আনোয়ারা প্রতিনিধি
সম্পত্তির বিরোধের জেরে চোর অপবাদ দিয়ে গণপিটুনি দিয়ে গুরুতর আহত করা আনোয়ারার সেই নাজিম উদ্দীন আর নেই। ১০ দিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। আপন ভাই ও ভাতিজাসহ অন্যান্য লোকজন মিলে তাকে চোর অপবাদ দিয়ে গণপিটুনির এই ঘটনা ঘটে গত ২৬ অক্টোবর।
চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. তারেক নিজামী নাজিম উদ্দীনের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে তিন সন্তানের জনক নাজিমের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে আইসিইউর বাইরে অপেক্ষায় থাকা স্ত্রী মুক্তা আহাজারি করতে করতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। অবুঝ সন্তানকে কোলে নিয়ে মুক্তা হাসপাতালের ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছিলেন। বুকফাঁটা চিৎকারে বলছিলেন, ‘আমার তিন সন্তান এতিম হয়ে গেলো… আমি এখন কোথায় যাবো…’।
তার এই আর্তনাদে সেখানকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে, উপস্থিত কেউই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। যে মানুষটি গত এক সপ্তাহ ধরে স্বামীর বিচারের জন্য আর তাকে ফিরে পাওয়ার জন্য প্রতিটি দুয়ারে ছুটেছেন, তার সব আশা আজ নিভে গেলো।
উল্লেখ্য, গত ২৬ অক্টোবর সম্পত্তি নিয়ে পূর্ব বিরোধের জেরে নাজিম উদ্দীনকে ‘গরু চোর’ অপবাদ দেওয়া হয়। এরপর তার আপন বড় ভাই আহমদ ছফা ও ভাতিজা রিটন তাকে প্রকাশ্য দিবালোকে সবার সামনেই দড়ি দিয়ে বেঁধে পিটিয়েছিলেন। সেই ভয়াবহ মারধরের ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।এদিন গুরুতর আহত নাজিম উদ্দীনকে চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সেই নির্মম প্রহারের যন্ত্রণা থেকে তিনি আর ফিরতে পারলেন না।
এই ঘটনায় নাজিমের স্ত্রী বাদী হয়ে গত ১ নভেম্বর আনোয়ারা থানায় মামলা দায়ের করেন। ওইদিনই প্রধান অভিযুক্ত ভাই আহমদ ছফাকে গ্রেপ্তার করা হলেও ভাতিজা রিটন এখনো পলাতক।
নাজিম উদ্দীনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়েছে।
আনোয়ারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মনির হোসেন বলেন, চোর আখ্যা দিয়ে গণপিটুনির শিকার নাজিম মারা যাওয়ার খবর শুনেছি। আগের দায়ের করা মামলায় আমরা ৩০২ ধারা যোগ করতে আবেদন করব। নাজিমের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।











