এম এ হোসাইন
তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে অবহেলিত ও অধরা স্বপ্ন হয়ে পড়ে আছে ‘সিডিএ কর্ণফুলী হাউজিং প্রকল্প’। কর্ণফুলী নদীর তীরে গড়ে ওঠা এ প্রকল্প ১৯৯০-এর দশকে হাতে নেওয়া হলেও এখনও পর্যন্ত এটি সম্পূর্ণ বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। অথচ এ প্রকল্প নিয়ে প্রথম দিকে নগরবাসীর মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। কারণ নগরের কেন্দ্র থেকে খুব কাছেই এ প্রকল্পের অবস্থান। তাছাড়া প্রকল্পটি পরিবেশ ও নান্দনিক দিক থেকেও উপযুক্ত আবাসনের জন্য।
তবে বহু প্রতীক্ষিত এই প্রকল্পে অবশেষে আশার আলো দেখাতে শুরু করেছে সিডিএ। ওয়াসা থেকে সুপেয় পানির সংযোগ দেওয়ার উদ্যোগ ও বহুতল ভবন নির্মাণে নীতিগত অনুমোদন প্রকল্পের অচলাবস্থা ভাঙার ইঙ্গিত দিচ্ছে। সম্প্রতি প্লট মালিকদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে পানি সংযোগ ও ভবন নির্মাণে দশ তলার অধিক অনুমোদনের বিষয়ে ঐক্যমত হয়েছে। যদিও পানির সংযোগ পেতেই প্লট মালিককে কাঠাপ্রতি খরচ করতে হবে ৫০ হাজার টাকা করে।
স¤প্রতি অনুষ্ঠিত ওই সভায় সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল করিম বলেছেন, ‘৩৩ বছর আগে বরাদ্দ পাওয়া কর্ণফুলী হাউজিং সোসাইটির মতো একটি সম্ভাবনাময় প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে সিডিএ উদ্যোগ নিয়েছে। দীর্ঘদিন সুপেয় পানির অভাবে প্রকল্পটি কার্যকর হয়নি। ওয়াসার ভান্ডারজুড়ি প্রকল্প থেকে প্লট মালিকদের নিজস্ব অর্থায়নে অচিরেই পানি সংযোগ দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘সিডিএর অনুমতি নিয়ে এখানে ১০ তলা বা তার বেশি ভবন নির্মাণের সুযোগ থাকবে। প্লট মালিক সমিতির সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা শেষে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন সমিতির এজিএমে অনুমোদন পেলেই আর কোনো আইনি জটিলতা থাকবে না।’
তবে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, কেবল পানি সংযোগ বা ভবন নির্মাণের অনুমোদনই কি এই প্রকল্পের প্রাণ ফেরাবে? নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, এ প্রকল্পকে কার্যকর করতে হলে চাই একটি পূর্ণাঙ্গ মাস্টারপ্ল্যান। যেখানে রাস্তা, ড্রেনেজ, নিরাপত্তা, পরিবহন, বিদ্যুৎ, গ্যাস, বাজার ও শিক্ষা-চিকিৎসার ন্যূনতম সুযোগ রাখা হবে।
আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব চট্টগ্রামের সাবেক পরিচালক ও ইস্ট ডেল্টা হোল্ডিংস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম আবদুল গাফ্ফার মিয়াজী বলেন, এ প্রকল্পের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও ব্যাপক। কর্ণফুলী হাউজিংয়ে সঠিক পরিকল্পনা ও সেবা পৌঁছালে এটি দ্বিতীয় চট্টগ্রাম হয়ে উঠতে পারত, একটি টাউনশিপ হতে পারত। কিন্তু পরিকল্পনার ঘাটতি, মনিটরিংয়ের অভাব এবং সমন্বয়ের ব্যর্থতা একে অচল করে রেখেছে। এখন নতুন করে যদি আন্তরিকতা থাকে, তা হলে এখনও সম্ভাবনা আছে।
‘কর্ণফুলী হাউজিং প্রকল্প’ বাস্তবায়নে সিডিএর উদাসীনতা ও প্রশাসনিক জটিলতা দীর্ঘসূত্রতার মূল কারণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। প্রায় ৩৩ বছর আগে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হলেও আজও অধিকাংশ প্লট মালিক জায়গা বুঝে পাননি। প্লট মালিকদের অভিযোগ, কোনো সুনির্দিষ্ট টাইমলাইন নেই, নেই অবকাঠামো উন্নয়নের গতি, আর প্রয়োজনীয় নাগরিক সুবিধার চরম অভাব প্রকল্পটিকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে।
একজন ক্ষুব্ধ প্লট মালিক বলেন, প্লট পেয়ে আমি যেমন খুশি হয়েছিলাম, এখন ততটাই হতাশ। আমি প্রতিবারই সিডিএতে গিয়ে আশ্বাস ছাড়া কিছুই পাইনি। পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, ড্রেনেজ নেই। এটা কি আবাসিক প্রকল্প?
বর্তমানে চট্টগ্রামে আবাসন সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন নগরে বাড়ছে জনসংখ্যা, কিন্তু পরিকল্পিত হাউজিং প্রকল্পের সংখ্যা নগণ্য। সেক্ষেত্রে কর্ণফুলী হাউজিং প্রকল্প শুধু একটি আবাসিক এলাকা নয়, বরং এটি একটি বিকল্প শহর হতে পারত। নদীঘেঁষা পরিবেশ, শহরের সন্নিকটতা, তুলনামূলক খোলামেলা পরিকল্পনা এই প্রকল্পকে চট্টগ্রামের আবাসন খাতের জন্য একটি সম্ভাবনাময় ‘রিলিফ জোন’ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।
প্রকৌশলী নুরুল করিম বলেন, নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়ার আগে পুরনো অসম্পূর্ণ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ সিডিএ। কর্ণফুলী হাউজিং বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামের আবাসন সংকট অনেকটাই কমবে, পাশাপাশি সরকারও বিপুল রাজস্ব পাবে।