হৈমন্তী চাষার বধূ

85

সোনালি লাবণ্যে চকচক চোখমুখ; ভাঁজ খুললে গায়ের
নাচে ধানফুলের ঘ্রাণ। হৈমন্তী হে চাষার বধূ , পায়ের
ঘুঙুর শিশির ভেজা। কুঁড়েঘরে থাকবে কোথায় ?
মাঠ তোমার, উঠোন তোমার, স্বস্তিতে থেকো না হয় টিনের গোলায়, এই অঘ্রাণে অন্য রং ফিকে তোমার রূপের বিভায়।

আনো আভাবী সংসারে ধনধান্য, তুমি মানে
উৎসব। গায়েনের আকালে চাষা ভাসায় সুখগানে
বুকের বন। এই অঘ্রাণে একবার তোমার নিমন্ত্রণ
বারো মাসের দহন জুড়ায়। তোমার ছোঁয়ায় এই কাঁপন
মদির মধুর। ধনধান্যে পূর্ণ হয়ে অনার্য কিষাণ-
অভাবের নখর ভেঙে জীবনের স্বাদ বুঝে ভূমির সন্তান

অনার্যের উচ্ছ্বাস
জামশেদ উদ্দীন

আর্যর আবরণে অনার্যের প্রবল উচ্ছ্বাস, এটি কবে-কখন
পয়দা হয়েছে, তখন থেকে চলছে হোলির রঙ এবং
মাখামাখি-হৈচৈ কেটে গেল শতাব্দীকাল। কিন্তু পটু
কারিগরের আর্যর রূপ বা তারা কৌশলে চাপিয়ে দিল একটি
মিথ; হায়, কপালপোড়ার কপাল পুড়লো, কোথাও তো মিল
খুঁজে পাই না কপাল, চোয়াল, নাক, টানা-টানা চোখ, এমন
কি উর্বর উর্বশী; এক্ষুনি প্রতি ইঞ্চি মেপে-মেপে দেখুন
তাহলে বোধের জায়গা-আলোকছটা বিকিরণ হবে, দাবি
উঠবে আমরা তো-এ মিথ্যের ধারক-বাহক নই; মিছেমিছি
খেলা; ছলনা! বোকামির দন্ড, কি হবে দন্ড? কি হবে দন্ড?

তৃতীয় বিশ্বে এখনো জিয়ে আছে এসব বাজিকর,
বাজিমাত!

রঙধনু
হাসান ইকবাল

একদিন রঙধনু উঠা বিকেল দেখবো বলে
সম্প্রীতির সানগ্লাস পড়ে তাকিয়েছিলাম বৃষ্টি ভেজা আকাশে,
জলবায়ুর জলজ ব্যাকরণ পড়ে আজ জানলাম
বৃষ্টি হলেই রঙধনু আকাশে উঠে না, হাসে না স্বস্তির সূর্য।

দু’হাতে কবিতার কনকাঞ্জলি মেখে
তুমিও কি আমার মতো রঙধনু খোঁজো নীরবে নিভৃতে,
নাকি সমূহ সুখে আগুন জ্বেলে নিজেই হয়েছো শুকতারা?

অথচ তোমার চোখেই ছিলো রঙধনুর সাতরঙ, বৃষ্টিভেজা আকাশ।

বহতা নদীর জল শূন্যতা
বজলুর রশীদ

কী রূপে নদীর বালু ছুঁয়ে যায়
সাঁতরে দউত্তরী বাতাস…
অন্তরালে অপেক্ষায় হিম কুয়াশা
ভালোবাসা বলতে কিছু নেই,
সুখের জীবন হারাবার পর-
গুটিয়ে যাবে দিনের যাবুীয়
বিকেলের এই সোনাগলা রোদ।
কী আশায় প্রকৃতি মোহনীয় আবেগ ছড়ায়
আবহমান বাংলার হৃদয়ে…
নৈঃশব্দে অবাক – অব্যক্ত ভাষা শোনেনি
বহতা জল শূন্যতায় নদী মুগ্ধ নয়।

শুধু তোমার জন্য
আতাউল হাকিম আরিফ

কার্পাসের মতো দলা দলা মেঘ ভেসে বেড়ায়
মেঘনা থেকে গঙ্গোত্রী উড়ে যায় গাঙচিল,
কখনো কখনো বেহায়া স্মৃতিগুলো নেচে বেড়ায়,
নীলাদ্রি স্বপ্নজালে ডুব দিয়ে এখনো খুঁজি তোমাকে।

বিশ্বাস করো সুচেতনা
সুশ্রী ত্বকের ভাঁজে সুডৌল স্তন জোড়ায়
কিংবা কামুকতায়
তোমাকে খুঁজিনি কখনোই
খুঁজেছি অনিমেষ ভালোবাসায়।

সেদিন বসন্তের উৎসবে
হলুদ রঙের শাড়ি
বেলীফুলের খোঁপায় তোমাকে দেখেছি,
আমাকে ছুঁয়েছিলো মুগ্ধতা!

শুধু তোমার জন্য
কল্পনার ফানুস উড়িয়েছি নীলাকাশে
সবুজবীথি ছায়াতলে হেঁটেছি অনেকটা সময়।

অকারণে
শিউলী মজুমদার

অকারণেই রোজ ঘুরঘুর করি পরিত্যক্ত উঠোনেÑ
কামিনী ফুলের গন্ধে অকারণেই জেগে ওঠে নেশা,
অকারণেই দোলনচাঁপায় বসে থাকা;
বুলবুলির সঙ্গে কথা হয় আমার!

আজকাল কোনো কারণ ছাড়াই-
পায়চারি করে বেড়াই উঠোনের চারপাশে
অনেকটা হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত হয়ে পড়ি অকারণে।

সন্ধ্যা নামে, ঝুলন্ত আকাশে ভেসে ওঠে চাঁদ,
বাড়তে থাকে রাতের মুখরতা-
নক্ষত্রের সাথে এলোমেলো কথাও হয় ইদানিং

রাতের তীব্রতা বাড়ে, ফিরে আসি বিষন্ন বদনে
অকারণেই কারণ খুঁজি বারংবার!