গত রোববার ১৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার সৃষ্টি হয়েছে রাজনীতিকে নীতির কাঠামোয় আনার জন্য এবং রাজনীতির জন্য নতুন পরিবেশ সৃষ্টির নিবিড় আকাক্সক্ষা থেকে। এই আকাক্সক্ষা পূরণ করা থেকে জাতিকে বঞ্চিত করবেন না। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ওই ভাষণে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে এ আহবান জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনি সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে খুব দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে। এজন্য সবার কাছে প্রয়োজনীয় সময় চেয়ে সবাইকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ করেছেন; সবাইকে বিনাদ্বিধায় মনের কথা তুলে ধরার আহবান করেছেন।
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের তিন দিন পর দায়িত্ব গ্রহণ করে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। দায়িত্বের ১০০ দিনে জুলাই-আগস্টে কোটা সংস্কার থেকে সরকার পতন আন্দোলনের সময় ‘নির্বিচারে হত্যার’ অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
পাশাপাশি মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। এখন পর্যন্ত নির্বাচন আয়োজনের কোনো রূপরেখা না দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলে আসছে, সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার পর জাতীয় নির্বাচন হবে।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ৩৪ মিনিটের ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের রোডম্যাপ পাওয়ার জন্য ‘অত্যাবশ্যকীয় সংস্কার’ কার্যক্রম শেষ হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরার আহবান জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বলেছেন, আমি নিশ্চিত নই, সংস্কার প্রস্তাবসমূহ বাস্তবায়নের সুযোগ আমরা কতটুকু পাব। তবে আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, আপনারা সুযোগ দিলে প্রয়োজনীয় কিছু অত্যাবশ্যকীয় সংস্কার কাজ শেষ করেই আমরা আপনাদের কাক্সিক্ষত নির্বাচন আয়োজন করব। ততদিন পর্যন্ত আমি আপনাদের ধৈর্য ধারণ করার অনুরোধ করব। আমরা চাইব, আমরা যেন এমন একটি নির্বাচন ব্যবস্থা সৃষ্টি করতে পারি যা যুগযুগ ধরে অনুসরণ করা হবে। এর ফলে সাংবাৎসরিক রাজনৈতিক সংকট থেকে আমাদের দেশ রক্ষা পাবে। এজন্য প্রয়োজনীয় সময়টুকু আমি আপনাদের কাছে চেয়ে নিচ্ছি। নির্বাচনি সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে খুব দ্রুত আপনারা নির্বাচনের রোডম্যাপও পেয়ে যাবেন।
দৈনন্দিন রাষ্ট্র পরিচালনার পাশাপাশি সরকারকে ‘ভবিষ্যতের বাংলাদেশ বিনির্মাণের’ কথাও ভাবতে হচ্ছে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আপনারা সবাই জানেন, আমাদের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের মধ্যদিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর।
আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের মতামত নিয়ে যাচ্ছি। সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে এসব মতামত অনেকাংশে প্রতিফলিত হচ্ছে। তিনি বলেন, চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিটি মতামত সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় নিচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
আমরা আশা করছি নির্ধারিত সময়ে, ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যেই সংস্কার কমিশনগুলো তাদের সুপারিশমালা সরকারের কাছে পেশ করতে পারবে। তাদের সুপারিশ নিয়ে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ক্রমাগতভাবে আলোচনায় বসব। সকলের ঐকমত্যের ভিত্তিতেই আমরা সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত করব।
তবে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো বলে আসছে, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে সংস্কারের দায়িত্ব মূলত পালন করবে রাজনৈতিক দলগুলো। দ্রæত নির্বাচন আয়োজনের কথা বলার পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও সময় দেওয়ার কথাও বলছে তারা। সেই বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে ইউনূস বলেন, নির্বাচন কবে হবে এই প্রশ্ন আপনাদের সবার মনেই আছে। আমাদের মনেও সারাক্ষণ আছে।
সরকার নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। দ্রæত নির্বাচন কমিশন গঠন হয়ে যাবে বলে প্রধান উপদেষ্টা ভাষণে বলেন।
ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিলেই নির্বাচন আয়োজনে সরকারের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় বলে তিনি মনে করেন না। রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সংস্কারও এই সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার। জনগণ অন্তর্বর্তী সরকারকে এই ‘ম্যান্ডেট’ দিয়েছে। সংস্কার হল জাতির দীর্ঘমেয়াদি জীবনী শক্তি। সংস্কার জাতিকে বিশেষ করে আমাদের তরুণ-তরুণীদের নতুন পৃথিবী সৃষ্টির সুযোগ দেবে। জাতিকে বঞ্চিত করবেন না।
সরকারকে ব্যর্থ করার মহাপরিকল্পনা প্রতি মুহূর্তে কার্যকর : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করার জন্য বিশাল অর্থের বিনিময়ে বিশ্বব্যাপী এবং দেশের প্রতিটি স্থানে ‘এক মহাপরিকল্পনা প্রতি মুহূর্তে কার্যকর’ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহŸান দেশবাসীর প্রতি জানিয়েছেন।
ষড়যন্ত্রকারীদের সকল হীন প্রচেষ্টাকে আমাদের ঐক্যের মাধ্যমে নস্যাৎ করতে হবে।
আমরা আশা করি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা সংস্কার কার্যক্রম দ্রæত সম্পন্ন করে একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন এবং নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।