৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে ‘বৃহত্তর সুন্নি জোট’

6

এম এ হোসাইন

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক-সময়ে রাজনীতির মাঠে নতুন নতুন জোট ও প্ল্যাটফর্ম আত্মপ্রকাশ করছে। সেই তালিকায় নবগঠিত চট্টগ্রামের তিন দলের ‘বৃহত্তর সুন্নি জোট’ আলোচনায় রয়েছে। এই জোট আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এ মাসে (নভেম্বর) বিভাগে বিভাগে সম্মেলন দিয়ে নির্বাচনী কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করতে যাচ্ছে এই জোট। এছাড়া একাধিক দলের সাথেও এই জোটের দরকষাকষি চলছে।
জোটের শীর্ষস্থানীয় নেতারা বলছেন, এই ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তারা কেবল একটি নতুন রাজনৈতিক ধারাই সৃষ্টি করতে চাইছেন না, বরং ঐতিহ্যবাহী সুন্নী মতাদর্শকে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে একীভ‚ত করে একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে আগ্রহী।
তাদের মতে, ৩০০ আসনের টার্গেট হলো বৃহত্তর রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় তাদের পূর্ণ অংশগ্রহণ এবং কর্মীদের চাঙ্গা রাখার একটি কৌশলগত অবস্থান। জোটের শীর্ষনেতারা এজন্য গ্রহণযোগ্য লক্ষ্য ও কৌশল নির্দিষ্ট করেছেন। এর অংশ হিসাবে চলতি মাসে বিভাগে বিভাগে সম্মেলন করবে সুন্নি জোট। ৩ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এ কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। ১২ নভেম্বর চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে সম্মেলন করার কথা রয়েছে। এর মধ্যেই বিভিন্ন এলাকায় সম্ভাব্য প্রার্থী চূড়ান্তের কাজ চলছে বলেও জোটের নেতারা জানিয়েছেন।
জোটের অন্যতম নেতা ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান মাওলানা এম এ মতিন বলেন, প্রথমে প্রতিটি দলের নিজস্ব প্রার্থী ঘোষণা করা হবে, এরপর জোটের পক্ষ থেকে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। কোনও অমিল হওয়ার সুযোগ নেই, আমরা সুশৃঙ্খলভাবে তিনশ আসনে দাঁড়াতে চাই। ইতোমধ্যে অনেকের সাথে (দল-জোট) কথা হয়েছে, তারাও আমাদের সাথে আসতে চায়।
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)- এই তিনটি দলের সমন্বয়ে আত্মপ্রকাশ করা জোটটি আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের ১৭ দফা দাবি ও ২১ দফা ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেছে। তাদের ঘোষিত কর্মসূচির অন্যতম মূল লক্ষ্য হলো- ‘ধর্মীয় মূল্যবোধ ও স্বাধীনতার চেতনার ভিত্তিতে ন্যায়ভিত্তিক, কল্যাণমুখী ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা’ এবং ‘কুরআন-সুন্নাহর আলোকে যুগোপযোগী জাতীয় শিক্ষা নীতি প্রণয়ন’। সুন্নী মতাদর্শী এ জোট একটি রাজনৈতিক বিকল্প হতে চায়। সতীর্থদের মনোবল জোরদার করতে তাদের টার্গেট সব আসনে প্রার্থী দেওয়া। এজন্য জোট সম্প্রসারণের চিন্তাও করছে তারা। তবে অন্য কোন কোন রাজনৈতিক দল এ জোটে যেতে আগ্রহী সে তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে চান না জোটের কোনো নেতা।
জোটের শরিক দল বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান ছৈয়দ সাইফুদ্দীন আল হাসানী বলেছেন, বৃহত্তর সুন্নি জোট আমরা তিনটি দল নিয়ে গঠন করেছি। আমাদের সাংগঠনিক কাজ চলছে। চট্টগ্রামে ১২ নভেম্বর লালদীঘির মাঠে সম্মেলন করার পরিকল্পনা আছে; এরপর প্রতিটি বিভাগে সম্মেলন হবে। নির্বাচনী প্রচারণা শুরু বলা চলে। জোট থেকে আমরা তিনশ আসনে প্রার্থী দেব।
তিনি বলেন, জোটের প্রসার নিয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সংগঠন থেকে যোগাযোগ রয়েছে। দেশের স্বাধীনতা যারা মানেন, তাদের সঙ্গে জোট সম্প্রসারণের সুযোগ থাকতে পারে।
তবে জোটের নেতাদের জন্য সফলতার পথ সহজ হবে না বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, জোটটির সামগ্রিক সফলতা ও টিকে থাকা নির্ভর করবে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর। এর মধ্যে প্রধান শর্তগুলি হলো- প্রার্থী বণ্টন, জোটের কার্যকর সম্প্রসারণ এবং প্রতিটি অঞ্চলের জন্য সুচিন্তিত অঞ্চলভিত্তিক কৌশল নির্ধারণ। এই চ্যালেঞ্জগুলো সঠিকভাবে মোকাবেলা করতে পারলেই জোটটি তাদের ঘোষিত লক্ষ্য অর্জন করতে কিছুটা হলেও সক্ষম হবে বলে মনে করছেন তারা।
উল্লেখ্য, বৃহত্তর সুন্নি জোট গঠন হলেও এই জোটের সবগুলো দলই চট্টগ্রাম ভিত্তিক। চট্টগ্রামের সমাজ ও সংস্কৃতিতে সুন্নি চেতনার গভীর প্রভাব রয়েছে। যার কারণে এ অঞ্চলে একাধিক সুন্নিভিত্তিক রাজনৈতিক দল সক্রিয় উপস্থিতি বজায় রেখেছে। সুন্নিভিত্তিক প্রত্যেকটি দলের সাংগঠনিক সক্রিয়তা ও জনসমর্থন থাকলেও তাদের রাজনৈতিক অবস্থান তুলনামূলকভাবে দুর্বল। জাতীয় সংসদসহ গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনগুলিতে তাদের প্রার্থীরা নিয়মিত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও, এখন পর্যন্ত তারা উল্লেখযোগ্য নির্বাচনী সফলতা অর্জন করতে পারেনি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জামানত হারিয়েছেন। তাদের সামাজিক ও ধর্মীয় প্রভাব ভোটের মাধ্যমে কার্যকর রাজনৈতিক শক্তিতে রূপান্তরের ক্ষেত্র এখনও পর্যন্ত সীমিত।