রেল কর্তৃপক্ষ ট্রেন লাইনচ্যুতির পেছনে নাজুক রেলপথ ও সেতুকে দায়ী করছে। যে কারণে রেলসেতু ও রেললাইন সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দুর্ঘটনা হ্রাস, যাত্রীসেবার মান, পণ্য পরিবহন ও রেলওয়ের রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে ২৪টি রেললাইন সংস্কারে প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের রেলপথ পুনর্বাসন’ এই প্রকল্পের জন্য এক হাজার ৯৩১ কোটি টাকা চেয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর এই ডিপিপি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। এর আগে ৫০৫টি সেতু সংস্কারে আরো একটি ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখাতে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. সবুক্তগীন পূর্বদেশকে বলেন, রেললাইন সংস্কারে একটি বড় প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত স্লিপার, অধিক ক্ষয়প্রাপ্ত রেললাইন ও অন্যান্য ফিটিংস পরিবর্তনসহ যেখানে যে সমস্যা আছে সব সংস্কার করা হবে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দুর্ঘটনা এড়িযে সুষ্ঠূ ও নিরাপদে ট্রেন চলাচল সম্ভব হবে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে বর্তমানে এক হাজার ৩৩৩ দশমিক ৯৩ কিলোমিটার রেলপথ আছে। সুষ্ঠু ও নিরাপদ ট্রেন চলাচলের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের স্বার্থে রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত স্লিপার, অধিক ক্ষয়প্রাপ্ত রেল ও অন্যান্য ফিটিংস পরিবর্তনসহ ঘাটতি বালাস্ট (নুড়ি) পূরণ, মেশিনারিজ সংস্কার ও কোনও কোনও সেকশন সম্পূর্ণভাবে নবায়ন প্রয়োজন। ট্রেন যাতায়াত নিরাপদ ও আরামদায়ক করার স্বার্থে রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ লেভেল ক্রসিং এবং স্টেশন এলাকার পয়েন্ট এন্ড ক্রসিং এ উডেন ¯িøপার এর পরিবর্তে পিএসসি স্লিপার স্থাপন জরুরি। এরমধ্যে পূর্বাঞ্চলের নতুন নতুন রেলপথ নির্মিত হলেও নতুন নির্মিত রেলপথ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনও স্থায়ী লোকবলের সংস্থান করা যায়নি। যে কারণে রেলপথ নবায়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ সংশ্লিষ্ট রেল ও ফিটিংস স্লিপার ও বালাস্ট ব্যয়বহুল হওয়ায় রেভিনিউ বাজেটের আওতায় বিদ্যমান রেলপথ সংস্কার সম্ভব হচ্ছে না। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে। যাত্রীরা পাবে নিরাপদ রুট।
এ প্রকল্পের আওতায় ২৪টি ক্ষতিগ্রস্ত ও অধিক গুরুত্বপূর্ণ রেললাইন সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলো হলো- চট্টগ্রাম-সীতাকুন্ড, চট্টগ্রাম-ষোলশহর, ষোলশহর-দোহাজারি ও ষোলশহর-ফতেয়াবাদ, চট্টগ্রাম-ফতেয়াবাদ-নাজিরহাট, সীতাকুন্ড-চিনকি আস্তানা (আপ-ডাউন), চিনকি আস্তানা-লাকসাম (আপ-ডাউন), লাকসাম-নোয়াখালী, লাকসাম-চাঁদপুর, জয়পুরহাট-শ্রীপুর, টাঙ্গাইল-নরসিংদি (আপ-ডাউন), টাঙ্গাইল-জয়পুরহাট, শ্রীপুর-ময়মনসিংহ, ময়মনসিংহ-গৌরিপুর, গৌরিপুর-আঠারবাড়ি, ময়মনসিংহ-ব্রাহ্মণবাড়িয়া, জামালপুর-সরিষাবাড়ি, আখাউড়া-আশুগঞ্জ, আখাউড়া-সিলেট, সিলেট-ছাতকবাজার, আশুগঞ্জ-নরসিংদি (আপ-ডাউন), ভৈরব-আঠারবাড়ি-গৌরিপুর রেলপথ সংস্কার করার প্রস্তাবনা করা হয়েছে।
জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রাম রেলপথের আখাউড়া-সিলেট অংশে গত ছয়মাসে ১৪ বার ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে গত বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে চারটি এবং ৫ ও ১৩ ফেব্রূয়ারি ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ায় দীর্ঘ সময় ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। এ সড়কের বিভিন্ন স্থানে নেই স্লিপার, এমনকি নাট-বল্টূও নড়বড়ে। বৃষ্টি হলেই এ রেলপথে ঝুঁকি বাড়ে বেশি। তবুও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ত্রূটিপূর্ণ এমন লাইন ব্যবহার করেই বছরের পর বছর ধরে ট্রন চলাচল করছে সিলেট-আখাউড়া রেলপথে। কখনো কখনো দুর্ঘটনা হলেই বন্ধ থাকে ট্রেন চলাচল। এতে ভোগান্তি বাড়ে মানুষের।
পূর্বাঞ্চলের ট্র্যাক সাপ্লাই অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, মোট ২৪টি রেলপথ সংস্কারে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এ প্রকল্পটি সমাপ্তির পর পূর্বাঞ্চলের রেলপথ সংস্কার হলে দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে। রেলপতের গতিবৃদ্ধিও ফলে ভ্রমণ সময়ও কমবে। যে সুবিধা বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীসহ দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ভোগ করবেন।











