ভোলার বোরহানুদ্দিনে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে মহানবী (সা.) ও নিয়ে কটূক্তিকারীর শাস্তির দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের গুলি বর্ষণ ও হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে হাটহাজারীতে বিক্ষোভ করেছে আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম প্রকাশ হাটহাজারী বড় মাদ্রাসার বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। গতকাল রবিবার আসরের নামাজের পর বিকাল ৫ টায় মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে শুরু করে। এ সময় তারা হাটহাজারী মডেল থানায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে ভাঙচুর করে। এ সময় ৩ মাদ্রাসা শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়া চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে প্রায় ৩ ঘন্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। ফলে এই রুটে চলাচলকারী উভয় দিকের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
তবে হাটহাজারীতে সড়ক অবরোধ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের সাথে মাদ্রাসার কোনো ছাত্র-শিক্ষক এবং হেফাজতে ইসলামের কোনো নেতা-কর্মী জড়িত নয় বলে দাবি করেছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।
প্রত্যক্ষদর্শী, বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও থানা সূত্রে জানা গেছে, রবিবার ভোলার বোরহানুদ্দিনে মহানবী (সা.) ও আল্লাহ্’কে নিয়ে কটূক্তিকারীর শাস্তির দাবি ও আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করার প্রতিবাদে হাটহাজারী বড় মাদ্রাসার সামনে মাদ্রাসার বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি মহাসড়কে অবস্থান নেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা মহাসড়কের হাটহাজারী মাদ্রাসার সামনে, হাটহাজারী বাজার, মেডিকেল গেইট, ভূমি অফিসের সামনে, কলেজ গেইট ও বাসস্টেশন এলাকার মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসার সামনে ও বাসস্টেশন চত্বরে মাগরিবের নামাজ আদায় এবং অগ্নিসংযোগ করতে দেখা গেছে।
আচমকা এই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুই পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি মহাসড়কের প্রায় ৩০টি রুটের যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এসময় সবার মাঝে আতঙ্ক দেখা দেয় এবং সাধারণ মানুষ দিগবিদিগ ছোটাছুটি শুরু করে। বন্ধ হয়ে যায় সকল দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অর্থাৎ রাত সাড়ে ৮ টার দিকে আতঙ্ক মাথায় নিয়ে কাউকে কাউকে দোকানপাট খুলতে দেখা যায় এবং যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা এক পর্যায়ে হাটহাজারী মডেল থানায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে মূল ফটক ও দরজা এবং জানালার কাঁচ ভাঙচুর করে। এ সময় তারা পার্শ্ববর্তী সীতাকালি মন্দিরে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করার চেষ্টা করলে মাদ্রাসার অন্যান্য শিক্ষার্থী তাদের পথ আটকায় এবং মন্দিরে হামলা কিংবা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ না করতে হস্তক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৩ রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এতে মাদ্রাসার ৩ শিক্ষার্থী আহত হয়। আহতরা হলেন মো. রায়হান (২২), মো. আলাউদ্দিন (২১) ও মো. জাহেদুল ইসলাম (২০)। রক্তাক্ত অবস্থায় সহপাঠীরা আহতদের স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করে বলে জানান মেডিকেল অফিসার ডা. সুপ্রিয়া চৌধুরী।
তিনি জানান, আহতদের মধ্যে রায়হান নামে এক শিক্ষার্থীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁর মাথার ডান পাশে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় বেশ রক্তক্ষরণ হয়েছে। আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দ্রæত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। বর্তমানে ওই শিক্ষার্থী চমেক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে সংঘটিত এ ঘটনা তথা বিক্ষোভের সাথে মাদ্রাসার কোনো ছাত্র-শিক্ষক এবং হেফাজতে ইসলামের কোনো নেতা-কর্মী জড়িত নয় বলে দাবি করেন হাটহাজারী মাদ্রাসার সহযোগী পরিচালক ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। তিনি মাইকে ঘোষণা দিয়ে সকল শিক্ষার্থীকে মাদ্রাসার ভেতরে চলে যাওয়ার জন্য আহŸান জানান। এ সময় তিনি বলেন, হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে বলা হচ্ছে, আজকে বিক্ষোভ মিছিলের জন্য কোনো সিদ্ধান্ত নেই। কে বা কারা এসব করেছে তা আমাদের অজানা। হেফাজতের পক্ষ থেকে কোনো মিছিল বা বিক্ষোভের ব্যবস্থা করা হয়নি।
মাদ্রাসায় ফিরে আসার আহব্বান জানানো হলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। বরং বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসার ভেতরে থাকা শিক্ষার্থীদেরও বেরিয়ে আসার আহবান জানাতে দেখা গেছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো টিয়ার শেল ছোড়া হয়নি দাবি করে হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মাসুম মুঠোফোনে জানান, বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে থানার মূল ফটক ও দরজা এবং জানালার কাঁচ ভাঙচুর করেছে। এক্ষেত্রে আমরা সর্বোচ্চ ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়েছি।
রাত পৌনে ৮ টার দিকে হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যার এস এম রাশেদুল আলম জানান, এ অনাকাঙ্খিত ঘটনার সুরাহাকল্পে আমি সার্বক্ষণিক মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও থানা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছি।
খবর পেয়ে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নুরেআলম মিনা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মো. মশিউদ্দৌলা রেজাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তারা মডেল থানা পরিদর্শনে আসেন বলে জানা গেছে।