হ্যাটট্রিকের লক্ষ্য আ. লীগের, কৌশলী ভূমিকায় ঐক্যফ্রন্ট

54

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণার পর সরব প্রচারণা চালিয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ড. হাছান মাহমুদ। প্রচারণার শেষ দিনেও চোখে দেখেনি ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী এলডিপির নুরুল আলমকে। প্রচারণার শেষদিনে উৎসবের আমেজে মাঠে আওয়ামী লীগ দাপিয়ে বেড়ালেও অনেকটা আড়ালে ছিল বিএনপি। পুলিশের ধরপাকড় ও হামলার আতঙ্কে নির্বাচনের মাঠে ছিলেন না দলটির নেতাকর্মীরা। প্রচারণার পুরো সময়ে অনেকটা কৌশলী প্রচারণা চালিয়েছেন এলডিপি তথা ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী। তার নির্বাচনী পোস্টার ব্যানারও ছিল না এলাকায়। ভোটের দিন কি ভূমিকা পালন করতে হবে গোপনে কর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীর লোকজন। কখনও ফেসবুকে কখনও প্রচারণায় নেমে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হামলা ও বাধার অভিযোগ এনে মাঠ থেকে কেউ দেখার আগে নিরবে সরে গেছেন। নিরব ভোট বিপ্লবের স্বপ্ন নিয়ে মাঠে আছেন নুরুল আলম। তাদের ধারণা ভোটাররা ভোটের দিন কেন্দ্রে যেতে পারলে তারা নিরবে ভোট বিপ্লব ঘটাবে। অপরদিকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মিছিল-মিটিং, গণসংযোগ, মতবিনিময়, উঠান বৈঠক করে প্রচারণায় সরব ছিল আওয়ামী লীগ। তাদের নেতাকর্মীদের মাঝে ছিল উৎসবের আমেজ।
রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম-৭ আসন। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা সদর থেকে গ্রামে, হাটে-মাঠে-ঘাটে এবং চায়ের দোকানে সর্বত্রই নির্বাচন নিয়ে জমজমাট আলোচনা। এ আসনে নৌকা প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা জমজমাট থাকলেও কোথাও ধানের শীষের প্রার্থীর পোস্টার পর্যন্ত চোখে পড়েনি। এ আসনে ধানের শীষসহ অন্য প্রতীকের পাঁচজন প্রার্থী থাকলেও তাদের খুব একটা প্রচারণা নেই বললেই চলে। উপজেলার দুয়েকটি জায়গায় এদের কিছু পোস্টার দেখা গেলেও এরা ছিল প্রচারণার বাইরে।
রাঙ্গুনিয়া আসনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ড. হাছান মাহমুদ নৌকা প্রতীকে এবং এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল আলম ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এখানে মূলত নৌকার সঙ্গে ধানের শীষের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করা হলেও প্রচারণা না থাকায় ফলাফল কি হবে তা এখনো বুঝা যাচ্ছে না। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে রাঙ্গুনিয়াজুড়ে নৌকার পালে হাওয়া লাগলেও ধানের শীষে এখনো দোলা লাগেনি। উপজেলার কোথাও তাদের পোস্টার, ব্যানার ও নির্বাচনী ক্যাম্প চোখে পড়েনি। দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাধার কারণে তারা নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা চালাতে পারছেন না। তাদের কোন নেতাকর্মী একটি বারের জন্যও ভোট চায়নি ভোটারদের কাছে। বিএনপির হেভিওয়েট নেতাকর্মীরা অনেকটা গাছাড়া মনোভাব নিয়ে রাঙ্গুনিয়ার বাইরে চট্টগ্রামে নিরাপদে অবস্থান নিয়েছেন। কেউ রাঙ্গুনিয়ার ভোটের মাঠে আসেনি।
ধানের শীষের প্রার্থী এলডিপি নেতা নুরল আলম ভোটারদের মাঝে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে না পারায় ও আমেজ সৃষ্টি করতে না পারায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সব মিলিয়ে ভোটের মাঠে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ড. হাছান মাহমুদ শক্ত অবস্থানে আছেন বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন। এ আসনের অন্য প্রার্থীরা হলেন ইসলামী ফ্রন্টের মাওলানা নওশাদ নঈমী (মোমবাতি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) এর মাহবুবুর রহমান (তারা), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা নেয়ামত উল্লাহ (হাতপাখা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মুহাম্মদ জিয়াউর রহমান (আম)।
অপরদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার সর্বশেষ নির্বাচনী জনসভার মাধ্যমে প্রচারণা শেষ করেছেন নৌকার প্রার্থী ড. হাছান মাহমুদ। পক্ষকাল ধরে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটে গেছেন তিনি। প্রার্থনা করেছেন ভোট আর দোয়া। বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। অন্যদিকে ঐক্যফ্রন্টের প্রধান দল বিএনপির নেতাকর্মীরা গতকাল পর্যন্ত প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় নামেননি এলডিপি নেতা নুরুল আলমের পক্ষে। বিএনপি নেতাদের মধ্যে শুরু থেকেই গাছাড়া ভাব লক্ষ্য করা গেছে।
রাজানগর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মো. করিম সওদাগর জানান, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে যিনি নির্বাচনে নেমেছেন তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে ধানের শীষের বিরোধিতা করে আসছেন। তিনি কয়েকবার বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনও করেছেন ধানের শীষের বিরুদ্ধে। এ কারণেই তার পক্ষে বিএনপির কেউ মাঠে নামেননি বলে দাবি তার। ফলে ধানের শীষে দোলা দিতে যে ধরনের কর্মী সমর্থক দরকার তা তিনি পাননি। এ আসনের ভোটাররা ভেবেচিন্তে যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে চান জানিয়ে উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুল কবির গিয়াসু বলেন, প্রার্থীদের যোগ্যতা এবং নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকার উন্নয়নে কি ভূমিকা রাখতে পারবেন এমন চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে ভোটারদের মাঝে। তিনি বলেন, বিগত ১০ বছরে রাঙ্গুনিয়ায় যে উন্নয়ন হয়েছে তা অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছে। এবারও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় রাঙ্গুনিয়ার মানুষ নৌকায় ভোট দেবেন।
১৯৯১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পাঁচটি সংসদ নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এ আসন থেকে তিনবার আওয়ামী লীগ আর দুইবার বিএনপি প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। আর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল আলম বিজয়ী হন। এ আসনে নির্বাচনের আগে এবং পরে বড় দুটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ভোটের হিসাব-নিকাশ চলে বছরজুড়ে।
একটি সূত্রে জানা যায়, নুরুল আলম বিএনপির নেতাকর্মীদের নিজের পক্ষে আনতে পারেনি। বিশেষ করে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পরিবারের সমর্থনপুষ্ট লোকজনের তার উপর খুবই ক্ষুব্দ। যতবার জীবিত থাকাকালীন সময়ে বিএনপি থেকে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করেছেন ততবার নুরুল আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এ কারণে সাকা পরিবারও তার উপর প্রতিশোধ নেওয়ার দিন গুণছে।
অপরদিকে রাঙ্গুনিয়ায় হাছান মাহমুদ তৃতীয় বারের মত বিজয়ী হয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ সময়ের ব্যবধান বলে মনে করছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার। তিনি বলেন, গত ১০ বছরে রাঙ্গুনিয়ায় উন্নয়ন হয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এসব উন্নয়নে রাঙ্গুনিয়া পাল্টে গেছে। রাঙ্গুনিয়া এখন মডেল উপজেলা। এর ধারাবাহিকতা রক্ষায় সাধারণ মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য দিনক্ষণ অপেক্ষা করছে। এবারে নৌকার ভোট বিপ্লব হবে।