খালেদ মনছুর, আনোয়ারা
আনোয়ারা-কর্ণফুলী-চট্টগ্রাম সড়কে বেড়েছে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা। গত কয়েকমাস ধরে রাতের বেলা এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। তবে হয়রানি আর অজানা ভয়ে অনেকে থানায় অভিযোগ দিতে সাহস করেন না। ছিনতাইকারী আর ডাকাতদের টার্গেট, সিএনজি অটোরিকশার যাত্রীরা। চট্টগ্রাম শাহ আমানত সেতু, মইজ্যারটেক, ক্রসিং, চাতরী চৌমুহনী ও শোলকাটা রাস্তার মাথা এলাকায় এসব সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী আর ডাকাতরা ওঁৎ পেতে থাকে শিকারের আশায়। সুযোগ বুঝে তারা শিকারিকে সিএনজি অটোরিকশায় কয়েকজনে ঘিরে ধরে ছুরি বা অন্যান্য অস্ত্র দেখিয়ে টাকা পয়সা, মোবাইলসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে নির্জন এলাকায় ছেড়ে দেয়। আবার কখনো ভাড়া করে নির্জন এলাকায় নিয়ে গিয়ে চালককে হত্যা করে সিএনজি অটোরিকশাটাই নিয়ে যায়।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর কর্ণফুলী উপজেলার কলেজবাজার এলাকায় মো. দেলোয়ার হোসেন (৪০) নামে এক বিকাশ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে আহত করে সাড়ে তিন লাখ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়েছে ছিনতাইকারীরা। দেলোয়ার রাতে আনোয়ারার চাতরী চৌমুহনী বাজারে তার দোকান ‘সাথী এন্টারপ্রাইজ’ বন্ধ করে বাড়ি ফিরছিলেন। শিকলবাহা ক্রসিং মোড়ে পৌঁছালে পেছন থেকে কয়েকজন দুর্বৃত্ত তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করে। তিনি মাটিতে পড়ে গেলে হামলাকারীরা তার টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। ওই ব্যাগে সাড়ে তিন লাখ টাকা এবং বিকাশ ও নগদের লেনদেনে ব্যবহৃত পাঁচটি মোবাইল ফোন ছিল বলে জানান দেলোয়ার। এ ঘটনায় কর্ণফুলী থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়। তবে অন্য আসামিরা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি।
গত ১৯ অক্টোবর চাতরী চৌমুহনী বাজারের পাশের আমিন বাড়ী এলাকার আব্দুস শুক্কুর নামের অপর এক ফার্নিচার ব্যবসায়ী রাত সাড়ে আটটায় ক্রসিং থেকে শান্তির হাটের সিএনজি অটোরিকশাতে উঠেন। পেছনের সিটে দুইজন লোক আগে থেকে বসা ছিল। কিছুদূর যাওয়ার পর আরো দুইজন লোক উঠে তাকে গলায় ছুরি ধরে দেহের বিভিন্ন স্থানে স্কু ড্রাইভার দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জখম করে দুইটি মোবাইল, নগদ বিশ হাজার টাকা নিয়ে ফাজিল খাঁর হাট এলাকায় এনে ফেলে যায়। তবে এ ঘটনায় তিনি থানায় কোনো অভিযোগ দেননি।
এর আগে চাতরী এলাকার আইয়ুব নামের এক ব্যবসায়ীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে বাড়ী থেকে বিকাশের মাধ্যমে পঞ্চাশ হাজার টাকা আনিয়ে তারপর ছেড়ে দেয়। আরো বেশি টাকা দেওয়ার জন্য তাকে ছিনতাইকারীরা বেধড়ক মারধর করে বলে জানা যায়।
গত ১৪ আগস্ট আনোয়ারার চাতরী চৌমুহনী বাজার থেকে এক সিএনজি অটোরিকশা চালককে ভাড়া করে বরুমচড়া বেড়িবাঁধ এলাকায় নিয়ে গিয়ে জবাই করে হত্যা করে সিএনজি অটোরিকশাটি নিয়ে যায়। এসময় তার দুই চোখও উপড়ে ফেলে ছিনতাইকারীরা। তবে এ ঘটনায় আসামিদের চিহ্নিত করে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ছিনতাইয়ে মোট ছয়জন অংশ নিয়েছিল বলে জানা গেছে।
এভাবে কর্ণফুলী ও পটিয়া উপজেলার যাত্রীদের সাথে ২০টিরও অধিক ঘটনা ঘটেছে। তবে অনেকে হয়রানির ভয়ে থানায় অভিযোগ দিতে চান না।
আনোয়ারা-কর্ণফুলী-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পটিয়াসহ তিন থানার আওতায়। আন্তঃজেলা ছিনতাইকারীরা শাহ আমানত সেতু, মইজ্যারটেক ও ক্রসিং এলাকায় অবস্থান করে সেখান থেকে টার্গেট করা যাত্রীকে নিয়ে কখনো আনোয়ারায় কখনো পটিয়ায় আবার কখনো কর্ণফুলী উপজেলার নির্জন এলাকায় নিয়ে গিয়ে টাকা-পয়সা, মোবাইলসহ মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নেয়। আবার অনেক সময় মহাসড়কে চলন্ত অবস্থায়ও সবকিছু হাতিয়ে নিয়ে সুবিধামত স্থানে ফেলে দিয়ে চলে যায়।
সচেতন মহল মনে করেন, আনোয়ারা-কর্ণফুলী-চট্টগ্রাম মহাসড়কের এসব ছিনতাইতারীদের অপরাধ দমনে মহাসড়কে পটিয়া-আনোয়ারা-কর্ণফুলী থানার টহল বাড়ানো প্রয়োজন। পাশাপাশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আলোর ব্যবস্থা ও সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করে এসব ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের চিহ্নিত করে দ্রæত আইনের আওতায় আনলে মহাসড়কে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম অনেকাংশে কমে আসবে।
কর্ণফুলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সদ্য যোগদান করেছি। বিষয়টি সিরিয়াসলি নিয়ে কাজ শুরু করব। প্রয়োজন হলে পুলিশের টহল আরো বাড়ানো হবে।’
আনোয়ারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মনির হোসেন জানান, ‘ছিনতাইকারীদের চক্রগুলো মইজ্যারটেক, কলেজবাজার, ক্রসিংয়ে অবস্থান করে। আনোয়ারায়ও তাদের সোর্স আছে। এসব কাজের সাথে সিএনজি অটোরিকশার চালকরাও জড়িত। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। ইতিমধ্যে আনোয়ারায় এক সিএনজি চালককে হত্যা করে তার অটোরিকশা নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় আমরা চারজনকে গ্রেপ্তার করেছি। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।’
সিএমপি কর্ণফুলী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার জাহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। মহাসড়কে ছিনতাইরোধে আরো আন্তরিকভাবে কাজ করবে পুলিশ।’











