাপ্তাই লেক ও আশপাশের নদী এলাকায় ৩৬টি পয়েন্টে প্রায় ১২ কিলোমিটার ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে আবাসভূমি, কৃষি জমি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ আনুমানিক সাড়ে ৮০০ কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতির মুখে পড়েছে। দ্রæত সময়ের মধ্যে ভাঙন কবলিত এলাকায় স্থায়ী তীর প্রতিরক্ষা কাজ না হলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা।
বরকল উপজেলার বাসিন্দা সুমেশ চাকমা পূর্বদেশকে বলেন, ‘কাপ্তাই লেকের বিভিন্ন অংশে প্রচুর ভাঙন হচ্ছে। একদিকে কাপ্তাই লেক ভাঙন হচ্ছে অন্যদিকে ভাঙনের মাটির কারণে লেক ভরাট হচ্ছে। এতে পানি কমলেই লেকে লঞ্চ চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। কাপ্তাই লেক খনন এবং ভাঙন প্রতিরোধ দুইটাই জরুরি।’
পাউবো সূত্র জানায়, বাঘাইছড়ি উপজেলার কাচালং নদীর বারবিন্দু ঘাট, বাঘঘোনা পাড়া, মহাজন পাড়া, ইটভাটা এলাকা, বটতলী বাজার, লাইল্যে ঘোনা, উলুছড়ি ঘাট, দুরছড়ি বাজারের আটটি স্থানে ২ দশমিক ৬০ কিলোমিটার, লংগদু উপজেলার কাপ্তাই লেক ও কাচালং নদীর আর্মি ক্যাম্প, লংগদু বাজার, মানিকজোড় ছড়া, কাট্টলী বাজারের চারটি স্থানে ১ দশমিক ৩০০ কিলোমিটার, বরকল উপজেলার কর্ণফুলী নদীর থেগামুখ বিওপি, থেগামুখ বাজার, ছোট হরিনা বিজিবি, জুনো পহর স্কুল, উপজেলা পরিষদের পাঁচটি স্থানে ১ দশমিক ৬৮০ কিলোমিটার, রাঙামাটি সদর উপজেলার কাপ্তাই লেকের রাজবন বিহার এলাকা, এসপি বাংলো হতে ডিসি বাংলো এলাকা, পর্যটন এলাকা, বিলাইছড়ি পাড়া, মোরঘোনা বনভান্তে জন্মস্মৃতি বিহার এলাকার পাঁচটি স্থানে ২ দশমিক ৫৫০ কিলোমিটার, কাপ্তাই উপজেলার চিতমরম এলাকা, মুসলিম পাড়া, বিজিবি জোন এলাকা, নারানগিরি এলাকার চারটি স্থানে ০ দশমিক ৯৭০ কিলোমিটার, রাজস্থলী উপজেলার খাদ্য গোডাউন, রাজস্থলী বাজার,তাইতং পাড়ার তিনটি স্থানে ০ দশমিক ৯০০ কিলোমিটার, কাউখালী উপজেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস এলাকা, মুসলিম পাড়া, কাউখালী কবরস্থান এলাকা, মোনাই পাড়ার চারটি স্থানে ১ দশমিক ০৫০ কিলোমিটার এলাকা, বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া বাজারের একটি স্থানে ০ দশমিক ২০০ কিলোমিটার, নানিয়াচর উপজেলার বাজার এলাকা, শ্মশান এলাকার ০ দশমিক ৫০০ কিলোমিটার এলাকায় বড় ধরনের ভাঙন দেখা দিয়েছে।
ভাঙন কবলিত এলাকার লোকজন জানান, কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে কাপ্তাই লেক সৃষ্টির পর থেকেই ভাঙন কবলিত রাঙামাটি। হ্রদে পানির প্রবাহ বাড়লেই ভাঙনের তীব্রতা বাড়ে। রাঙামাটি শহর প্রতিনিয়ত ভাঙনের কবলে পড়ায় দিনদিন ছোট হয়ে আসছে। কোনসময় রাঙামাটিতে টেকসই বাঁধের কাজ হয়নি। মাঝেমধ্যে কোথাও ভাঙন দেখা দিলে বালির বস্তা দিয়ে প্রতিরোধ করা হয়। প্রতিনিয়ত ভাঙনের কবলে পড়ে সরকারি স্থাপনাসহ মানুষের ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। শহর এলাকার ভাঙন নিয়ে সোচ্চার থাকলেও ভেতরের উপজেলাগুলোতে যে ভাঙন দেখা দেয় সেগুলো প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে না পানি উন্নয়ন বোর্ড।
রাঙামাটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা পূর্বদেশকে বলেন, ‘কাপ্তাই লেকসহ আশপাশের নদীগুলোর ৩৬টি স্থানে প্রায় ১২ কিলোমিটার ভাঙন দেখা দিয়েছেন। রাঙামাটির টেকসই পানি ব্যবস্থাপনায় ৬৯৬ কোটি টাকার যে প্রকল্প প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে সেখানে ভাঙন প্রতিরোধেই ২৮৮ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হলেই ভাঙন প্রতিরোধে দ্রæত কাজ শুরু করা হবে। আপাতত যেখানেই বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে সেখানে জরুরি ভিত্তিতে কিছু সংস্কার কাজ করা হয়েছে।’