সীতাকুন্ড প্রতিনিধি
সীতাকুন্ডের ঐতিহ্যবাহী হযরত খাজা কালুশাহ্ (রহঃ) মাজার শরীফ, মসজিদ-মাদ্রাসায় সন্ত্রাসী হামলা, দানবাক্স ভাংচুর ও এতিমখানার মালামাল লুটকারী খন্দকার শওকত আলী, খন্দকার মোহাম্মদ আলী ও মোহাম্মদ মিনহাজ গংদের বিচার ও শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে হযরত খাজা কালুশাহ্ (রহঃ) মসজিদ, মাজার শরীফ ওয়াকফ এস্টেট ও এলাকাবাসী।
গতকাল রবিবার সকাল ১১ টায় উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের কালুশাহ্ নগরের উত্তর সলিমপুরস্থ হযরত খাজা কালুশাহ্ (রহঃ) মাজার প্রাঙ্গণে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ দাবি করেন হযরত খাজা কালুশাহ্ (রহঃ) কমপ্লেক্স পরিচালনা কমিটির মোতাওয়াল্লি সিরাজ-উদ-দ্দৌলা সওদাগর।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, হযরত খাজা কালুশাহ্ (রহঃ) মাজার শরীফ সুষ্ঠভাবে পরিচালনার জন্য স্থানীয় জনগণ একটি সংবিধান তথা গঠনতন্ত্র প্রস্তুত করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে পদাধিকার বলে সভাপতি অন্তর্ভুক্ত করে মনোনয়নের মাধ্যমে কার্যকরী কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসন কর্তৃক অনুমোদনপ্রাপ্ত হয়ে মাজার শরীফসহ কমপ্লেক্স পরিচালনা করছেন। যা প্রতি দুই বছর অন্তর নিয়মিতভাবে ওয়াকফ অফিস হতে অনুমোদনপ্রাপ্ত হয়ে আসছে। কার্যকরী কমিটির সততা, দক্ষতা ও ন্যায় নিষ্ঠতার ফলে বর্তমানে হযরত খাজা কালুশাহ্ (রহঃ) মসজিদ, মাজার ওয়াকফ এস্টেট (ইসি নং ১৭৭৪৩) অধীন নিম্ন বর্ণিত প্রতিষ্ঠানগুলি পরিচালিত হয়ে আসছে। হযরত খাজা কালুশাহ্ (রহঃ) জামে মসজিদ, হযরত খাজা কালুশাহ্ (রহঃ) সুন্নিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা, হযরত খাজা কালুশাহ্ (রহঃ) লিল্লাহ বোর্ডিং ও এতিমখানা, হযরত খাজা কালুশাহ্ (রহঃ) হেফজখানা, হযরত খাজা কালুশাহ্ (রহঃ) দাতব্য চিকিৎসালয়, হযরত খাজা কালুশাহ্ (রহঃ) বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, হযরত খাজা কালুশাহ্ (রহঃ) ফোরকানিয়া মাদ্রাসা ও হযরত খাজা কালুশাহ্ (রহঃ) নুরানী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এই প্রতিষ্ঠান ছাড়াও কমপ্লেক্স থেকে উপজেলার কয়েকটি মসজিদেও অনুদান দিয়ে থাকে।
তিনি আরও বলেন, মাজার কমিটির সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে এবং মাজার শরীফের নজরানার প্রতি লোভের বশবর্তী হয়ে কথিত স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি তাদের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থে খন্দকার সিরাজ-উদ-দ্দৌলা এবং খন্দকার লুৎফুল কবিরকে দাঁড় করিয়ে হযরত ‘কালুশাহ্’ নাম বিকৃতি করে “কালু ফকির” উল্লেখ্য তার ওয়ারিশ সেজে একটি ভূয়া ওয়াকফ এস্টেট কমিটি গঠন করে।
কিন্তু মরহুম আব্দুল কুদ্দুস গত ২৫ অক্টোবর ১৯৯৪ ওয়াকফ স্মারক নং-১৭৯৮ চট্টগ্রাম মূলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সভাপতিসহ ১৩ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা কমিটি যা হযরত খাজা কালুশাহ্ (রহঃ) মসজিদ, মাজার ওয়াকফ এস্টেট নামে যার ইসি নং-১৭৭৪৩ অনুমোদন লাভ করে। এরপর গত ১ নভেম্বর ২০০৭ সালের ওয়াকফ আদেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতিসহ ১৯ সদস্য বিশিষ্ট অনুমোদিত কমিটি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে পদাধিকার বলে সভাপতি রেখে বিগত ২০২১ সালের ১৩ জানুয়ারি ৩৯ জন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসন হতে অনুমোদন প্রদান করে। বর্তমানে ঐ কমিটির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানসমূহ পরিচালিত হয়ে আসছে।
গত ৭ এপ্রিল তারিখে আনুমানিক দুপুর আড়াইটায় কথিত মোতাওয়াল্লি দাবিদার খন্দকার শওকত আলী গং চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাং নিয়ে অস্ত্রশস্ত্র সহকারে মাজার, মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হুমকি ধমকি দিয়ে জোরপূর্বক অফিস থেকে বের করে দিয়ে অফিস ও দান বাক্স ভাংচুর চালায়। এতে মাজার মসজিদ ও এতিমখানার চলমান খরচের জন্য সংরক্ষিত টাকা-পয়সা ও দান বাক্সে দানকৃত অর্থ তার সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা লুটপাট করে। শুধু তাই নয়, কথিত সন্ত্রাসীরা গডফাদার খন্দকার শওকত আলী ও খন্দকার মোহাম্মদ আলী গং গত ৫ এপ্রিল হতে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত দীর্ঘ এক সপ্তাহে মাজার, মসজিদ ও এতিমখানার দানকৃত অর্থ, গরু, ছাগল ও মুরগি পর্যন্ত আত্মসাৎ করে। দীর্ঘ এক সপ্তাহে দানকৃত অর্থ আত্মসাৎ করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের খাবার ও দৈনিক হাজিরা অনুসারে আত্মসাৎকৃত অর্থ ব্যয় করেছে। যা আমাদের কমপ্লেক্সের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে সংরক্ষিত আছে। দীর্ঘ এক সপ্তাহে মাজারে আগত ভক্ত কালুশাহ্ নগর এলাকার বাসিন্দাদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও হেনস্তা করেছে। শুধু তাই নয় খন্দকার শওকত আলী তার কিশোর গ্যাং সদস্যদের নিয়ে ছেলে মিনহাজকে দিয়ে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা মাজার কমপ্লেক্সের অফিস ও মাদ্রাসার দ্বিতীয় তলার সেমিনার কক্ষ দখল করে পবিত্র স্থানে ইয়াবা-গাঁজাসহ মাদক সেবনের আসর বসাতো। এতে তাদের আরো সহযোগিরা অংশগ্রহণ করত। ফলে কালুশাহ্ নগর এলাকাবাসী, মুসল্লিবৃন্দ, আগত আশেক-ভক্তবৃন্দ তীব্র নিন্দা ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানান। এরপর স্থানীয়রা খন্দকার শওকত আলী গংদের সন্ত্রাসী আক্রমণে অতিষ্ঠ হয়ে এর প্রতিকার চেয়ে সীতাকুÐ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতা কামনা করে। পরে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় হযরত খাজা কালুশাহ্ (রহঃ) কমপ্লেক্স দখলদার খন্দকার শওকত আলী ও খন্দকার মোহাম্মদ আলী গংদের থেকে উদ্ধার করে কমপ্লেক্সের মোতাওয়াল্লি সিরাজ-উদ-দৌলা সওদাগরকে পূর্বের ন্যায় যথারীতি দায়িত্ব পালনের জন্য অনুরোধ জানান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- হযরত খাজা কালুশাহ্ রহঃ কমপ্লেক্স পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি আবু ছালেহ, ৫নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সেলিম আকবর, সলিমপুর বিএনপি সাবেক সভাপতি আবুল হাশেম, সলিমপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-আহবায়ক মোঃ আব্দুর রহিম, সীতাকুÐ তাঁতী দল নেতা শাহিদুর রহমান, হযরত খাজা কালুশাহ্ রহঃ সুন্নিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবুল কালামসহ শত শত কালুশাহ (রাঃ)ভক্ত ও অনুরাগীরা।