বান্দরবান প্রতিনিধি
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘আমরা কালো যুগ পার হয়েছি। ফ্যাসিস্টরা আলেম-ওলামা, ছাত্রদের বিনা দোষে বছরের পর বছর জেলে পুরে রেখেছে। আমাদের নেতাদের বিনা দোষে, বিনা বিচারে হত্যা করা হয়েছে। হাসিনা মনে করেছিল জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে বাঁচতে পারবে। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় আওয়ামী ফ্যাসিস্ট নিষিদ্ধ হয়ে জামায়াত-শিবিরকে মর্যাদার আসনে বসিয়েছে। হাসিনা জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে আজকে তারা দেশের মানুষের কাছে নিষিদ্ধ হয়ে দেশ ছেড়েছে।
গতকাল শনিবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বান্দরবান জেলা শাখার উদ্যোগে স্থানীয় রাজার মাঠে কর্মী ও সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বিগত ১৬টি বছর বাংলাদেশ শেখ হাসিনা নামক একটি জগদ্দল পাথরের নিচে চাপা ছিলো। একটা কালো যুগ পার করেছি আমরা সবাই। স্বাধীনভাবে কথা বলা যেতো না। কিন্তু বিগত স্বৈরাচার সরকার মানুষের সেই অধিকার হরণ করেছিল। ১৪, ১৮, ২৪ সালে মানুষকে ভোট দিতে দেয়নি।
তিনি বলেন, ১৪ সালে তারা ষড়যন্ত্র করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন করেছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচন ছিল ইতিহাসের আরেক কালো অধ্যায়। যেখানে দিনের ভোট রাতে করা হয়েছে। এসময় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশ লীগ সম্মিলিতভাবে এদেশের মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছে। আর ২৪-এর ভোট ছিল মামু আর আমি মিলে এক ডামি নির্বাচন। তাই শেখ হাসিনার মতো ডামি নির্বাচন হলে এদেশের মানুষ মেনে নেবে না।
সমাবেশে নেতা-কর্মীরা সকাল থেকে জেলার সাত উপজেলার ২টি পৌর ও ৩৪টি ইউনিয়ন থেকে জেলা শহরে জড়ো হয়। পরে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে জেলা শহরের স্থানীয় রাজারমাঠে জনসভাস্থলে উপস্থিত হন। এসময় জামায়াতের নেতা-কর্মীরা ব্যানার ও মিছিলে মিছিলে আলোড়ন সৃষ্টি করে। জনসভায় জেলা, পৌরসভা, উপজেলা, ইউনিয়নের বিভিন্ন জামায়াতের কমিটি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
সমাবেশে পরওয়ার আরও বলেন, অতীতে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা পার্বত্য এলাকায় শান্তি চুক্তির নামে অশান্তি বাড়িয়ে দিয়েছে। এখানে শিক্ষা চাকরি ভ‚মির ক্ষেত্রে বৈষম্য রয়েছে। জামায়াত ইসলামী ক্ষমতায় এলে তা দূর করবে। এসময় তিনি ৩০০নং বান্দরবান আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী অ্যাড. মোহাম্মদ আবুল কালামকে আগামি নির্বাচনে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে সংসদে পাঠানোর আহবান জানান। তিনি বলেন, অন্যায়, জুলুম ও অত্যাচার করে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায়না। হাসিনা যাকেই তার ক্ষমতার জন্য আতঙ্ক মনে করতো তাকেই রাজাকার বানিয়ে দিতো। অধিকার চাওয়া শিক্ষার্থীদেরও রাজাকার বলেছিল হাসিনা। এরপর শিক্ষার্থীরাই বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এই দেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বান্দরবান জেলা আমীর এসএম আবদুস সালাম আজাদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারী জেনারেল মুহাম্মদ শাহাজান, চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর সাবেক এমপি শাহজান চৌধুরী, চট্টগ্রাম অঞ্চল টিম সদস্য মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক আহসান উল্লাহ, চট্টগ্রাম অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যাপক জাফর সাদেক, চট্টগ্রাম অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যাপক নুরুল আমিন, বান্দরবান জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও বান্দরবান আসন থেকে জামায়াত মনোনিত সংসদ সদস্যপদ প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবুল কালামসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ ১৮ বছর পর প্রকাশ্যে এই প্রথমবারের মত বান্দরবানের স্থানীয় রাজার মাঠে কর্মী সমাবেশ করলো বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী। হাজার হাজার নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণে জনসমুদ্রে পরিণত হয় সমাবেশস্থল।