নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) চট্টগ্রাম নগরের উত্তর কাট্টলীতে স্যুয়ারেজ প্রকল্পসহ ১২ হাজার ৫৩২ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয় সংবলিত ১৩ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে উত্তর কাট্টলী ক্যাচমেন্ট স্যানিটেশন (স্যুয়ারেজ) প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে চট্টগ্রাম ওয়াসা।
গতকাল রবিবার প্রধান উপদেষ্টা ও একনেক চেয়ারপারসন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
একনেকে গতকাল অনুমোদন দেয়া ১২ হাজার ৫৩২ কোটি টাকার প্রকল্পের মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৪ হাজার ৯৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ ৭ হাজার ৩২৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ও সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১ হাজার ১০৬ কোটি ১০ লাখ টাকা।
চট্টগ্রাম ওয়াসা নগরীতে ৬টি ক্যাচমেন্ট এলাকায় স্যুয়ারেজ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এরমধ্যে দু’টি ক্যাচমেন্ট ছাড়া (ক্যাচমেন্ট ৩ এবং ৬) অবশিষ্ট ৪টি ক্যাচমেন্ট একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
‘উত্তর কাট্টলী ক্যাচমেন্ট স্যানিটেশন প্রকল্প’টির ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৭৯৭ দশমিক ২১৫২ কোটি টাকা। যার মধ্যে সরকারি টাকা ৩৬২ দশমিক ০৩৫০ কোটি এবং অবশিষ্ট টাকা হচ্ছে ফ্রান্স ভিত্তিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এফডি’র। ২০২৫ এর জানুয়ারি থেকে ২০২৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫ বছর মেয়াদি এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে উত্তর কাট্টলী এলাকার ৩ লক্ষ মানুষ সুবিধাভোগ করবেন।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আনোয়ারা পাশা জানান, আজকের (গতকাল) একনেকের সভায় আমাদের ওয়াসার ‘উত্তর কাট্টলী ক্যাচমেন্ট-৫ স্যানিটেশন প্রকল্প’ অনুমোদন হয়েছে। নগরীতে ৬টি ক্যাচমেন্টের মাধ্যমে স্যূয়ারেজ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ‘উত্তর কাট্টলী ক্যাচমেন্ট-৫ স্যানিটেশন প্রকল্পের’ জন্য ভ‚মি অধিগ্রহণ করতে হবে না। এই প্রকল্পের ভ‚মি আগেই অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে উত্তর কাট্টলী এলাকার ৩ লাখ মানুষ উন্নত স্যানিটেশন সুবিধা পাবেন। প্রকল্পটির কাজ দ্রæত শুরু হবে। এখন আমরা কনসালটেন্ট নিয়োগ দেবো। এরপর ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হবে। কালুরঘাট এবং পূর্ব বাকলিয়ায় ক্যাচমেন্ট ২ এবং ৪ এর জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে। ভূমি অধিগ্রহণের জন্য আবার প্রকল্প নিতে হবে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী স্যুয়ারেজ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, ‘চট্টগ্রাম ওয়াসার উত্তর কাট্টলী ক্যাচমেন্ট-৫ স্যানিটেশন প্রকল্পটি’ একনেকে অনুমোদন পেয়েছে। এই প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে চট্টগ্রাম শহরের উত্তর কাট্টলী এলাকার প্রায় তিন লক্ষ জনগণকে উন্নত স্যানিটেশন সেবার আওতায় আনা।
৬টি ক্যাচমেন্টের মাধ্যমে সমগ্র চট্টগ্রাম শহরকে পর্যায়ক্রমে একটি পরিকল্পিত স্যানিটেশন ব্যবস্থার আওতায় আনয়নের লক্ষ্যে স্যুয়ারেজ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।জানা গেছে, উত্তর কাট্টলী ক্যাচমেন্ট-৫ স্যানিটেশন প্রকল্পের মাধ্যমে এলাকাটি থেকে গৃহস্থালির পয়োঃবর্জ্য সংগ্রহ ও পরিশোধন করা এবং পানির উৎসের দূষণ, বৃষ্টির পানির সাথে পয়োঃবর্জ্যরে মিশ্রণজনিত দূষণ এবং গ্রীণ হাউস গ্যাস নির্গমনের ঝুঁকি থেকে পরিবেশকে রক্ষা করার মাধ্যমে চট্টগ্রাম মহানগরীর জনগণের জীবনযাত্রার মান, পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে অবদান রাখা।
এর আগে গত ২০২৩ সালের ২২ জুন দাতাসংস্থা এফডির সাথে অর্থায়ন সংক্রান্ত ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম নগরে বর্তমানে কোনো পয়োঃনিষ্কাশন ব্যবস্থ্য নেই। মহানগরীতে পয়োঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার সূচনা এবং ক্রমান্বয়ে সকল নগরবাসীকে আধুনিক পয়োঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার আওতায় আনয়নের লক্ষ্যে ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসা স্যানিটেশন মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করে। আগামি ৩০ বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীর ওয়েস্ট ওয়াটার সংগ্রহ ও পরিশোধন অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ চিহ্নিত করা হয়েছে এই মাস্টার প্ল্যানে। যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের সুপারিশ রয়েছে। প্রণীত মাস্টার প্ল্যানে পুরো মহানগরীকে ৬টি ক্যাচমেন্ট এলাকায় ভাগ করে প্রতিটি ক্যাচমেন্ট এলাকার পয়ো:বর্জ্য পরিশোধনে ১টি পয়োঃশোধনাগার (এসটিপি) এবং পুরো শহরের জন্য ২টি ফিক্যাল স্ল্যাজ শোধনাগার ব্যবস্থাপনের সুপারিশ করা হয়।
প্রকল্পের প্রধান প্রধান কার্যক্রম গুলো হলো ৫০ হাজার ঘনমিটার (দিনে) ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পয়োঃশোধনাগার, ৯৮ কিলোমিটার দীর্ঘ পয়ো:পাইপ লাইন স্থাপন, ৮১০০টি গৃহ সংযোগ লাইন, অনসাইট স্যানিটেশন এবং ফিক্যাল স্ল্যাজ ম্যানেজমেন্ট কার্যক্রম, স্বাস্থ্য সম্মত ল্যাট্রিন, কমিউন্যাল সেপটিক ট্যাংক, পাবলিক টয়লেট ও ডিইডবলিওএটিএস নির্মাণ ও পুনর্বাসন কাজ ৭৯৭টি।
গতকাল রবিার অনুষ্ঠিত একনেক সভায় উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ; পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ; আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল; পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন; স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান; পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান; তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভ‚ঁইয়া; নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন প্রমুখ।