এম এ হোসাইন
যানজট নিরসনে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় থাকা ‘নর্থ-সাউথ-১’ সংযোগ সড়ক প্রকল্পের প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে শহরের ভেতর দিয়ে না গিয়ে বাইপাস রোড ব্যবহার করে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, ঢাকা কিংবা কক্সবাজারমুখি যানবাহন স্বাচ্ছন্দে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। এতে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর উপর যানবাহনের চাপ অনেকটাই হ্রাস পাবে।
এই সংযোগ সড়কের মোট প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫০০ কোটি থেকে ২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অর্থ ব্যয় হবে জমি অধিগ্রহণ ও বসতবাড়ি সরিয়ে দেওয়ার ক্ষতিপূরণে। মূল সড়ক নির্মাণ ব্যয় তুলনামূলক কম হলেও প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণ বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিচ্ছে।
সড়কটির প্রস্তাবিত দৈর্ঘ্য ৩.৮ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৮০ ফুট। তবে ২০০৮ সালের মাস্টারপ্ল্যানে এটিকে ১২০ ফুট প্রশস্ত আকারে পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এই সড়কটি নগরীর আমবাগান থেকে শুরু হয়ে পশ্চিম খুলশীর মুরগি ফার্ম, জালালাবাদ টাওয়ার হয়ে বায়েজিদ লিংক রোডে গিয়ে মিলবে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল করিম জানান, ২০০৮ সালের মাস্টারপ্ল্যানে ‘অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্প’ হিসেবে এই সড়কটি অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রস্তাবিত সড়কটি নগরীর আমবাগান থেকে শুরু হয়ে পশ্চিম খুলশী, মুরগি ফার্ম ও জালালাবাদ টাওয়ার হয়ে বায়েজিদ লিঙ্ক রোডে গিয়ে মিলিত হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে মূল শহরকে বাইপাস করে গাড়ি সরাসরি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, রাঙামাটি কিংবা খাগড়াছড়িগামী পথে যাতায়াত করতে পারবে। ফলে শহরের অভ্যন্তরে যানবাহনের চাপ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।
২০০৮ সালের চট্টগ্রাম মাস্টারপ্ল্যানে এই সংযোগ সড়কটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিল। নগরীর যানজট নিরসন এবং বিকল্প সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।
এতদিন ধরে প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি মূলত বাজেট স্বল্পতা ও অনুমোদনের জটিলতার কারণে। এবার মন্ত্রণালয়ের সম্মতি আসায় প্রকল্প বাস্তবায়নের পথ উন্মুক্ত হয়েছে।
সিডিএ চেয়ারম্যান জানান, মন্ত্রণালয় কিছু শর্তসহ প্রাথমিকভাবে প্রকল্পে সম্মতি দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র এবং অতিরিক্ত কিছু তথ্য সংযোজন করে প্রস্তাবনাটি পুনরায় দাখিল করা। আমরা সেই আলোকে আরও কিছু কাজ করে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনা তৈরি করে আবার মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো।সড়কটি বাস্তবায়িত হলে শহরের কেন্দ্রস্থল এড়িয়ে বাইপাস রোড দিয়ে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, চন্দ্রনাথ পাহাড়, ফটিকছড়ি, মিরসরাই এমনকি ঢাকা বা কক্সবাজারমুখি যানবাহন চলাচল করতে পারবে। এতে নগরীর গোলপাহাড়, জিইসি, টাইগারপাস, লালখান বাজার, চকবাজার, বহদ্দারহাট এলাকার যানজট অনেকটাই কমে আসবে। বাণিজ্যিক কার্যক্রম হবে গতিশীল, সময় ও জ্বালানি সাশ্রয় হবে এবং দূষণও কিছুটা কমবে।
নর্থ-সাউথ-১ প্রকল্পের পরেই সিডিএর পরিকল্পনায় রয়েছে নর্থ-সাউথ-২ সংযোগ সড়ক। এটি চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার পাশ দিয়ে শরাফাত উল্লাহ পেট্রোল পাম্প, অনন্যা আবাসিক হয়ে কুয়াইশ সংযোগ সড়কের সঙ্গে যুক্ত হবে। এতে করে কাপ্তাই-রাঙামাটিমুখী এবং ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী যানবাহনের জন্য আরও একটি বিকল্প রুট তৈরি হবে।
উল্লেখ্য, নর্থ-সাউথ-১ প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল ২০১৪ সালে। প্রকল্পটি দীর্ঘদিন থেকে সিডিএর তৎপরতার অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছিল। প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নতুন করে সড়ক প্রকল্পটি নিয়ে আবার তৎপরতা শুরু করে সিডিএ।