এম এ হোসাইন
মহানগর যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার ১০ মাসেও আলোর মুখ দেখেনি নতুন কমিটি। গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিটকে কেন্দ্র করে বারবার আলোচনা হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও ঝুলে আছে। এতে সাংগঠনিকভাবে পিছিয়ে পড়ছে যুবদল, মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে হতাশা।
গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর চান্দগাঁও এলাকায় একটি টার্ফ দখল নিয়ে যুবদলের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে একজন নিহত হন। নগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মোশাররফ হোসেন ও কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মো. আমিনের অনুসারীরা ওইদিন সংঘর্ষে জড়ান। ওই ঘটনায় তাদেরকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ দলীয় সকল পদ থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় যুবদল। একইসাথে বিলুপ্ত ঘোষণা করে মহানগর যুবদলের আওতাধীন সকল কমিটি।
ওই সময় বিলুপ্ত হওয়া কমিটির সভাপতি ছিলেন মোশাররফ হোসেন দীপ্তি এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মোহাম্মদ শাহেদ। যদিও দীপ্তি-শাহেদের ওই কমিটি নানা কারণে সেরা কমিটির তকমা পেয়েছিল। কিন্তু কমিটির দুই সদস্যের বিরোধ পুরো নগর যুবদলকে দীর্ঘ ১০ মাস কমিটি বিহীন করে রেখেছে। কমিটি বিলুপ্তির পর পরই বলা হয়েছিল, শিগগিরই একটি আহব্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হবে এবং ওয়ার্ড ও থানায় পুনর্গঠন শেষে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হবে। কিন্তু বাস্তবে সেটি হয়নি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আহব্বায়ক কমিটির খসড়া তালিকা চূড়ান্ত হলেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের চ‚ড়ান্ত সম্মতির অপেক্ষায় রয়েছে কেন্দ্র। তৃণমূল নেতারা বলছেন, নেতৃত্ব ছাড়া সংগঠন চলছে এক ধরনের অরাজকতায়। যুবদলের মাঠের কর্মসূচিগুলোও এখন অনেকটা নিষ্ক্রিয়।
যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম সোহেল বলেন, জুলাই মাসে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ নিয়ে আমাদের অনেক কার্যক্রম রয়েছে। তাই এ মাসে কমিটি ঘোষণার সম্ভাবনা কম। তবে চট্টগ্রাম মহানগরের কমিটি প্রস্তুত আছে। কেবল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে সভাপতির কনসালটেশন বাকি। এরপর যেকোনো সময় কমিটি ঘোষণা করা হবে। চট্টগ্রাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আশা করছি বেশি দেরি হবে না।
সূত্র বলছে, একটি খসড়া কমিটি প্রায় চূড়ান্ত করেছিল কেন্দ্র। কিন্তু তা ঘোষণায় স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের তদবিরের কারণে দীর্ঘায়িত হচ্ছে। কাকে নেতৃত্বে রাখা হবে, তা নিয়ে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে এমনটা হচ্ছে। সিনিয়র নেতাদের অনুসারীদের স্থান দেওয়ার চাপ বাড়ায় পিছিয়ে পড়ছে নগর যুবদলের কমিটি ঘোষণা। নতুন কমিটিতে মোশাররফ হোসেন দীপ্তি ও মোহাম্মদ শাহেদের নাম পুনরায় আলোচনায় থাকলেও বিকল্প নেতৃত্ব নিয়েও কেন্দ্রে আলোচনা চলছে।
আলোচনায় আছেন ইকবাল হোসেন, এমদাদুল হক বাদশা, সাবেক ছাত্রদল নেতা গাজী সিরাজ, এইচ এম রাশেদ খানসহ আরও কয়েকজন। বিশেষ করে মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয়, মামলা-হামলার শিকার ও দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতারা নেতৃত্বে স্থান পেতে চাচ্ছেন। তবে বিতর্কিত ও সুবিধাভোগীদের একাংশও শক্ত লবিং করে এগিয়ে থাকতে চাইছেন। যা সিদ্ধান্তকে আরও জটিল করে তুলছে।
একজন কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চট্টগ্রামের কমিটি নিয়ে সবসময়ই বেশি জটিলতা থাকে। আগেই ঘোষণা হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সিনিয়র নেতাদের ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ চাপের কারণে বিলম্ব হচ্ছে। যখন যোগ্যতার চেয়ে অনুসারী গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, তখন সংগঠন দুর্বল হয়। এখন একমাত্র সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মতামতের ওপর।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় যুবদল চট্টগ্রামের তিন ইউনিট- নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবদলের শীর্ষপদের জন্য নেতাদের রাজনৈতিক বৃত্তান্ত জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেয়। এতে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আন্দোলন-সংগ্রামে সংশ্লিষ্টতার তথ্যসহ বায়োডাটা জমা দিতে বলা হয়। ধারণা করা হয়েছিল, এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দ্রুতই আহব্বায়ক কমিটি হবে। কিন্তু রাজনৈতিক সমীকরণ, জোর লবিং এবং বিতর্কিতদের প্রত্যাশা এই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তবে জমা দেওয়ার সময়সীমা শেষ হলেও এখনও কমিটি ঘোষণা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে অনেক নেতাকর্মী মনে করছেন, এ ধরনের বিলম্ব নেতৃত্বহীন সংকটকেই দীর্ঘায়িত করছে।
প্রায় ১০ মাস মহানগর যুবদলের কমিটি ঘোষণা না হওয়া নিয়ে সংগঠনের অভ্যন্তরে দেখা দিয়েছে চরম অস্থিরতা ও হতাশা। এই বিলম্ব শুধু নেতৃত্ব শূন্যতাই নয়, বরং পুরো সংগঠনের গতিপ্রবাহকে শিথিল করে ফেলছে। বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামের সময়েও যুবদল নেতাকর্মীরা স্পষ্ট নির্দেশনার অভাবে কার্যত অচল হয়ে পড়েছেন।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১ জুন মোশাররফ হোসেন দীপ্তিকে সভাপতি এবং মোহাম্মদ শাহেদকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর যুবদলের পাঁচ সদস্যের কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয় কেন্দ্র থেকে। এর চার মাসের মাথায় ঘোষণা করা হয় ২৩১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। প্রায় থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করতে সমর্থ হয়েছিল দীপ্তি-শাহেদের ওই কমিটি।