পূর্বদেশ ডেস্ক
ঢাকার রূপনগরের শিয়ালবাড়ি এলাকায় পোশাক কারখানা ও রাসায়নিকের গুদামে লাগা ভয়াবহ আগুনের নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ জনে। তবে তাদের পরিচয় এখন পর্যন্ত শনাক্ত সম্ভব হয়নি। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, আগুনে নিহতদের মুখ পুরো ঝলসে যাওয়ায় পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষা লাগবে।
এ ঘটনায় এখনো অনেকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনেরা। অগ্নিকান্ডের পর ঘটনাস্থল ও আশপাশের হাসপাতালগুলোতে নিখোঁজ স্বজনদের খুঁজে ফিরছেন অসংখ্য মানুষ। অনেকে প্রিয়জনের ছবি হাতে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, রূপনগরে আগুনের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৬ জন হয়েছে। প্রথমে ৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল, পরে আবার ৭ জনের মরদেহ নতুন করে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে।
আগুন লাগা রাসায়নিক কারখানা থেকে এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত ধোঁয়া বের হচ্ছিল। তবে পোশাক কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
আগুন লাগা চারতলা ভবনটিতে আর এন ফ্যাশন। পাশেই শাহ আলমের রাসায়নিকের গুদাম। সকাল ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে এখানে আগুন লাগে। তবে পোশাক কারখানা নাকি রাসায়নিক গুদামে আগুনের সূত্রপাত হয় তা জানা যায়নি। পোশাক কারখানায় ২৫০ থেকে ৩০০ লোক কাজ করেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এদিকে, নিহত ১৬ জনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল থেকে জানা যায়, অধিকাংশ লাশই আগুনে পোড়া। তাদের মধ্যে নারী সাতজন ও পুরুষ নয়জন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) মো. ফারুক বলেন, রাত ৮টা ৩০ মিনিটে কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্সে ১৬ লাশ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
ঢাকা মেডিকেলের কয়েকজন বলেন, ১৬ লাশের মধ্যে অধিকাংশই আগুনে অনেক পোড়া। তবে তাদের লিঙ্গ শনাক্ত করা গেছে। তাদের মধ্যে সাতজন নারী ও নয়জন পুরুষ।
এ ঘটনায় দগ্ধ হয়ে তিনজন জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান।
এর আগে, বেলা পৌনে ১২টার দিকে রূপনগরের শিয়ালবাড়ি এলাকার ওই রাসায়নিকের গুদাম এবং পাশের পোশাক কারখানায় আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। পর্যায়ক্রমে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট সেখানে নিয়ে আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়। তারা পোশাক কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও রাসায়নিকের গুদামে সন্ধ্যার পরও আগুন জ্বলছিল।
ফায়ার সার্ভিস শুরুতে বলেছিল, রাসায়নিকের গুদামের নাম কসমিক ফার্মা। তবে পরে ফায়ার সার্ভিসের বোর্ডে নাম লেখা হয় ‘শাহ আলম কেমিকেলস’। আবার স্থানীয় কয়েকজন বলেছেন, ওই গুদামের নাম ‘আলম ট্রেডার্স’।
পাশের পোশাক কারখানার নাম কেউ বলেছেন আরমান গার্মেন্টস, আবার কেউ বলেছেন জি এম ফ্যাশনস। সেখানে একাধিক পোশাক কারখানা ছিল কি না, ফায়ার সার্ভিস তা নিশ্চিত করতে পারেনি।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, গার্মেন্টস অংশে সার্চিং অপারেশন শেষ হয়েছে। সেখানকার দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা থেকে ১৬টি মৃতদেহ পেয়েছি।
তাজুল ইসলাম বলেন, মৃতদেহগুলো এমনভাবে পুড়েছে, তাদের শনাক্ত করা সম্ভব নয়। আমার মনে হয় ডিএনএ টেস্ট ছাড়া কোনোভাবেই শনাক্ত করা সম্ভব না।
প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে তিনি বলেন, চারতলা গার্মেন্ট কারখানার উপরে ছাদ টিনের। ছাদে যাওয়ার জন্য সেখানে একটি গ্রিলের দরজা রয়েছে। সেটি তালা মারা ছিল। এ কারণে তারা উপরের দিকে যেতে পারেননি।
আপনারা জানেন যে পরিমাণ কেমিকেল বিস্ফোরণ, সেটার ফ্ল্যাশওভারে টক্সিক গ্যাসের কারণে আকস্মিকভাবে উনারা সেন্সলেস হয়েছে। পরে তারা সরতে পারেননি। উপরে যেতে পারেননি, নিচেও যেতে পারেননি।
রাসায়নিক গুদামের আগুন গতকাল রাত ৮টার পরও নিয়ন্ত্রণে আসেনি জানিয়ে এই ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, সেখানেও মৃতদেহ থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন তারা।
তিনি বলেন, গার্মেন্টস এবং কেমিকেল গুদামের কোনটিরই অনুমোদন ছিল না, কোন ধরনের ফায়ার সেইফটি প্ল্যান ছিল না।
আর আগে বিকালে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তাজুল ইসলাম বলেন, ফায়ার কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই প্রতিষ্ঠানে একসঙ্গে আগুন দেখেছেন। কেমিকেল গোডাউনে নাকি গার্মেন্টস কারখানা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, আমাদের অপারেশন এখনও চলমান রয়েছে। অপারেশন কমপ্লিটের পর ডিটেইল জানতে পারব।
কারখানার কারো সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, যতটুকু জেনেছি, এটা আলম কেমিকেল ফ্যাক্টরি, সবাই বলে। কিন্তু এখন মালিকের কোনো মোবাইল ফোন অথবা মালিকের কোনো কর্মচারী ম্যানেজার কাউকেই পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ এবং আর্মি সবাই চেষ্টা করছে, (কারখানার) কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না
সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৬টি লাশ উদ্ধারের তথ্য দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। সবগুলো লাশ উদ্ধার হয়েছে পোশাক কারখানা ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা থেকে।
অগ্নিকান্ডে মৃত্যুর ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার শোক : এদিকে মিরপুরের রূপনগরে শিয়ালবাড়িতে একটি পোশাক কারখানা ও রাসায়নিকের গুদামে অগ্নিকান্ডে বহু হতাহত ও মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
তিনি বলেন, এই দুর্ঘটনায় নিরীহ মানুষের মৃত্যু অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও হৃদয়বিদারক। আমরা এই শোকের সময়ে তাদের পরিবারের পাশে আছি।
প্রধান উপদেষ্টা অগ্নিকান্ডে আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দেন।











