পূর্বদেশ ডেস্ক
আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম-খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের তিন মামলায় হেফাজতে থাকা ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ গতকাল বুধবার সকালে এ আদেশ দেয়। যাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে তাদের মধ্যে দশজন র্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলে আটকে রেখে নির্যাতনের মামলা আসামি।
তারা হলেন, র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, র্যাবের সাবেক পরিচালক (ইন্টেলিজেন্স উইং) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান জুয়েল, র্যাবের সাবেক পরিচালক (ইন্টেলিজেন্স উইং) লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (এখন অবসরকালীন ছুটিতে), র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) কর্নেল কে এম আজাদ, র্যাবের সাবেক পরিচালক (ইন্টেলিজেন্স উইং) কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক (সিটিআইবি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিক, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক (সিটিআইবি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজাহার সিদ্দিক, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক (সিটিআইবি) মেজর জেনারেল শেখ মো.সারওয়ার হোসেন। বাকি দুজন এক সময় বিজিবিতে দায়িত্বরত ছিলেন। জুলাই অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা-বনশ্রীতে ২৮ জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আসামি তারা।
এরা হলেন, বিজিবির সাবেক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম ও বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা মেজর রাফাত বিন আলম মুন। এই তিন মামলার ২৮ আসামির মধ্যে বাকিদের পলাতক দেখিয়ে আদালতে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
তাদের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ছাড়া বাকি ১০ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তা। শেখ হাসিনার সাবেক প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিকীও আছেন তাদের মধ্যে।
এদিকে, আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম-খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের তিন মামলায় কারাগারে পাঠানো সেনা কর্মকর্তাদের নির্দোষ দাবি করেছেন তাদের আইনজীবী।
শুনানি শেষে আসামিদের আইনজীবী এম সরোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে তারা আত্মসমর্পণ করেছেন। তারা বিচারের মুখোমুখি হতে চান। তারা এই অপরাধ ‘সংঘটিত করেন নাই’। এখানে একজন অ্যাপ্রæভার-রাজসাক্ষী। তিনি বলেছেন, যা কিছু হয়েছে সব আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং শেখ হাসিনার নির্দেশে হয়েছে। তাদের এই ঘটনার ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না।
যেহেতু তাদের নাম এখানে এসেছে, চার্জ দাখিল করা হয়েছে। তারা এই ট্রায়াল ফেস করে জনগণের সামনে দেখাবে যে তারা কতটুকু অপরাধ করেছে, করেছে কি করে নাই। তাদেরকে সাবজেলে নেওয়া হবে বলে আমরা জেনেছি।
আদেশের পর ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, দুটি মামলায় আজ (বুধবার) ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ১০ জন র্যাবের টিএফাই সেলে নির্যাতনের মামলায়। তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রধান কৌঁসুলি বলেন, দ্বিতীয় যে মামলাটি সেটি হলো জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে ২০১৬ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বেশ কয়েকজন বন্দিকে বন্দিশালায় আটকে নির্যাতন করা হয়েছিল। সেই অভিযোগেও যাদেরকে আটক করা হয়েছিল আদালত তাদেরকেও কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে। আগামী ২০ নভেম্বর এ মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এই আসামিদের গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজিরের ব্যাপারে সেনাবাহিনী সহায়তা দিয়েছে বলে জানান তাজুল ইসলাম।
এর আগে, হেফাজতে থাকা ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে গতকাল সকাল ৭টার পর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে কারা কর্তৃপক্ষের প্রিজনভ্যানে করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। প্রিজনভ্যান থেকে নামিয়ে পুলিশ সদস্যরা তাদের ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় নিয়ে যান। এ সময় সেনা কর্মকর্তাদের সাধারণ পোশাকে দেখা যায়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই তিন মামলায় ২৮ আসামির বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের দেওয়া আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়ে গত ৮ অক্টোবর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এরপর ১১ অক্টোবর সেনা সদরের এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় তিন মামলার ২৮ আসামির মধ্যে চাকরিতে থাকা এবং এলপিআরে যাওয়া ১৫ জনকে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। পরে তাদের রাখার জন্য ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে অস্থায়ী ‘কারাগার’ ঘোষণা করে সরকার।











