হাসিনার প্রত্যর্পণ ও চিন্ময় প্রসঙ্গে যা বলছে ভারত

1

শেখ হাসিনাকে ফেরানোর অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশের ‘নোট ভার্বাল’ ভারতের হাতে আসার পরও প্রায় ১২ দিন কেটে গেছে। তবে ওই বার্তার কোনো জবাব এখনও দেওয়া হয়নি বলেই জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। গতকাল শুক্রবার বিকালে দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এটাও পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন যে ভারত সরকার এ নিয়ে এখনই কোনও মন্তব্য করতে চাইছে না। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘আমরা গত সপ্তাহেই জানিয়েছি (বাংলাদেশের) সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের পাঠানো বার্তা আমাদের হাতে এসেছে। (ওই প্রত্যর্পণের অনুরোধ নিয়ে) আমাদের এই মুহূর্তে আর নতুন কিছু যোগ করার নেই!’
বাংলাদেশের ‘নোট ভার্বালে’ ঠিক কী অভিযোগের ভিত্তিতে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হয়েছে, এমন আরেকটি প্রশ্ন করা হলেও মুখপাত্র তার উত্তরে আবার বলেন, ‘আমি আগেই (এ বিষয়ে) যা বলার বলেছি। তার বাইরে আমার আর কিছু শেয়ার করার নেই’।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের বক্তব্যে অন্তত এটা স্পষ্ট যে বাংলাদেশের ওই অনুরোধকে আপাতত তারা গুরুত্ব দিতে চাইছে না, এমনকি কোনো প্রতিক্রিয়া জানানোরও প্রয়োজন অনুভব করছে না।
এদিকে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের একটি আদালতে বাংলাদেশে সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের নেতা ও ইসকনের (সাবেক) সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুরের ঘটনাতেও ভারত যে হতাশ, সেটিও গোপন করেননি জয়সওয়াল। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে ভারত উদ্বিগ্ন কিনা, এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনি বাংলাদেশে যার মুক্তির কথা বলছেন… আমরা আগেও বলেছি, আমরা মনে করি এবং আমাদের প্রত্যাশা হলো বাংলাদেশে যে ধরনের তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে তাতে… যে ব্যক্তিবিশেষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তিনি সুবিচার পাবেন, এটার জন্যই আমরা অপেক্ষা করবো’।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এদিন আরও কয়েকটি নির্দিষ্ট প্রশ্নেরও জবাব দিয়েছেন। সেগুলো ছিল-
বিভিন্ন গুঞ্জনের সূত্র ধরে মুখপাত্রের কাছে সেখানকার এক সাংবাদিক জানতে চান, তুরস্কের কোম্পানি ‘অটোকার’-এর কাছ থেকে বাংলাদেশ তাদের সেনাবাহিনীর জন্য ২৬টি লাইট ট্যাংক বা ‘হালকা সাঁজোয়া গাড়ি’ কেনার জন্য কথাবার্তা চালাচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। আঞ্চলিক নিরাপত্তার দৃষ্টিতে ভারত এই সিদ্ধান্তকে কীভাবে দেখছে?
জবাবে মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সা¤প্রতিক ঢাকা সফরের পরই প্রেস বিবৃতির আকারে এই মনোভাব স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে ভারত একটি গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল, ইনক্লুসিভ বাংলাদেশকে সমর্থন করে। এটাও বলা হয়েছে যে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে একটি ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্ক গড়তে চাই, যা হতে হবে পারস্পরিক আস্থা, মর্যাদা, স্বার্থ ও একে অপরের উদ্বেগগুলো নিয়ে সংবেদনশীলতার ভিত্তিতে। তো এটাই হলো বাংলাদেশ সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি। আপনি যে বিষয়ে জানতে চাইছেন, তা নিয়েও আমাদের একই দৃষ্টিভঙ্গি হবে। তা ছাড়া আপনি জানেন, আমাদের নেইবারহুডে প্রতিটি নিরাপত্তাগত ইস্যুতে আমরা সতর্ক নজর রাখি ও যথাযথ পদক্ষেপ নিই, এখানেও তাই করা হবে।
সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের কথা ইঙ্গিত করে জানতে চাওয়া হয়, স¤প্রতি ভারতের নানা প্রান্তে এমন বহু অভিযোগ পাওয়া গেছে যে অবৈধভাবে ভারতে ঢুকে বিদেশি নাগরিকরা ভারতের পাসপোর্ট হাতে পেয়ে গেছেন এবং তারা পুলিশের হাতে ধরার পড়ার পর সেটি জানা যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকার এটা বন্ধ করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠিও দিয়েছে। ভারত সরকারের এ বিষয়ে বক্তব্য কী?
মুখপাত্র জবাবে বলেন, ‘একটা জিনিস খুব স্পষ্ট- ভারতীয় পাসপোর্ট শুধু ভারতীয় নাগরিকদের জন্যই। কিন্তু এই নিয়মের কোথাও যদি কোনো ব্যত্যয় হয় এবং আমরা সেটি জানতে পারি, তাহলে সরকারের এজেন্সিগুলো দ্রæত তার প্রতিকারের ব্যবস্থা নেবে এবং আইনি পদক্ষেপ করবে’।
স¤প্রতি ভারতের দিল্লি, কর্নাটক, আসাম, মহারাষ্ট্রসহ বিভিন্ন রাজ্যে কথিত ‘অবৈধ বাংলাদেশিদের’ বিরুদ্ধে ব্যাপক পুলিশি অভিযান শুরু হয়েছে এবং গ্রেপ্তারকৃতদের অনেককে সীমান্তের অন্য পারে ‘ডিপোর্ট’ করা হচ্ছে বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘আপনি অবৈধ অভিবাসীদের ডিপোর্টেশন নিয়ে জানতে চেয়েছেন… দেখুন, আমাদের দেশে নিয়ম ও আইন মোতাবেক বহু (বিদেশি) আসা-যাওয়া করেন, তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু নিয়ম আর আইন ভেঙে কেউ যদি ভারতে আসেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা তো নিতেই হবে। ফলে আপনার প্রশ্নের জবাব খুব সহজ- আমাদের সেনা বা সীমান্তরক্ষীরা এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে এবং তারা নিজেদের কর্তব্য করে যাবেন!’
তবে এখন এ পর্যন্ত কতজনকে ডিপোর্ট করা হয়েছে, সেটি তার ঠিক জানা নেই বলেও মন্তব্য করেন মুখপাত্র।
গত ৩১ ডিসেম্বর বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতৃত্ব ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ জারি করা হবে বলে প্রথমে জানিয়েছিল, যাতে ‘৭২-র সংবিধানের কবর রচিত হবে বলেও কোনো কোনো নেতা হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। পরে অবশ্য সেই কর্মসূচি ‘মার্চ টু ইউনিটি’তেই সীমিত রাখা হয়। বিষয়টি উল্লেখ করে জয়সওয়ালের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চান, ভারত কি এই পদক্ষেপকে বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানকে হেয় করার চেষ্টা হিসেবে দেখছে?
জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আবারও আগের কথারই পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ভারত মনে করে দু’দেশের মানুষরাই হলেন দু’দেশের সম্পর্কের আসল ‘স্টেকহোল্ডার’ বা অংশীজন! তারপর তিনি আরও যোগ করেন, ‘এটাই বাংলাদেশ সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি। ওখানে নানা ধরনের ঘটনা বা ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই কিছু না কিছু ঘটনা ঘটছে। কিন্তু তাদের সম্পর্কে আমাদের ‘জেনেরিক অ্যাপ্রোচ’ বা সাধারণভাবে দৃষ্টিভঙ্গি ওটাই!’