হামজা নৈপুন্যে ভুটানকে হারালো বাংলাদেশ

1

দীর্ঘ ৫৫ মাস পর ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে ফিরেছে ফুটবল। ভেতরে গ্যালারি ভরা দর্শক। চারদিকে দর্শকদের হই-হুল্লোড়। তারওপর হামজা চৌধুরী-ফাহামিদুলরা শুরু থেকে একাদশে। সবমিলিয়ে সবার আকর্ষণ ছিল দুর্নিবার। ভুটানের বিপক্ষে বাংলাদেশের এমন ম্যাচে দর্শকরা কিন্তু হতাশ হননি। হামজা চৌধুরী-সোহেল রানার গোলে বাংলাদেশ ফিফা প্রীতি ম্যাচে ২-০ ব্যবধানে ভুটানকে হারিয়ে উল্লাসে মেতেছে। বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকার মাঠে প্রথম অভিষেক হলো ইংলিশ লিগে খেলা হামজার। ভুটানের বিপক্ষে ইতালি প্রবাসী ফাহামিদুলের সঙ্গে অভিষেক হয়েছে ডিফেন্ডার তাজ উদ্দিনের। এছাড়া এবছর শুরু থেকে খেলছেন অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। পরবর্তীতে অভিষেক হয়েছে আল আমিনেরও। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
৪-২-৩-১ ছকে শুরু থেকে ভুটানকে চেপে ধরে বাংলাদেশ। হাই ডিফেন্স খেলে ভুটানের ওপর দাপট দেখায়। তবে একটির বেশি গোল আসেনি প্রথমার্ধে। ম্যাচের ৩ মিনিটে সৈয়দ কাজেম শাহের কাটব্যাক থেকে জামাল ঠিকমতো পা ছোঁয়াতে পারেননি। তিন মিনিট পর বাংলাদেশের ডাগআউটে হাসি। জামালের কর্নারে হামজা লাফিয়ে জোরালো হেডে গোল করে দলকে এগিয়ে নেন। ২১ মিনিটে মধ্যমাঠে তারিক কাজী ডজ দিতে গিয়ে বল হারান। ভুটানের একজন খেলোয়াড় বল নিয়ে বক্সে ঢোকার মুহূর্তে তপু কোনোমতে ক্লিয়ার করেন। ৩০ মিনিটে রাকিবের পাসে ফাহামিদুলের জোরালো শট গোলকিপার প্রতিহত করেন। ফিরতি বলে জামালের শট অনেক দূর দিয়ে যায়। পরের মিনিটে কাজেমের ব্যাকহিল থেকে ফাহামিদুল ঠিকমতো শটই নিতে পারেনি। ৩৬ মিনিটে তাজ উদ্দিনের বাঁ প্রান্তের ক্রসে রাকিব ফ্লিক করার চেষ্টা করেও সফল হতে পারেননি। জামাল বল পেয়ে লক্ষ্যে শট নিলেও তা কারমা ছেত্রিম ব্লক করেন। ৪৫ মিনিটে তাজের ক্রসে ফাহামিদুলের হেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে হতাশ হন গ্যালারি ভর্তি দর্শকরা। এক গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যেতে হয়েছে স্বাগতিকদের। বিরতির পর শুরুতে বাংলাদেশ দলে তিনটি পরিবর্তন। মোহাম্মদ ইব্রাহিম, শেখ মোরসালিন ও মোহাম্মদ হৃদয় মাঠে নামেন হামজা, কাজেম ও জামালের জায়গায়। তবে মোট ৬টি পরিবর্তন করেও বাংলাদেশ এই অর্ধে গোল ব্যবধান বাড়াতে পারেননি। ভুটানের গোলকিপার গেইলশেন জাংপোর পরীক্ষা বারবার নিলেও পরাস্ত করা হয়নি। ৪৮ মিনিটে ফাহামিদুলের ক্রসে মোরসালিনের শট সরাসরি গোলকিপারের হাটুতে লেগে হাতে জমা পড়ে। পরের মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে সোহেল রানার জোরালো শট জাল কাঁপায়। ৫১ মিনিটে আগুয়ান গোলকিপারকে ডজ দিয়ে ফাঁকায় রাকিব কিছু করতে পারেননি। তার আগেই বল চলে যায় আয়ত্তের বাইরে। ৫৯তম মিনিটে আরও দুটি পরিবর্তন আনেন কাবরেরা। ফাহামিদুল ও রাকিবকে তুলে ফয়সাল আহমেদ ফাহিম ও আল আমিনকে নামান তিনি। এ ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশের হয়ে অভিষেকের অপেক্ষা ফুরালো আল আমিনের। গত মার্চে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের দলে থাকলেও খেলার সুযোগ পাননি এই স্ট্রাইকার। ৬৩ মিনিটে আল আমিনের কাটব্যাকে মোরসালিনের শট গোলকিপার গোল হতে দেননি। সহজেই আটকে দেন। ৫ মিনিট পর শাকিল আহাদ তপু নামেন কাজী তারিকের জায়গায়। ষষ্ঠ পরিবর্তন। পোস্টে অলস সময় কাটানো মিতুল প্রথম উল্লেখযোগ্য পরীক্ষার মুখোমুখি হন ৭২ মিনিটে। ফ্রি কিক আটকে সে পরীক্ষায় উতরে যান তিনি। একটু পর ইয়েসির হেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে ম্যাচে ফেরায় হয়নি ভুটানের। প্রতিপক্ষের এই ডিফেন্ডারকে পাহারায় রাখতে পারেননি তপু। ৭৩ মিনিটে গ্যালারি থেকে একজন দর্শক দৌড়ে এসে টেন্টে হামজার সঙ্গে সেলফি তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু নিরাপত্তা কর্মীরা তাকে সফল হতে দেয়নি। জাপটে ধরে মাঠের বাইরে নিয়ে যান। একটু পর পূর্ব গ্যালারি থেকে আরেকজন একই চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়েছেন। ৭৭ মিনিটে ভুটান ভয় ধরানোর চেষ্টা করেন। তাদের একজনের কর্নারে ইয়েশি গেইলসেনের হেড পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়। শেষ দিকে এসে ইব্রাহিমের শট গোলকিপার আটকে দিলে আনন্দের উপলক্ষ থেকে বঞ্চিত হয় দর্শকরা। যোগ করা সময়ে মিতুল ভুটানের একজনের শট আটকে দিয়ে দলকে কোনও গোল হজম করতে দেননি।
বলা যায়, ১০ জুন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচের আগে বাংলাদেশের প্রস্তুতি খারাপ হয়নি। বাংলাদেশ একাদশ: মিতুল মারমা, তপু বর্মণ, তারিক কাজী (শাকিল আহাদ তপু), তাজ উদ্দিন, সাদ উদ্দিন, জামাল ভুঁইয়া (মোহাম্মদ হৃদয়), হামজা চৌধুরী (শেখ মোরসালিন), সোহেল রানা, সৈয়দ কাজেম (মোহাম্মদ ইব্রাহিম), রাকিব হোসেন (আল আমিন) ও ফাহামিদুল ইসলাম (ফয়সাল আহমেদ ফাহিম)।