কোটা সংস্কার সমন্বয়কারী সারজিদ আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহকে ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। সারাদেশে ৯ হাজারের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সরকারের নানামুখী ষড়যন্ত্র, অপকৌশল ও নিপীড়ন-নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। খবর বাংলানিউজের।
গতকাল রোববার এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে নিয়ে সরকার ত্রিমুখী নীতি অবলম্বন করছে, একদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে নিরীহ ছাত্র-ছাত্রী এবং কোটা সংস্কারের নেতাদের নির্যাতন করা হবে না, অপরদিকে প্রতিনিয়ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার অব্যাহত রাখা হয়েছে। সাধারণ মানুষ, প্রতিবন্ধী শিশু এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার এমনকি চাকরিজীবীরা পর্যন্ত এ ধরনের অমানবিক কর্মকান্ড থেকে রেহাই পাচ্ছে না।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্রতিনিয়ত গ্রেপ্তার ও নির্যাতন চালাচ্ছে অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সারাদেশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যারা প্রকাশ্যে সাধারণ ছাত্রদের বুকে গুলি চালিয়ে হত্যা করল তাদের একজনকেও গ্রেপ্তার করা হয়নি, উল্টো তাদের নিয়ে সরকার প্রধান মায়া কান্না করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ফখরুল বলেন, সারাদেশে ৯ হাজারের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, গ্রেপ্তার সাবেক এমপি, মন্ত্রীসহ বিএনপির সিনিয়র নেতারা অসুস্থ হওয়া সত্বেও তাদের নিষিদ্ধ সন্ত্রাসীদের মতো ৫ দিন/ ৭ দিন করে রিমান্ডে নির্যাতন করা হচ্ছে। সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাইফুল আলম নীরব, আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনুসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার এবং রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে। তাদেরকে নির্মমভাবে চোখ ও হাত-পা বেঁধে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায়ের নিরন্তর চেষ্টা চলছে। তারা আদালতকে অবহিত করেছে, তার পরেও আদালত সরকার প্রধানের ইশারায় তাদের রিমান্ড অব্যাহত রেখেছে। তাদের শারীরিক সুস্থতা নিয়ে দেশবাসী শঙ্কিত, তাদের ওপর চলমান নির্যাতনে অনাকাক্সিক্ষত কিছু হয়ে গেলে এর দায় সরকার এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেই নিতে হবে। জেলখানার ভেতরেও নেতাকর্মীকে নির্মম নির্যাতনের মধ্যে রাখা হয়েছে যা অত্যন্ত অমানবিক এবং আইনের পরিপন্থি। পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন মানবতাবিরোধী অপরাধ।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশটাকে আজকে ত্রাসের রাজ্যে পরিণত করেছে। দিন দিন নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীদেরকে হত্যার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে সরকার যতই ছলচাতুরি করুক না কেন গণদাবির কাছে পদত্যাগ করতেই হবে। মানুষ যখন প্রতিবাদ শুরু করেছে এ প্রতিবাদের ধারা অব্যাহত থাকবে। সরকার এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছে যে, গুলি করে মানুষকে হত্যা করা হয়নি অথচ শিশু আহাদ, সামীর থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পথচারী সবাই গুলিতে নিহত হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে এরই মধ্যে আমরা জানতে পেরেছি হত্যার সংখ্যা অনেক লম্বা হবে। সরকারের পক্ষ থেকে দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি স্থাপনাগুলোর বর্ণনা দেওয়া হলেও কোটাবিরোধী আন্দোলনে মৃত্যুর তালিকা এখন পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি। মৃতুকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে না। তাছাড়া সারাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এবং সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার বাণিজ্য অব্যাহত রাখা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বিবৃতিতে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার বিএনপি ও বিরোধী দলের সব নেতা এবং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, রিমান্ডে নির্যাতন বন্ধ এবং অবিলম্বে সবার নিঃশর্ত মুক্তির জোর আহবান জানান।
জাতীয়তাবাদী কৃষকদলেরসহ-সাধারণ সম্পাদক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট (অব.) ড. হারুনুর রশিদ ভুইয়াকে জনসমক্ষে হাজির করারও আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি সিরাজগঞ্জ পৌরসভার ১০ নং ধানবান্ধি ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য সঞ্জিব ভুইয়ার আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং পরিবারবর্গের প্রতি সহানুভূতি জানান। সরকার নিজের ক্ষমতায় টিকে থাকার লক্ষে সারাদেশে যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে এবং হত্যা, নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে তা অবিলম্বে বন্ধ করে পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় দেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলবে।