৩০ জনের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলা

4

চকরিয়া প্রতিনিধি

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় বদরখালী এলাকায় প্যারাবন নিধনের ঘটনায় ৩০ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হযেছে। কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সিনিয়র কেমিস্ট মো. আবদুছ ছালাম বাদি হয়ে গত বুধবার চকরিয়া থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য গোলাম কাদের মনু, সাবেক ইউপি সদস্য তাজুল ইসলাম ভুট্টু, বদরখালী ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রহিম ও বিএনপি রাজনীতির সাথে জড়িত আব্দুল কাদের, সাহাব উদ্দিন ও মোহাম্মদ আলী চৌধুরীসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। তাদের মধ্যে মোহাম্মদ আলী চৌধুরী বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির সাবেক সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া মামলায় আরো ১০-১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
থানায দায়ের করা মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২০ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারির মধ্যে বদরখালী বাজারের দক্ষিণে টুটিয়াখালী পাড়ার পশ্চিমে ১০ একর ও বদরখালী-মহেশখালী ব্রিজের দক্ষিণে দুই একরসহ সর্বমোট ১২ একর প্যারাবন নিধন করে মামলার এজাহারনামীয় আসামিরা। মাছ ও কাঁকড়ার ঘেরের জন্য বাঁধ তৈরি করতেই আসামিরা এসব প্যারাবন নিধন করে। পরবর্তীতে গত ১৩ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সরেজমিনে বদরখালীতে পরিদর্শন করে ১২ একর প্যারাবন নিধনের সত্যতা খুঁজে পায়। এজাহারে আরো দাবি করা হয়, গত ১৩ জানুয়ারি বদরখালী ব্রিজের দক্ষিণে মহেশখালী চ্যানেলের পূর্ব পাশে দুই ফুট উচ্চতা, পাঁচ ফুট প্রস্ত ও ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্যরে একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। আসামিরা প্যারাবন নিধন করে শ্রমিক দিয়ে খালের মধ্যে এই বাঁধ তৈরি করেছেন। খালের মধ্যে বাঁধ নির্মাণের ফলে জলাশয় এবং পরিবেশ ও প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।
এর আগে বদরখালীতে প্যারাবন কেটে চিংড়ি ঘের নির্মাণ করা হচ্ছে এমন খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে গত ১৭ জানুয়ারি তৎকালীন চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহিদ হোসাইন স্বপ্রণোদিত হয়ে একটি মামলা করেন। ওই মামলার এক আদেশে ঘটনার সত্যতা যাচাই করে ৩০ দিনের মধ্যে আদালতের কাছে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের পরিচালককে নির্দেশ দেন। এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর প্রতি আদালতের নির্দেশনা থাকলেও সেই প্রতিবেদন আদালতে জমা পড়ে গত ২৪ সেপ্টেম্বর। পরিবেশ অধিদপ্তরের ওই প্রতিবেদনে প্যারাবন নিধনের ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের নাম বাদ দিয়ে ১৩ জন নিরীহ ব্যক্তির নামে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়ার অভিযোগ উঠে। পরিবেশ অধিদপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদনে যে ১৩ জনকে প্যারাবন নিধনের ঘটনায় অভিযুক্ত করা হয়েছে, তারা কেউ লবণচাষি, কৃষক, নৈশপ্রহরী ও দোকানের কর্মচারী।
উবিনীগের আঞ্চলিক সমন্বয়ক জয়নাল আবেদিন খান বলেন, আদালতের আদেশে যখন দখলদারদের বিষয়ে তদন্ত চলছিল তখন উবিনীগের পক্ষ থেকে প্যারাবন নিধনে জড়িত অন্তত ৪০ জনের একটি তালিকা এবং প্যারাবন নিধনের ভিডিওচিত্র পরিবেশ অধিদপ্তরে সরবরাহ করা হয়েছিল। যাতে ভিডিওতে প্যারাবন নিধনকারী ব্যক্তিদের সহজে শনাক্ত করা যায়। এরপরও প্রকৃত দখলদারদের নাম বাদ দিয়ে নিরীহ ও দরিদ্র ১৩ জনের নামে প্রতিবেদন দিয়েছিল পরিবেশ অধিদপ্তর।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুর কাদের ভূঁইয়া বলেন, বদরখালীতে প্যারাবন নিধনের ঘটনায পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বাদি হয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে আরো ১০-১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। থানায় দায়ের করা মামলাটি পরিবেশ অধিদপ্তরই তদন্ত করবে বলে জানান ওসি মনজুর কাদের ভূইয়া।