নিজস্ব প্রতিবেদক
বৈশাখের শেষ পক্ষে এসে গত কয়েকদিন ধরে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বয়ে চলেছে মৃদু থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। হাওয়ায় যেন আগুনের হল্কা বইছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বাড়তি তাপমাত্রার সাথে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় গরমের অনুভূতি ক্রমেই অসহনীয় হয়ে উঠেছে। তবে এই তীব্র তাপের মধ্যে সুখবর হলো, গতকাল রবিবার দুপুরের পর থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলের রাঙামাটি পার্বত্য জেলাসহ দেশের একাধিক জেলায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে। চলতি সপ্তাহের শেষে বৃষ্টিপাত দেশজুড়ে বিস্তার লাভ করতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রবিবার আগের দিনের তুলনায় তাপমাত্রা কিছুটা হলেও কমেছে। রাঙামাটি পার্বত্য জেলা এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এছাড়া দুপুরের পর থেকে নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৪১ দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন এখানেই দেশের চলতি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর চট্টগ্রাম শহর ও আশপাশের এলাকায় গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস। চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে ফেনীতে সবচেয়ে বেশি ৩৯ দশমিক তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রচ- তাপদাহে বিপর্যস্ত চট্টগ্রামসহ সারা দেশ। তীব্র গরমে পুড়ছে জনজীবন। আর্দ্রতা বেশি থাকায় এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে দেশজুড়ে। অন্তত ৬০ জেলায় বইছে মৃদু থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। পরপর দুই দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পাশাপাশি গত তিন দিনে কমবেশি পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় প্রচন্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে মানুষ ও প্রাণীক‚ল। প্রতিদিনই বাড়ছে তাপমাত্রা। বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকায় ভ্যাপসা গরমে শরীরে হরদম ঘাম ঝরছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সারা দেশকে বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে হবে পুরো সপ্তাহ। চট্টগ্রাম নগরীতে অঙ্কের হিসাবে তাপমাত্রা তুলনামূলক কম হলেও গরম অনুভূত হচ্ছে অনেক বেশি। বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন অঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা থাকবে আরও দুয়েকদিন।
তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯.৯ ডিগ্রি হলে সেটাকে মাঝারি তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি তীব্র তাপপ্রবাহ ধরা হয়। সে হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থানে এখন মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে। গত তিনদিন থেকেই দেশে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। কোথাও মাঝারি, কোথাও মৃদু আবার কোথাও কোথাও তাপপ্রবাহ তীব্র আকার ধারণ করছে। আশার খবর হলো আজ সোমবার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহীনুর ইসলাম বলেন, তাপপ্রবাহ ১২ মে থেকে কিছুটা প্রশমিত হতে পারে। এরপর বৃষ্টির ধারা আস্তে আস্তে বাড়বে। এটা যখন পূর্ণ মাত্রায় যাবে তখন তাপপ্রবাহ ধীরে ধীরে কমে আসবে। ১৬ থেকে ১৮ মের মধ্যে তাপপ্রবাহ মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। পর্যাপ্ত পরিবেশ তৈরি না হলে বৃষ্টি হবে না। মার্চ, এপ্রিল, মে এই সময় যে বৃষ্টিটা হয় তা কালবৈশাখী ঝড় থেকে হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বুলেটিনে বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বাংলাদেশের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চল হয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। সারাদেশে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। রাজশাহী ও চুয়াডাঙ্গা জেলাসমূহের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগসহ রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম ও মৌলভীবাজার জেলাসমূহের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে আজ সোমবারের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা এক থেকে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে। তাপপ্রবাহ কিছু কিছু জায়গায় প্রশমিত হতে পারে। আগামীকাল মঙ্গলবার সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আগামী বুধবার ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।