নিজস্ব প্রতিবেদক
স্থানীয় সরকার বিভাগের সিদ্ধান্তের দিকে চেয়ে আছেন চট্টগ্রামের ১৯১ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা। ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের পৃথক পৃথক প্রজ্ঞাপনে চট্টগ্রামের জন ৩১৯ জনপ্রতিনিধি অপসারণ হওয়ার পর ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের মধ্যেও অপসারণ আতঙ্ক বিরাজ করছে। যে কোন দিন অপসারণ হতে পারেন ১৯১ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও দুই হাজার ২৯২ জন সদস্য (মেম্বার)। যদিও গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর অধিকাংশ চেয়ারম্যান আত্মগোপনে থাকায় পরিষদের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিভিন্ন পরিষদে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্যানেল চেয়ারস্যান ও সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিয়ে সনদ সরবরাহের মতো জরুরি সেবা দেয়া হচ্ছে।
দলীয় প্রতিকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরাই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এসব নির্বাচন নিয়ে কারচুপির অভিযোগ রয়েছে। কয়েকটি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত নেতারা। ২০১৮ সালের পর থেকে বিএনপি ও জামায়াত দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করলেও দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বেশ কয়কজন বিএনপি-জামায়াত নেতা নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছেন। বিএনপি-জামায়াত অনুসারি চেয়ারম্যানরা পরিষদে গেলেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত জনপ্রতিনিধিরা আত্মগোপনে থাকায় ইউনিয়ন পরিষদে লাখ লাখ জনগণ নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যে কারণে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের অপসারণের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।
গত সপ্তাহে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেছেন, স্থানীয় সরকারের সংস্কারের দাবিগুলো উত্থাপন করা দরকার নির্বাচিত সরকারের কাছে। জাতীয় থেকে স্থানীয় সরকার সকল পর্যায়ে নির্বাচন ব্যবস্থাকে যথাযথভাবে কার্যকর করতে হবে। দলীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানকে মুক্ত করতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদগুলোর চেয়ারম্যানদের এখনই অপসারণ করা হচ্ছে না। এক্ষেত্রে যে সব জায়গায় চেয়ারম্যানরা অনুপস্থিত রয়েছেন সেখানে কাজ চালিয়ে নিতে প্যানেল চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব পালন করতে পরিপত্র জারি করা হয়েছে। আগামীতে পর্যায়ক্রমে সব চেয়ারম্যান অপরসারণ করা হবে।
জানা যায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলা ও নগরে দুই হাজার ৮০০ জনের মতো জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। ২০২১ সালের পর থেকে গত জুন পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে এরা নির্বাচিত হন। ইতোমধ্যে চসিক মেয়র, কাউন্সিলর, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র কাউন্সিলর মিলে ৩১৯ জনকে অপসারণ করা হয়েছে। এছাড়াও ১৯১ ইউনিয়ন পরিষদে ১৯১ জন চেয়ারম্যান ও দুই হাজার ২৯২ জন সদস্য (মেম্বার) নির্বাচিত মেম্বার আছে। ২০২১ সালে নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত কয়েক ধাপের নির্বাচনে এরা বিজয়ী হন।
চট্টগ্রামের দুইজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, একজন ইউএনও’র অনেক কাজ। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতির পর চেয়ারম্যানরা সরে থাকায় পরিষদের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। যে কারণে পরিষদের কার্যক্রম দেখভাল করতে আমাদের বাড়তি সময় দিতে হচ্ছে। কাজের চাপ বেড়েছে এটা ঠিক। তবে কিছু মানুষতো সেবা পাচ্ছে। এখনো আত্মগোপনে থাকা অনেক চেয়ারম্যান পরোক্ষভাবে পরিষদে হস্তক্ষেপ করছে। শৃঙ্খলা ফেরাতে পরিষদ ভেঙে দিয়ে স্থানীয় সরকারের নাগরিক সেবা সাধারণ মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে দ্রুত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব দেয়া প্রয়োজন।
চট্টগ্রাম স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. সাদি উর রহিম জাদিদ বলেন, অনুপস্থিত চেয়ারম্যানগণের কাজ পরিচালনা ও জনসেবা অব্যাহত রাখতে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ নির্দেশনার আলোকেই কাজ চলছে। নতুন করে কোন নির্দেশনা আসলে সেভাবেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকেও ইউপি চেয়ারম্যানদের পদত্যাগের দাবি তোলা হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই চেয়ারম্যানরা বিগত হাসিনা সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট। তাদের পরোক্ষ সহায়তায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত হতে পারে।