‘একটি বাড়ি একটি খামার, ঘরে ঘরে চাকরি, ১০ টাকায় চাল আরও অনেক কিছু শুনেছি। আমরা প্রজা ছিলাম। আমরা প্রজাস্বত্ব মেনে নিয়েছিলাম এই জন্য আমাদের একটা কমফোর্টেবল লিভিং হবে। যখন মোহভঙ্গ হয়েছে আমরা দেখলাম কীভাবে ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজড ক্রিমিনালাইজেশন হয়েছে আমাদের দেশে। এ জোটে (নেক্সাস) বিজনেস কমিউনিটি, আমলা, বিচারক, পুলিশ কেউ বাদ ছিল না।’
ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) চট্টগ্রাম শাখার ‘বাংলাদেশের বিকশিত অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে অভিগমন’ শীর্ষক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা দেখলাম, সাবেক রাষ্ট্রপতি যে পরিমাণ হত্যা মামলার আসামিকে ক্ষমা করলেন তা আমাদের ইতিহাসে নেই। খবর বাংলানিউজের
গতকাল বুধবার রেডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউর মোহনা হলে এ সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম উদ্দিন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) সচিব মো. আবদুর রহমান খান, বিএসআরএম গ্রæপের চেয়ারম্যান আলী হোসেন আকবর আলী এবং আইসিএমএবির প্রেসিডেন্ট এবং বিল্ডকন কনসালটেন্সি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহতাব উদ্দিন আহমেদ।
বিগত সরকারের আমলের অর্থনীতির চিত্র তুলে ধরতে একটি কৌতুক বলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এক ভদ্রলোক হাটে গরু বিক্রি করতে গেছেন। উনি গরুর ভালো দাম পাননি। উনি গরুটা ফেরত নিয়ে আসছিলেন। ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেছে। পথিমধ্যে ডাকাত ধরেছে। ডাকাত বললো, টাকা দাও। উনি বললেন, আমার কাছে টাকা নাই, গরুর দাম পাইনি তাই বেচতে পারিনি। ডাকাত উনাকে বেদম প্রহার করে বললো, লাভ হইতো লস হইতো আমার হইতো, তুমি বিক্রি করোনি কেন! বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ২০২৪ এর ৫ আগস্টের আন্দোলনে প্রায় ২ হাজার মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, ৫০ হাজার মানুষ অসুস্থ হয়ে কাতরাচ্ছেন। আমার মনে হয়, অতিদ্রুত বিস্মৃতি হচ্ছে আমাদের। এসব শহীদের মর্যাদা রক্ষায় আইসিএমএবির সদস্যদের যথাযথ দায়িত্ব পালনের আহবান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, শ্বেতপত্রে এসেছে ২৮ লাখ কোটি টাকা এদেশ থেকে চুরি হয়েছে। এর জন্য কি ১০০ সিইও, ৩০০ সিএফও দায়ী নয়? ওই যে বয়ানটা ছিল তাতে আমরা নিষ্ঠুর ছিলাম। কিছু বাচ্চা ছেলের সঙ্গে জনগণ যোগ দিল আন্দোলনে। তারা নতুন বিজয় এনেছে। আবার যদি গতানুগতিকভাবে একই অনুশীলন শুরু করি তাহলে হবে না। তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হয় দরিদ্র অর্থনীতিতে ভ্যাট ও ট্যাক্সের মধ্যে কোলাবেরেশন দরকার।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান থিম পেপার উপস্থাপন করেন। সেমিনার ও সম্মেলন কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শহিদ উদ্বোধনী বক্তব্যে অতিথি ও অংশগ্রহণকারীদের স্বাগত জানান এবং সিবিসি চেয়ারম্যান প্রদীপ পাল সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
মো. আবদুর রহমান খান ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ল্যান্ডস্কেপের চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে এবং অর্থনৈতিক ভিত্তিকে শক্তিশালী করতে, জাতীয় কোষাগারকে সুনির্দিষ্ট জবাবদিহি, স্বচ্ছতা এবং সততার সাথে প্রসারিত করতে জোর দেন। আলী হুসেন আকবর আলী বৈচিত্র্যকরণ, ব্যবসায় স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা এবং পরিবেশগত বিষয়গুলির বিবেচনার পাশাপাশি গ্রাহকের সন্তুষ্টি নিঃসন্দেহে আমাদের অর্থনৈতিক ল্যান্ডস্কেপকে উন্নত করবে বলে মন্তব্য করেন। মাহতাব উদ্দিন আহমেদ এই ক্রান্তিকালে দক্ষ এবং প্রতিশ্রুতিশীল পেশাদাররা টেকসই প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের পথে অর্থনীতিকে সমর্থন করার সুযোগটি সাগ্রহে গ্রহণ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, জননীতি বিশেষজ্ঞ এবং পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সিইও ড. এম. মাসরুর রিয়াজ, ‘টেকসই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার: মুদ্রাস্ফীতি, ঋণ ও রাজস্ব নীতি ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন। সেশনটি পরিচালনা করেন ইনডেক্স গ্রুপ অব কোম্পানিজের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মামুনুর রশিদ। আলোচনা করেন লিভারনগিয়ার লিমিটেডের ডিরেক্টর ও সিইও মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং আলম এম জামান অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস-এর সিনিয়র পার্টনার ইমতিয়াজ আলম। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং সিআইইউ বিজনেস স্কুলের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের প্রধান ড. ইমন কল্যাণ চৌধুরী ‘বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার জন্য স্থানীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা: কৌশলগত ব্যয় ব্যবস্থাপনার ভূমিকা’ শীর্ষক আরেকটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন। সোনালী ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান মুসলিম চৌধুরী সেশনটি পরিচালনা করেন। আলোচনা করেন শান শিং গ্রুপের গ্রুপ সিএফও এবং কোম্পানি সেক্রেটারি মো. কাউসার আলম, এডিসন লজিস্টিকস বিজনেসের সিইও এবং আইসিএমএবির কাউন্সিল সদস্য মো. মাকসুদুর রহমান এবং লংকাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেডের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং হেড অব অপারেশন্স একেএম কামরুজ্জামান।